শিরোনাম :
গৃহবধূ জেনিফার মনিকা গমেজ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন কেওয়া দক্ষিণখন্ড গ্রামে গৃহবধু জেনিফার মনিকা গমেজ-এর নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন নাগরী-কালীগঞ্জ শাখার উদ্যোগে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
আজ (১৫ এপ্রিল) সকাল ১১টায় বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জেনিফার হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন ‘জেনিফারের নির্মম হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার এবং দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। জেনিফারের এই হত্যকান্ড বাংলাদেশের নারী নির্যাতনের চিত্র প্রকাশ করে। মে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার এবং বিচার করতে না পরলে পরবর্তীতে আরো বড় কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
এ সময় তারা জেনিফার হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং তার স্বামী হিমেল গমেজের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
প্রতিবাদ সমবাবেশে বক্তব্য রাখেন জেনিফার গমেজের মা ললিতা গমেজ, পিতা আন্তনী গমেজ, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন নাগরী-কালীগঞ্জ শাখার সভাপতি দিগন্ত রড্রিক্স, হীড বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক পাস্টর আনোয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল জন গমেজ (অব:), ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া, ঢাকা ক্রেডিটের বোর্ড অব ডিরেক্টর রতন পিটার কোড়াইয়া, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ গাজীপুর জেলার সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিকে দাস, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জোনাস গমেজ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফেড্রিক মুকুল বিশ্বাস, নির্বাহী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সুনীল গাব্রিয়েল কস্তা, নাগরী খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুমন রোজারিও, ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ারের নেতা সাগর সাংমা, গিলবার্ট গমেজ, অরুণ ডি’কস্তা, সমীরণ বাড়ৈ, বকুল রোজরিও, স্বপ্না কস্তা, শিউলী রিবেরু প্রমুখ।
মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের ট্রেজারার বিপুল লরেন্স গমেজ, সুপারভাইজরি কমিটির সেক্রেটারি মানিক লরেন্স রোজারিও, সেবাষ্টিন বাড়ৈ, যতিন মারান্ডি, মলয় নাথ, মুকুল বিশ^াসসহ আরো অনেকে।
বক্তারা প্রত্যেকেই জেনিফার হত্যার সুষ্ঠ তদন্ত ও সবোর্চ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের শ্রীপুর দক্ষিণখন্ডে ঘটনাস্থল পরিদর্শন
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও’র নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গাজীপুরের শ্রীপুরে ঘটনাস্থলে যান। সেখানকার স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, যুব সমাজ ও ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে আলাপে জেনিফারকে হত্যা করা হয়েছিল বলেই সবাই অভিমত দেন।
স্থানীয় একজন প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা বলেন, জেনিফার মৃত্যুর পর তার শরীরে আটটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে হত্যা করেই আত্মহত্যা করেছে বলে প্রমাণের জন্য ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে হত্যা করা না হলে জেনিফারের স্বামী এবং পরিবার পালিয়ে বেড়াতো না।’
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, ‘জেনিফারের শ্বশুর অতুল গমেজ ছিলেন আসলে একজন জমির দালাল। অন্যের জমি বিক্রি এবং হাতিয়ে নেওয়ার মতো নানা বিষয়ে অতুল পরিচিত ছিলেন। বিএনপি সরকারের আমলে তারেক জিয়া অনেক জমি অধিগ্রহণ করেছেন, সেই সময় অতুলও প্রভাব খাটিয়ে অনেক জমি হাতিয়ে নিয়েছেন।’
তারা জানান, অতুলের পরিবারের সাথে স্থানীয়দের তেমন কোনো সম্পর্ক ছিলো না। এলাকার মানুষ অতুলদের দ্বারা কোনো না কোনোভাবে ভুক্তভোগী। তাই তার পরিবারের সাথে কেউ তেমন মিশতো না। এমনকি জেনিফারের বিয়েতেও এলাকার তেমন কোনো মানুষ যোগ দেয়নি।
স্থানীয় চার্চের প্রতিনিধি জানান, ‘জেনিফার শ্বশুর অতুল চার্চের জমি নিয়েও গন্ডগোল করেছে। তারা চার্চে আসলেও তেমন কেউ তাদের সাথে মিশতো না। জেনিফারকে হত্যা করা হয়েছে বলেও তারা মনে করছেন।’
অন্য একজন জানান, ‘মৃত্যুর আগে জেনিফারকে একজন পল্লী চিকিৎসক স্যালাইনও দিয়েছিলেন। ঘুমের ওষুধ খাওয়া বা আত্মহত্যা করার মানুষকে কখনো স্যালানই দেওয়া হয় না।’
সরেজমিনে জেনিফার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাসায় কেউ নেই। পরিবারের সবাই পলাতক রয়েছে। যে মামির কারণে পরকীয়ার বলি জেনিফার, সেই মহিলার কোলেই জেনিফারের সাত মাসের শিশু সন্তানকে দেখা যায়। এ সময় সেই মহিলার স্বামী বাড়িতে নেই এবং কোথায় আছে তাও জানে না বলে জানান। তবে এ সময় উজ্জল মন্ডল নামে একজন যুবককে সেই মহিলার সাথে দেখা যায়।
এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ মহিলার কাছে জেনিফারের শ্বশুর পরিবারের সদস্যদের বিষয় জানতে চাইলে তিনি ‘জানি না’ বলে কৌশলে এড়িয়ে যান।
পরিদর্শনে যাওয়া ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আরো ছিলেন এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই. কোড়াইয়া, সাবেক রাষ্ট্রদূত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জন গমেজ, এসোসিয়েশনের যুগ্ম সচিব সুব্রত হাজরা, দানিয়েল শিকদারসহ আরো অনেকে।
উল্লেখ্য, পরকীয়ার জেরেই জেনিফারকে হত্যা করা হয়েছে বলে জেনিফারের পরিবার এবং স্থানীয়রা দাবি করছে। হত্যার বিভিন্ন আলামতও পুলিশ পেয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়। নিহত পরিবারের মামলায় পুলিশ নিহত গৃহবধূর শ্বাশুড়িকে গ্রেফতার করলেও স্বামীসহ পরিবারের অপর সদস্যরা পলাতক রয়েছেন।
গত ২৮ মার্চ জেনিফারের স্বামী হিমেল পরিবারের যোগসাজসে জেনিফারকে হত্যা করে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে॥