ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ফিচার গরু পালনের মধ্য দিয়ে রিপন গমেজের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

গরু পালনের মধ্য দিয়ে রিপন গমেজের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

0
1669

সুমন কোড়াইয়া

রিপন মথি গমেজ। বয়স ৩৬। তিনি গাজীপুরের কালীগঞ্জের পিপ্রাশৈর গ্রামের রিচার্ড গমেজ ও মায়া গমেজের সন্তান। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে রোদেলা এগ্রো নামে একটি ব্যবসা শুরু করেন নিজ গ্রামের বাড়িতে। এখানে গরু মোটা-তাজাকরণ ও দুগ্ধ উৎপান করা হয়।

ব্যবসার শুরুর বিষয়ে রিপন সমবার্তাকে বলেন, ‘আমার এক বন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার। তিনি পাঁচ বছর চাকরির পর তা ছেড়ে দিয়ে মেঘ ডুবি এগ্রো ব্যবসার শুরু করেন। চার বছরের মধ্যে বন্ধুটি ১৭৩টি শাখা করে। তাঁর ষাড় গরুর সংখ্যা আছে ২৮ হাজারের বেশি এবং গাভীও আছে অনেক। তবে তিনি শুধু গাভী পালন শুরু করেন। আমিও সেই বন্ধুর সাথে আমার টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে।’

পরে রিপন চিন্তা করেন তিনি নিজেই উদ্যোক্তা হবেন। তিনি বন্ধুর ব্যবসার থেকে নিজের পাওনা নিয়ে নিজেই শুরু করেন।
এগ্রো ব্যবসাটা তিনি শুরুর আগে সাভারের মিলিটারি ডেইরী ফার্ম থেকে এক সপ্তাহের একটা কোর্স করেন। এ ছাড়া ঘুরেছেন অনেক এগ্রো ফার্ম। এরপর নিজের স্ত্রী, বাবা-মা ও ভাইবোনের সহযোগিতায় ব্যবসা শুরু করেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী রিপন স্কয়ার হাসপাতালে বার বছর ধরে ফ্যাইন্যান্স বিভাগে চাকরি করছেন। তিনি বলেন, ‘চাকরির পাশাপাশি আমি ব্যবসা করতে পারছি, কারণ আমার বাড়ির মানুষ ও পাড়াপ্রতিবেশীরা আমাকে সাহায্য করেছেন।’

বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানে তিনজন চাকরি করছেন। এ ছাড়া মাসের পনেরদিন তিনজন করে শ্রমিক তাঁর এগ্রো ফার্মে কাজ করেন।

ব্যবসা শুরু করার বিষয়ে রিপন বলেন, ‘চাকরি করাটাকে আমি আরামদায়ক মনে করি না। এখন যুব বয়সে আমার সেরা সময়টা কেম্পানিকে দিচ্ছি। কিন্তু একটা সময় আসবে যখন আমার বয়স হয়ে যাবে। তখন তারা এই বয়সটাকে মূল্যায়ন করবে না। কাজটাকে মূল্যায়ন করবে। তখন আমি কোম্পানীর কাছে বোঝা হিসেবে পরিগণিত হতে পারি। সেই বেদনা থেকে রেহাই পেতে আমি চাকরি থাকাবস্থায়ই ব্যবসা শুরু করেছি যেন চাকরি থাকাবস্থায় আমার ব্যবসাটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে আমি চেয়েছি কিছু মানুষকে কর্মসংস্থান দিতে এবং খাঁটি দুধ উৎপাদন করতে। অন্যদিকে, আমি তিন বছর ধরে গরুর মাংস উৎপাদন করছি। যাদের নিকট গরু বিক্রি করি তাঁরা গরু কিনে সন্তুষ্ট। ফলে একটি ক্রেতার নিকট আমি পুনরায় গরু বিক্রি করতে পারছি। উদ্দেশ্য একটাই জনগণকে একটা নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করা।’

তিনি জানান, তিনি শুরুতে পাঁচটি গাভী গরু কিনে তাঁর ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর এগ্রো ফার্মে ষাঁড় গরু আছে ২২টি। গাভী আছে ১৩টি। ১০টি গরু কিনেছেন মোটাতাজা করার জন্য। বাকি তিনটি গাভী থেকে তিনি বাছুর পেয়েছেন।

