শিরোনাম :
গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সক্রিয় অংশগ্রহণে শেষ হলো ঢাকা ক্রেডিটের বার্ষিক সাধারণ সভা-২০১৮
প্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সার্বিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শেষ হলো ঢাকা ক্রেডিটের বার্ষিক সাধারণ সভা-২০১৮।
১৬ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ঢাকা ক্রেডিটের প্রধান কার্যালয়ের বিকে গুড কনফারেন্স হলে এই বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খ্রীস্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিউবার্ট গমেজ, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং।
আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ, ট্রেজারার বিপুল লরেন্স গমেজ, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই. কোড়াইয়াসহ ঢাকা ক্রেডিটের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং প্রতিনিধিরা।
বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট ৬৩ বছর পেরিয়ে ৬৪ বছরে পদার্পন করেছে। প্রতিদিনই আমরা একটু একটু করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘লক্ষ্যে অটুট ও অবিচল থেকে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছি কাঙ্খিত গন্তব্যের দিকে। বড় করে গর্ব করার মতো আমাদের অনেক সফলতা ও উন্নয়নের গল্প আছে। আজ সমাজের প্রতিটি স্তরেই ঢাকা ক্রেডিটের মিলন, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য, সহভাগিতা ও ভালবাসার বার্তা পৌঁছে গেছে, সমাজ হচ্ছে আলোকিত। ঢাকা ক্রেডিট এখন মানুষের শেষ আশা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।’
‘আপনারা বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটিকে এ যাবৎ অকুন্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। আজ আপনাদের ধন্যবাদ জানাই এবং আশা করি আপনাদের এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আপনাদের সরব-প্রাণবন্ত উপস্থিতি, অংশগ্রহণ ও চমকপ্রদ সব মতামত সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ গড়ার কাজে আমাদের সহায়তা ও অনুপ্রেরণা জোগাবে’ বলেন প্রেসিডেন্ট গমেজ।
এ সময় তিনি ঢাকা ক্রেডিটের বিভিন্ন প্রকল্প ও প্রডাক্ট নিয়ে আলোচনা করেন।
বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গমেজ বলেন, ‘আমরা উন্নতির শিখরে আরোহন করেছি। সত্যিকার অর্থে আমাদের সকল কার্যক্রমই সুন্দর এবং সমাজের জন্য প্রয়োজন। ঢাকা ক্রেডিটের যে সকল মেগা প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে মানুষের মাঝে উৎসাহ আরো বাড়বে, মানুষের জীবনমানও সমৃদ্ধ হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জনগণের অর্থ দিয়েই ক্রেডিট পরিচালিত হচ্ছে। আশা করি সমবায়ী মনোভাব থাকলে আরো বেশি উন্নয়ন হবে। একদিন আমরা বাংলাদেশে শ্রেষ্ঠ সমবায়ী হব’।
সভায় বাংলাদেশ খ্রীস্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও সমিতির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও বলেন, ‘আমরা প্রতিনিধির মাধ্যমে বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন চাই না। আমরা এবং বোর্ড সকলেই চাই সাধারণ সদস্যর অংগ্রহণে নির্বাচন ও বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হোক। দুঃখের বিষয় হলো, কিছু মানুষের ষড়যন্ত্রের কারণে আজ প্রতিনিধির মাধ্যমে বার্ষিক সাধারণ সভা করতে হচ্ছে।’
‘বর্তমান বোর্ড অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন মেগা প্রকল্প নিয়ে তারা কাজ করছে। আপনাদের সমর্থন এবং সহযোগিতা থাকলে সকল প্রকল্প সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত হবে,’ বলেন নির্মল রোজারিও।
তিনি আরো বলেন, ‘বার্ষিক সাধারণ সভায় যেহেতু সদস্যরা অংশ নিতে পারেনি, তাই বর্তমান বোর্ড তার বিকল্প হিসেবে মিলনমেলার আয়োজন করবে। যতদিন এই প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন ও বার্ষিক সাধারণ সভা থাকবে, ততোদিন এই বোর্ড সদস্যদের জন্য বিকল্প অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। আমরা প্রার্থনা করি, যে ভাইয়েরা বিভ্রান্ত হয়ে সমিতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, তারা যেন মন পরিবর্তন করে।’
উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট আমাদের খ্রিষ্টান সমাজ বদলে দিয়েছে, ধারণা ও চিন্তা বদলে দিয়েছে। খ্রিষ্টান সমাজকে প্রসারিত করেছে। ঢাকা ক্রেডিট নিয়ে আমাদের অনেক আবেগ। তবে নিজেদের মূল্যবোধ এবং প্রতিষ্ঠান হারিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে লাভ নেই। আমরা যেন বাইরের সমাজের জন্য খ্রিষ্টীয় মূল্যবোধ বহন করতে পারি। কিছু সদস্য ভুল করেছে। বোর্ড তাদের এখনো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখছে। আমিও ক্ষমা দেওয়ার পক্ষে, তবে তারা যদি অনুশোচনা করে আসে, তবেই ক্ষমা দেওয়া যেতে পারে।’
এ সময় প্রতিনিধিরা ঢাকা ক্রেডিটের অগ্রযাত্রা এবং উন্নয়নের ভূয়শী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, এই বোর্ড এ পর্যন্ত যত কার্যক্রম করেছে, তা সমাজের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এবং প্রশংসার দাবিদার। তবে একটি দাবি এই বোর্ডের কাছে থাকবে, যারা এই সমিতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক।
যে সকল কর্মকর্তাও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের ছবিগুলোও সমিতির দেওয়াল থেকে বহিষ্কার করা দাবি জানান প্রতিনিধিরা।
এর উত্তরে প্রেসিডেন্ট গমেজ বলেন, ‘যারা ষড়যন্ত্র ও সমিতির ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, তারাও আমাদের অংশ ছিল। আমরা চাই না তারা আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাক। তারা যদি অনুশোচনার মাধ্যমে মন পরিবর্তন করে ফিরে আসে, আমরা তাদের সাদরে গ্রহণ করবো। আমরা চাই না, কেউ মহৎ উদ্দেশ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাক।’
বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রতিনিধিরা সমিতির বিভিন্ন কার্যক্রম, প্রকল্প, প্রডাক্ট এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন।
সভার শুরুতে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে পতাকা উত্তোলন, প্রারম্ভিক প্রার্থনা ও বাইবেল পাঠের মধ্য দিয়ে বার্ষিক সাধারণ সভা শুরু হয়।
এর পর মৃত সদস্যদের আত্মার কল্যাণে প্রার্থনা ও নিরবতা, অতিথিদের ফুলের শ্রদ্ধা প্রদান, সাধারণ সভার সভাপতির স্বাগত ভাষণ, ৫৭তম বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন, ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক বার্ষিক কার্যক্রম প্রতিবেদন পেশ ও অনুমোদন, ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ প্রসঙ্গ, বার্ষিক হিসাব বিবরণী পেশ ও অনুমোদন, নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদন, প্রস্তাবিত আয় বন্টন হিসাব উপস্থাপন ও লভ্যাংশ ঘোষণা, প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা ও অনুমোদন, ক্রেডিট কমিটির প্রতিবেদন পেশ ও অনুমোদন, সুপারভাইজরি কমিটির প্রতিবেদন পেশ ও অনুমোদন, উপ-বিধি সংশোধনী পেশ ও অনুমোদন, নতুন প্রস্তাবনা পেশ ও অনুমোদনসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
সাধারণ সভায় ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে প্রেসিডেন্ট গমেজ বিশদ আলোচনা করেন। প্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা রাখেন এবং অবশ্যই যেন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় তার জন্য জোর সমর্থন জানান। এ ছাড়া ড্রাইভিং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্যদের গাড়ি-ক্রয় ঋণ প্রকল্প চালুকরণ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করার জন্য নতুন প্রস্তাবনা গৃহীত হয়। পাঁচ হাজার টাকার হাসপাতাল বন্ড বিক্রয়ের বিষয়েও বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রস্তাব গৃহীত হয়।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে সদস্যদের জন্য ৬.২৫% হারে অন্তরবর্তীকালীন লভ্যাংশ এবং দশমিক ২৫% (.২৫%) ডিভিডেন্ট প্রদান, উক্ত অর্থবছরে নিয়মিত কিস্তি প্রদানকারী সদস্যের প্রদত্ত সুদের উপর ১০% হারে রিবেট প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সমিতির সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তার সঞ্চালনায় উক্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে সমিতির ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ সভায় অংশগ্রহণকারী এবং সভায় সহযোগী সবাইকে ধন্যবাদন ও কৃতজ্ঞতা জানান।
সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য পাস্টর অবিনাশ নকরেকের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সভা শুরু এবং উক্ত কমিটির সদস্য পাপড়ি আরেং-এর প্রার্থনার মাধ্যমে বার্ষিক সাধারণ সভা সমাপ্ত হয়।
সভা শেষে উপস্থিতদের মধ্যে আকর্ষণীয় লটারি ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
ডিসিনিউজ/আরবি.এসজি.১৬ নভেম্বর ২০১৮