শিরোনাম :
গোবিন্দগঞ্জ আদিবাসীদের উপর হামলা, লুটপাট
মাদারপুর গ্রাম এখন পুরুষশূণ্য। যে সাঁওতাল নারীরা এখনো আছেন, তাঁরা সন্ত্রস্ত। আর্তচিৎকারে বারবার বলছেন লুটপাটের ঘটনা।
ঘরের চালের টিন, হাঁড়ি-পাতিল, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, জামাকাপড়—বাদ যায়নি কিছুই। গত রোববার সন্ধ্যায় এক দফা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জের সাঁওতাল অধ্যুষিত মাদারপুর গ্রামটি। সোমবার সকালেও চলেছে লুটপাট। সাঁওতালদের ঘরে যা ছিল সব নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
আজ সকালে সাহেবগঞ্জ আখ খামারসংলগ্ন মাদারপুর গ্রামে সাঁওতালদের পুরোনো বসতভিটায় লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সহস্রাধিক দুর্বৃত্ত ওই গ্রামে হামলা চালিয়ে সাঁওতালদের ঘরবাড়ি লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।
সাহেবগঞ্জ এলাকায় পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে রোববার সাঁওতালদের সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ সাঁওতাল শ্যামল হেমব্রম (৩৫) ওই রাতে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। তাঁর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ধনগইর গোমস্তাপুর গ্রামে। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মো. আশরাফুল হক তাঁর মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করে বলেন, নিহত শ্যামল হেমব্রমের বাঁ পাঁজরে গুলির ক্ষত রয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারের ভয়ে কোনো পুরুষ নেই। কেবল সাঁওতাল পরিবারের নারীরা আহাজারি করছেন। লুটপাটের বিষয়ে মাদারপুর গ্রামের সাঁওতাল পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্জলি মুরমু (৪৫) বলেন, ‘আজ সকালে অনেক মানুষ আমাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। তারা আমার চারটা ছাগল, ১২টা হাঁস-মুরগি নিয়ে যায়।’
গ্রামের তেরেজা মুরমু (৫৫) বলেন, ‘আমার চাল থেকে টিন খুলে নিয়ে গেছে। এ ছাড়া ঘরের জিনিসপত্র, কাপড় লুট করেছে।’
আগের দিন রোববার সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও চিনিকল কর্তৃপক্ষের লোকজন আখ খামার এলাকায় নির্মাণ করা সব কটি ঘর পুড়িয়ে দেয়।
হামলার শিকাররা বলেন ‘পুলিশের ছোড়া গুলিতে আমাদের চারজন গুলিবিদ্ধ হন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, পাঁচ থেকে ছয়জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের গুম করা হতে পারে বলে আশঙ্কা ফিলিমনের। তারা অভিযোগ করেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও সরকারদলীয় কিছু নেতা-কর্মীর ইন্ধনে সোমবার দুর্বৃত্তরা সাঁওতালদের পুরোনো বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে।
মাদারপুর গ্রাম থেকে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ আখ খামারসংলগ্ন উচ্ছেদ করা জমিতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে পুলিশি পাহারা রয়েছে। রোববার সাঁওতালদের নির্মাণ করা শত শত একচালা ঘর পুড়িয়ে ফেলার ধ্বংসস্তূপ। পোড়া ধ্বংসস্তূপের জায়গা চিনিকলের ট্রাক্টর দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল আউয়াল বলেন, ‘চিনিকলের ইন্ধনে লুটপাটের অভিযোগ সঠিক নয়। কেবল আইনি প্রক্রিয়ায় চিনিকলের জমি দখলমুক্ত করা হয়। সাঁওতালদের আদি বাড়িতে কারা লুটপাট চালিয়েছে আমরা জানি না।’
দিনাজপুরের বিশপ সেবাষ্টিয়ান টুডুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনা জানার পরই তিনি সোমবার সন্ধ্যায় হতাহতের স্থান পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, খ্রিস্টমন্ডলী সব সময় শান্তি চায়। আমি ঘটনার স্থান পরিদর্শন করে সবাইকে শান্ত থাকার জন্য আহ্বান করেছি। বিভিন্ন সংঘঠন এবং প্রতিনিধিরা এর নিন্দা জানিয়েছে, আমিও এর নিন্দা জানাই। স্থানীয় প্রশাসন আমাদের কথা দিয়েছে, গোবিন্দগঞ্জের আদিবাসীদের উপর আর হামলা হবে না।
ঘটনার স্থান পরিদশনকারী বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সহসভাপতি মাথিয়াস মারান্ডী জানান, প্রশাসন দুজনের বললেও পাশে থাকা রাখালরা বলেছে তারা তিনটি লাশ দেখতে পেয়েছে এবং পনেরশোরও বেশি ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা স্থানীয় প্রতিনিধি এবং দিনাজপুরের বিশপকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, সেখানে যে নারকীয় ধংসযজ্ঞ চলেছে, তা অমানবিক।
গোবিন্দগঞ্জ এলাকা পুরুষশূণ্য হলেও সেখানে এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা যায়। এছাড়াও প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
আরবি/আরপি
৭ নভেম্বর, ২০১৬