ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার চতুর্থ বার্ষিকী আজ

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার চতুর্থ বার্ষিকী আজ

0
573

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ধর্মীয় ওয়েবসাইটগুলোতে মানুষের বাড়তি মনোযোগের সুযোগে জঙ্গিরা ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনার চার বছর পর ১ জুলাই সকালে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সামনে তিনি একথা বলেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, মহামারীর মধ্যে বাসায় বসে মানুষ ধর্মীয় সাইটগুলো বেশি দেখছে। আর এই সুযোগে জঙ্গিরা তাদের ব্যাপক প্রচারণা চলাচ্ছে।

“তারা একাকি বা ‘লোন উলফ’ হামলার বিষয়ে উদ্ধুদ্ধ করছে। প্রয়োজনে হাতুড়ি নিয়ে হলেও পুলিশের উপর হামলার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে।”

তাদের হামলা পরিচালনার সক্ষমতা তলানিতে নেমে এসেছে দাবি করেন ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, ঘটনার পর পুলিশের নিরাপত্তা ঢেলে সাজানোর পাশপাশি জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়েও ধারণা পাওয়া গেছে।

“তাদের যে কার্যকলাপ ছিল তা একের পর এক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের সক্ষমতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে।”

নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জঙ্গি দমনে সফলতা ধরে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

র্যাব মহাপরিচাক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ডের কারণে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের যে সক্ষমতা ছিল তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

র্যাব এবং পুলিশের দুই কর্তাই দাবি করেন, জঙ্গিদের আর সেভাবে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ নেই। তাদের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক ‘মনিটরিং’ করা হচ্ছে।

এদিকে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ও লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞের তদন্ত শেষে গত বছরের নভেম্বরে সাত জঙ্গির ফাঁসি ও একজনকে খালাসের রায় দেন আদালত। গুলশানের ওই রেস্টুরেন্টে হামলার মাধ্যমে শক্তি জানান দেওয়া নব্য জেএমবিকে মামলার তদন্ত চলাকালীন একের পর এক অভিযানে কোণঠাসা করে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হলি আর্টিজান হামলার পরই ব্যাপকভাবে জঙ্গিবিরোধী অভিযান এবং প্রচারণায় অনেক সাফল্য আসে। সেই নারকীয় হামলার চার বছর পূর্ণ হচ্ছে ১ জুলাই। তবে দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে উৎকণ্ঠা থেকেই গেছে। এখনো অনলাইনে সদস্য সংগ্রহ করা, আদর্শ প্রচার এবং নাশকতার পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গিরা।

তদন্ত ও নজরদারি কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, নব্য জেএমবির শক্তিশালী নেতৃত্ব কাঠামো না থাকলেও মতাদর্শী কতিপয় মানুষ আছে। তাদের অনলাইনে একাকী হামলা বা ‘লোন উলফ’ ধরনের হামলায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। অনলাইনে বেশি সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম (আগের নাম এবিটি)। পলাতক শীর্ষ নেতা মেজর (বরখাস্ত) জিয়াউল হকের নির্দেশনায় সদস্য সংগ্রহ ও কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে জঙ্গিরা। অনলাইনে উগ্র মতাদর্শীদের দলে ভেড়ানোর পাশাপাশি নব্য জেএমবি ও পুরনো জেএমবির জঙ্গিদের সঙ্গে সমন্বয় করে শক্তি বাড়াতে চাইছে সংগঠনটি। তবে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ও র্যাবের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের ওপর তাঁদের কড়া নজরদারি রয়েছে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে পাঁচ জঙ্গি গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে গুলি করে ও কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরদিন সকালে প্যারা কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। জঙ্গি হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিশের এএসপি রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন আহম্মেদ নিহত হন। ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই মামলার চার্জশিট দাখিল করে সিটিটিসি। দেশে জঙ্গি তৎপরতা আছে জানান দিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই গুলশানে হামলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। গত বছরের ২৭ নভেম্বর দেওয়া রায়ে সাত জঙ্গির ফাঁসি ও একজনকে খালাস দেওয়া হয়। এই মামলার পেপারবুক তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

এদিকে হলি আর্টিজান হামলা সূত্রে নব্য জেএমবির বড় নাশকতার পরিকল্পনা সামনে আসে। এরপর ২০১৬ সালে ৯টি অভিযানে ৫৫ জন এবং ২০১৭ সালে ১৮টি অভিযানে ৩৮ জঙ্গি নিহত হয়। দেশব্যাপী ধারাবাহিক অভিযানে হলি আর্টিজানে জড়িত তামিম আহমেদ চৌধুরী, সারোয়ার জাহান মানিকসহ ১৩ শীর্ষ জঙ্গি নিহত হয়েছে। জীবিত ছয় আসামি চার্জশিটের আগে এবং দুই আসামি চার্জশিটের পরে গ্রেপ্তার হয়েছে।

সিটিটিসির উপকমিশনার (ডিসি) আব্দুল মান্নান বলেন, ‘উগ্রপন্থীরা এখন অনলাইনকেন্দ্রিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। অনলাইনে সংগঠনের জন্য সদস্য রিক্রুট করতে নানা অফার দিচ্ছে। তরুণ-যুবকদের সামনে প্রলোভনের ফাঁদ পাতছে। তবে পুলিশ অনলাইনকেন্দ্রিক জঙ্গি রিক্রুট ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ভার্চুয়াল জগতে নজর রাখছে। প্রায়ই গ্রেপ্তার হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

র্যাব সূত্র জানায়, হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে চলতি বছরের ২৯ জুন পর্যন্ত চার বছরে সারা দেশে জঙ্গিসংশ্লিষ্ট ৩৯৫টি অভিযান চালিয়ে র্যাব এক হাজার ১৬ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে। এসব অভিযানে ২৫ জঙ্গি নিহত ছাড়াও আত্মসমর্পণ করে সাতজন। সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রামের ২ নম্বর গেট মোড়ের পুলিশ বক্সে বোমা হামলায় নগর ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আরাফাতুর রহমান, সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) আতিকসহ পাঁচজন আহত হন। হামলায় নিজেদের সম্পৃক্ততার দাবি করে পরদিন কথিত বার্তা দেয় ইসলামিক স্টেট (আইএস)। গত মে মাসে চট্টগ্রামে জঙ্গি হামলায় জড়িত তিন নব্য জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।

২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পুলিশ বক্সের সামনে একই ধরনের হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে এক মন্ত্রীর প্রটোকল সদস্যসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। গত বছরের ২৪ জুলাই খামারবাড়ী ও পল্টনে; ২৬ মে রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের বিশেষ শাখার একটি পিকআপ ভ্যানে এবং ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে ট্রাফিক বক্সের পাশে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলেন, নব্য জেএমবির মতাদর্শীরা ছোট ছোট দলে একাকী হামলা চালাচ্ছে। এরা অনলাইনে যোগাযোগ করছে। (বিডিনিউজ২৪, কালের কন্ঠ)