ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ জমকালো আয়োজনে উদযাপিত হলো বিসিএ’র ৫০ বছর জুবিলি অনুষ্ঠান

জমকালো আয়োজনে উদযাপিত হলো বিসিএ’র ৫০ বছর জুবিলি অনুষ্ঠান

0
1803

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ডিসিনিউজ

জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের (বিসিএ) ৫০ বছরের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব। নানা ধরনের আয়োজন ছিল জুবিলি উৎসবকে কেন্দ্র করে।

সর্বশেষ বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের (কেআইবি) অডিটরিয়ামে এক আনন্দঘর পরিবেশে আলোচনা সভা ও বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংগঠনটির জুবিলি অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শেষ হয়।

৫ অক্টোবর, বিকাল সাড়ে ৫টায় বিসিএ’র প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও’র সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সারা বাংলাদেশ থেকে সংগঠনটির শাখা ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা যোগ দেয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি এবং অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন ঢাকা আর্চডায়োসিসের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী বিশপ থিয়োটনিয়াস গমেজ সিএসসি।

এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জনাব মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, সাংসদ মেহের আফরোজ চুমকী, সাংসদ জুয়েল আরেং, সাংসদ অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:-এর চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গমেজ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, ভাতিকান দূতাবাসের পক্ষে মুন্সিনিয়র ফাদার আলভার্তো ইসুরিয়েতা ওয়াইসি, ব্যাপ্টিস্ট সংঘের পক্ষে জয়ন্ত অধিকারী, চার্চ অব বাংলাদেশের পক্ষে সৌরভ ফলিয়া, বৌদ্ধ ফেডারেশনের পক্ষে ভিক্ষু সদ্যানন্দ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য উপাধক্ষ্য রেমন্ড আরেংসহ আরো অনেকে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিসিএ’র সংগ্রামী মহাসচিব হেমন্ত আই. কোড়াইয়া এবং ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ও বিসিএ’র আইনবিষয়ক সম্পাদক গিলবার্ট পংকজ কস্তা।

সভাপতির বক্তব্যে নির্মল রোজারিও বলেন, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে অধিকার আদায়ে কাজ করে যাচ্ছে। সারা দেশে ১০১টি শাখা সংগঠন, ৬টি সহযোগি সংগঠন ও দেশের বাইরে ১৩টি শাখা ও সহযোগি সংগঠন নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

‘বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন দেশে ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার খ্রিষ্টান মানুষের অধিকার আদায়ে ১০টি দাবি নিয়ে মাঠে কাজ করছে। এ ছাড়াও শোষণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করছে। বিসিএ বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের ধারায় সংহতি জানিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে’ বলেন সভাপতি রোজারিও।

এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য, আমরা সকল ধর্মের মানুষ এক সাথে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর জাতীয় চার মূলনীতির মধ্যে একটি ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। আমরা একই জাতিসত্ত্বার মানুষ। যখন ধর্মের নামে উগ্রবাদী কাজ করে, তখন আমরা ব্যাথিত হই। ধর্মের মূলনীতি হলো মানব কল্যাণ। আমরা বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বলে থাকি, সকল মানুষ এক ¯্রষ্টার সৃষ্টি। তাহলে কেন আমরা তার সৃষ্টির উপর নির্যাতন করছি। আজ বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের ৫০ বছরের জুবিলি। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা করে তারা আজ এখানে এসেছে। এই সংগঠনটি খ্রিষ্টান সমাজের অধিকার আদায়ে কাজ করছে এবং আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।’

ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে যে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেখানে আমাদের খ্রিষ্টানদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়েই খ্রিষ্টানদের প্রশংসা করে বলেন, খ্রিষ্টানদের মধ্যে কেউ রাজাকার ছিলো না। আমরা বাইবেলের সেই লবনের স্বাদের মতো। বাংলাদেশে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা কম হলেও, আমাদের অবদান অনেক বেশি। বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন সব সময় কথা বলেছে। সোচ্চার থেকেছে অধিকার আদায়ে।’

জুবিলি উৎসবের উদ্বোধক অবসরপ্রাপ্ত বিশপ থিয়োটনিয়াস বলেন, ‘বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন কাজ করছে, যেন আমরা সুন্দর মতো জীবনযাপন করতে পারি। সেই সাথে যেন একটি উন্নত দেশ গঠনে স্বাক্ষর রাখতে পারি।’

তিনি জুবিলি উৎসবে সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বলেন, বিসিএ যেন সব সময় তার কর্তব্য পালন করতে পারে এবং একটি আদর্শ হয়ে উঠে। আর সংগঠেনর সেই চেষ্টাও রয়েছে বলে দেখা যায়। এই জুবিলি অনুষ্ঠান সংগঠনের কাজের মাধ্যমে সার্থক হয়ে উঠুক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন শ্রদ্ধা ভরে বাংলাদেশে খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতাদের স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন ৫০টি বছর ধরে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করছে। আমি জানি, সংগঠনটির মাধ্যমে আপনারা শিক্ষা, ব্যবসায়, সমবায়, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অনেক কাজ করে অবদান রাখছেন। আপনারা পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষদের মূলধারায় নিয়ে আসায় অবদান রেখে যাচ্ছেন দীর্ঘ ৫০টি বছর ধরে। আজ আপনাদের জুবিলি উৎসব সার্থক।’

‘প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের রুপকল্প অনুযায়ী বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল উন্নত দেশ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। আপনারাও সেই লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। আমারা ভাল লেগেছে, আপনারা জুবিলি অনুষ্ঠান উপলক্ষে বৃক্ষরোপন অভিযান পরিচালনা করেছেন। এর জন্য আমি খুব খুশি হয়েছি। আশা করি যারা এখনো পিছিয়ে রয়েছে, তাদেরও আপনারা সামনের সারিতে নিয়ে আসবেন। ধর্মের মূলকথা হলো মানবতা। আমরা যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই ধারা বয়ে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে কোনো সাম্প্রদায়িক সমস্যা বা বিভাজন থাকবে না’ বলেন স্পীকার শিরীন শারমিন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্য বিশেষ অতিথিরা জুবিলি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্লেষণ ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।

জুবিলি অনুষ্ঠানে কেক কেটে একটি দৃষ্টি নন্দন স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিগণ। জুবিলি অনুষ্ঠানে খ্রিষ্টান সমাজ থেকে সমর দাস, এন্ড্রু কিশোরদের মতো বরেন্য ৪২ জনকে সম্মাননায় ভূষিত করে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

এ ছাড়াও জুবিলি উপলক্ষে সকাল ৮টায় তেজগাঁও চার্চে বিশেষ প্রার্থনা, বৃক্ষরোপন ও আনন্দ র‌্যালি বের করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশে খ্রিষ্টানদের অধিকার আদায়ের লক্ষে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন যাত্রা শুরু করেছে। অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজকের দিনে সংগঠনটি ৫০ বছরের জুবিলি অনুষ্ঠানের মাহেন্দ্রক্ষণ পালন করছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া, দলিত, নির্যাতিত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে সংগঠনটি ভূমিকা রেখে চলেছে। বিভিন্ন অধিকার আদায়ে ও অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন নিয়মিত রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।

ছবি: শমিত ক্রুজ