ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ফিচার জয়নালের ৩৬ বছরের সাথী বানর

জয়নালের ৩৬ বছরের সাথী বানর

0
1949

ওরে গানওয়ালা, তুমি আরেকটা গান গাও

আমার আর কোথাও যাবার নেই, কিচ্ছু করার নেই।

ছেলেবেলার সেই বেহালা বাজানো লোকটা,

চলে গেছে বেহালা নিয়ে

চলে গেছে গান শুনিয়ে…

ছোটবেলাকার কথা মনে পড়ে যায় কবীর সুমনের এই গানটি শুনে। মনে পড়ে যা পাড়াগাঁয়ে নানা ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিগুলো। আমাদের ছেলেবেলাকার চিরচেনা কিছু বিষয় আজ হারিয়ে গেছে আধুনিকতার চাপে। গাঁয়ের মেঠো পথে, শহরের রাস্তার পাশে বানর নাচ, সাপের খেলা, জাদু, বায়স্কোপ – এসব এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে পুরাণ বা মিথ হয়ে রয়েছে।

03আজ অনেক বছর পর চোখে পড়ল বানর নাচ। ছেলেমেয়ের পোশাকে সেজেছে ওরা। জয়নালের কথামতো ওরা বিভিন্ন অভিনয় দেখিয়ে আনন্দ দিচ্ছে দর্শকদের।

কাছে গিয়ে নাম জানতে চাইলে বানর খেলা দেখানো লোকটা বললেন, তার নাম জয়নাল প্রামানিক। সত্তর বছর বয়সী জয়নাল জীবনের ৩৬ বছর ধরে বানর খেলা দেখিয়ে আসছেন। তার জীবনের অর্ধেক সময়ই কেটেছে এই বানরের খেলা দেখিয়েই।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বাসিন্দা জয়নাল। তার আছে তিন ছেলেমেয়ে। স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে তার সংসার চলে এই বানরের খেলা দেখিয়েই। নিজের ছেলেমেয়ের মতোই তার বানর দুটি।

জীবনের প্রথম কাজ ছিলো গাড়ি চালানো। গাড়ি চালানোর সময় এক দুর্ঘটনার পর বানরখেলাই হয়ে ওঠে তার সংসারের আয়ের একমাত্র আয়ের উৎস; একমাত্র পেশা।

বানর দুটিকে তিনি ছোটবেলা থেকেই খেলা শিখিয়ে আসছেন। নিপুণতার সাথে বানরদের কসরত দর্শকদের মোহিত করে। বানর দুটিকে উদ্দেশ্য করে জয়নাল বলেন, ‘ওদের যেভাবে বোঝানো যায়, মানুষকে কিন্তু সেভাবে বোঝানো যায় না বা শেখানো যায় না। তাই ওদের প্রশিক্ষণ দিতে কোনো কষ্ট হয় না। ওরা মানুষকে অনুসরণ করে হূবহূ।’

বানরের খেলার কদর কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগেকার মতো বাংলাদেশ আর নেই। এসব ঐতিহ্য এখন প্রায় স্মৃতির মতো। তারপরও খুব কম বানর নাচের কারিগর থাকলেও মানুষ এখনো বানর খেলা শুরু করলেই ভির জমায়।

04জীবনের অর্ধের সময়েরও বেশি সময় জয়নালের কেটেছে বানরের সাথে। তাই তাদের সাথে সখ্যতাও অনেক। কাঠি, ঝনঝনি, ঢুমরুর তালে তালে বানর নাচিয়ে দর্শকদের মাতিয়ে রাখে জয়নাল। সব বয়সী মানুষ বানর নাচ দেখলেও স্কুলের ছেলেমেয়েরাই এতে বেশি উৎসাহী বলে জয়নাল জানান।
জয়নাল আগে নিজেই ঘুরে ঘুরে খেলা দেখাতেন। এখন একটি এজেন্সির মাধ্যমে খেলা দেখান। প্রতিদিন তিনি গড়ে ৩ হাজার আয় করেন এই খেলা দেখিয়ে।

বানরের সাথে জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে জয়নালের। তাই বানর দুটিকে আপন করেই নিয়েছেন। ওদের নিয়েই জয়নালে জীবন-জীবিকা। তাই জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি বানরদের খেলা দেখিয়েই মানুষকে আনন্দ দিয়ে যেতে চান।

আরবি/আরপি/২০ ডিসেম্বর, ২০১৬