তিনি ঢাকা ক্রেডিট থেকে প্রথম দশ লাখ, এরপর ত্রিশ লাখ এবং সর্বশেষ পঁয়তাল্লিশ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন।তিনি বলেন, ‘আমি এই ব্যবসার টাকা দিয়ে দেড় বিঘা জমি কিনেছি। ঢাকা ক্রেডিটের ঋণের কিস্তি সহজে চালাতে পারছি। আমার পরিবারের সদস্যরা ভালোভাবে জীব- যাপন করতে পারছি।’

বর্তমানে আটটি গাভী দুধ দেয়। সকাল বিকাল তিনি ১১৫ কেজি দুধ দোহন করেন। সকালে যে দুধ দোহন করা হয় তা গ্রামে বিক্রি করেন এবং বিকালে দোহন করা দুধ তিনি ঢাকার নদ্দা এলাকায় বিক্রি করেন। এ ছাড়া দুধ বিক্রির পাশাপাশি তিনি ঘি ও গোবরও বিক্রি করে আয় করছেন।

তিনি জানান, তাঁর শুরুর মূলধন ছিলো দুই লাখ টাকা। যা তিনি নিয়েছিলেন তুমিলিয়া খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: থেকে। এরপর তিনি ঢাকা ক্রেডিট থেকে প্রথম দশ লাখ, এরপর ত্রিশ লাখ এবং সর্বশেষ পঁয়তাল্লিশ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন।তিনি বলেন, ‘আমি এই ব্যবসার টাকা দিয়ে দেড় বিঘা জমি কিনেছি। ঢাকা ক্রেডিটের ঋণের কিস্তি সহজে চালাতে পারছি। আমার পরিবারের সদস্যরা ভালোভাবে জীব- যাপন করতে পারছি।’

তিনি বলেন, খামার করতে গিয়ে তাঁর প্রয়োজন পড়েছে ১৬ বিঘা জমি। তিনি এই জমি অন্য মানুষের নিকট থেকে লিজ নিয়েছেন।

তাঁর ব্যবসার চ্যালেঞ্জ সম্বন্ধে বলেন, দুধের ন্যায্য মূল্য পাওয়া, গরু চুরি হওয়া সম্ভাবনা। তিনি বলেন, ‘সব সময় চিন্তা থাকে গরু চুরি হয় কিনা। এ ছাড়া গরু পালন করতে গিয়ে আমার একটা গরু মারা গেছে।’

তিনি মনে করেন, গরুকে যদি সঠিকভাবে পরিচর্যা করা যায়, তাহলে গরু মারা যাবে না এবং গরুর বৃদ্ধিও ভালো হবে। যিনি গরু পালন করবেন, তাঁকে রাখাল হতে হবে। সেই মনোভাব নিয়ে গরু পালন করলেই তিনি গরু পালনে সফল হবেন।

গরু পালনের সময় গরুগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রতিটির রেজিস্টার রাখতে হবে, তার ওজন ও উচ্চতা কত তা পরিমাপ করতে হবে। আধুনিক প্রযুুক্তিতে গরু পালন করতে হবে। এ দেশে গরুর দুধ ও মাংসের চাহিদা রয়েছে। তাই এগ্রো ব্যবসার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি মনে করেন, যারা নতুন উদ্যোক্তা, তাদেরকে সমবায় সমিতিগুলো কার্যকরভাবে ঋণ দিয়ে সাহায্য করছেন। চলতি ব্যবসা না থাকলে ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয় না, কিন্তু সমিতিগুলো দেয়। তাই সহজে যারা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সমবায় সমিতিগুলোর সুযোগ গ্রহণ করলে ভালো আয় করা এবং জীবনে সফল হওয়া সম্ভব।

ঢাকা ক্রেডিটের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রিপন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট আমার ব্যবসায় এগিয়ে যেতে অপরিসীম সাহায্য করেছে যা বলে শেষ করা যাবে না। এই সমিতি থেকে আমি সহজ শর্তে যতবার প্রয়োজন ততবারই ঋণ পেয়েছি। বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছি।

রিপন মনে করেন যারা এই ব্যবসা করতে চায়, তারা করতে পারে। বর্তমান সময়ে অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি এই ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। নাছির গ্রুপ, স্কয়ারসহ বড় বড় এগ্রো ব্যবসা রয়েছে। এই ব্যবসা করে খুব ভালোভাবে চলা যাবে।