শিরোনাম :
গোয়েন্দা মেনু’দা
রবীন ভাবুক
গ্রীষ্মের ছুটির ঘনঘটায় ঠিক মতো বাড়ীর কাজটাও বুঝে নিতে পারলো না শুভ। কাল থেকে ২৩ দিনের লম্বা ছুটি ওর। বাবা বলেছে এবার সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাবে। উত্তেজনায় খুব সকালেই ঘুম ভেঙ্গে গেল শুভর। ঘরে কোন সাড়াশব্দ নেই। তড়াক করে বিছানায় উঠে বসে মনে মনে ভাবলো, যাহ্ দেরি হয়ে গেল! সবাই বুঝি ওকে ফেলে রেখেই চলে গেলো। বুকটা দুরুদুরু করতে লাগলো। শুভ তাড়াতাড়ি বাবা-মা’র রুমের দিকে গেলো। গিয়ে দেখে বাবা-মা ঘুমুচ্ছে। হঠাৎ করেই দেয়ালে রাখা ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো। মাত্র সারে চারটা বাজে। লজ্জা পেয়ে গেলো ও।
অবশেষে শেষ হলো সব প্রস্তুতি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ওরা রওনা হলো বরিশালের উদ্দেশ্যে। ওদের গ্রামের বাড়ির নাম সাগরদী। ওদের পূর্বপুরুষ নাকি ওখানকার জমিদার ছিলো। আজও নাকি ওদের বাড়ি পনেরো বিঘা জায়গা জুড়ে। সেই পুরানো আমলের কিছু কিছু বিল্ডিং-ও এখনো আছে। বাড়ির চারিদিক ঝোপ-জঙ্গলে ভরা। এই তো কিছুদিন আগেও নাকি বাড়ির পাশের বাগানে বাঘের ভয় ছিলো। বাড়ির দক্ষিণ দিকের জঙ্গলে নাকি তেঁতুল গাছে ভুতও থাকে! তাই সহজে কেউ ওই পথ মাড়ায় না। ওরা সন্ধ্যা নাগাদ বাড়ি এসে পৌঁছালো। সকলেই একে একে ওদের সাথে পরিচিত হলো। তবে শুভ’র বেশি ভালো লেগেছে সবার ছোট পল্টুকে। ও যেন কথার রাজা। সবই যেনো বোঝে, এমন একটা ভাব। পল্টু শুভর কানে কানে বললো, এখনও একজনের সাথে তোমার পরিচয় হয়নি।
– কার সাথে?
– বারে, সে তো আমাদের মেনুদা।
– মেনুদা! ধুর এটা কারো নাম হয় নাকি!
– বারে, হবে না কেন? ওর নাম আসলে অনন্ত। দাদা চাইতো বড় হয়ে মিলিটারি হবে। তা তো হতে পারলো না, তাই তাকে হাফ নামে ডাকি মেনুদা।
পল্টু ফোকলা দাঁত বের করে হাসতে থাকে। আর তাই শুনে শুভর তো হাসতে হাসতে প্রাণ যায় যায় অবস্থা!
এর মধ্যে পল্টু বললো-
– ওই তো চলে এলো। মেনুদা এসো এসো। এই হলো শুভ দা। শুভ দা এই তো মেনুদা।
এরপর জমে গেল ওদের গল্প। সে কী গল্প! শুনতে শুনতে যেনো শুভর গায়ে কাঁটা দেয়। রাতে ঘুমাতে গিয়ে নানা কথা মাথায় এসে জমতে লাগলো শুভর।
সকালে গুঞ্জনের শব্দে শুভর ঘুম ভাঙলো। কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছে না কি হয়েছে।
পল্টুটাকেও দেখা যাচ্ছে না ওর কাছ থেকে জেনে নিবে। কিছুক্ষণ বাদেই পল্টু এসে হাজির। পল্টু আস্তে আস্তে বললো-
– জানি তো দাদা তুমি কি নিয়ে চিন্তা করছো। চলো তোমাকে বলছি।
– হ্যা, চল তো কি হয়েছে শুনি।
– আসলে ঠাকুর মার একটা মূর্তি হারিয়েছে। শুনেছি ওটা ঠাকুমার শ্বশুর দিয়েছিলেন। জানি না, একটা মাটির মূর্তির জন্য এত কান্না কেন। বাজার থেকে আর একটা কিনে নিলেই তো হয়।
কথা শেষ না হতেই মেনুদা এসে হাজির। সে বললো-
– নারে পল্টু, ওটা মাটির না। মূর্তিটার অনেক দাম। খুব মূল্যবান পাথরের। তবে বুঝতে পারছি না কেন যে হঠাৎ ওটা চুরি হলো। কে নিতে পারে ওটা?
মেনু দা একটু ভেবে বললো-
– চলতো দেখি জানতে পারি কিনা ওটা কে নিলো।
শুভ কেমন যেনো একটু গোয়েন্দা কাহিনীর গন্ধ পেল। (১ম অংশ….চলবে)