ঢাকা ,
বার : মঙ্গলবার
তারিখ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ১০ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ জয়পুরহাটে গির্জায় ভাঙচুর, গ্রেপ্তার একজন: ঢাকা ক্রেডিট ও বিসিএ নেতৃবৃন্দের ক্ষোভ

জয়পুরহাটে গির্জায় ভাঙচুর, গ্রেপ্তার একজন: ঢাকা ক্রেডিট ও বিসিএ নেতৃবৃন্দের ক্ষোভ

0
314
ছবি: সংগৃহীত

ডিসিনিউজ ।। ডেক্স

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার হাটশেখা আদর্শ গ্রামের মাদার তেরেসা গির্জায় ঢুকে এক তরুন মূর্তি ভাঙচুর করেছে। সোমবার সকালের এই হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার তরুণের নাম জান্নাতুল ফেরদৌস (২২)। তিনি কালাই উপজেলার মূলগ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে। জান্নাতুল ফেরদৌস মানসিক প্রতিবন্ধী বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মূলগ্রামের তরুণ জান্নাতুল ফেরদৌস সোমবার সকালে মাদার তেরেসা উপাসনালয়ে আসেন। তিনি গির্জায় ঢুকে যিশুখ্রিষ্ট, মাদার তেরেসা ও মা মারিয়ার মূর্তি ভাঙচুর করেন। এরপর খ্রিষ্টধর্মে লোকজন জান্নাতুল ফেরদৌসকে গির্জার ভেতরে আটকে রেখে থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে তাকে আটক করে। পরে এ ঘটনায় করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এই ঘটনার পর সোমবার দুপুরে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. শরীফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান, কালাই পৌরসভার মেয়র রাবেয়া সুলতানা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টুকটুক তালুকদার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ঘটনায় জড়িত একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’

এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন দেশসেরা সমবায় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ও আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক উপ-কমিটির নির্বাহী সদস্য পংকজ গিলবার্ট কস্তা। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীকে মানসিক ভারসাম্যহীন বা অন্য কোনোভাবে দোষিদের বাঁচিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করা হয়েছে লক্ষ্য করেছি। একটি গণতান্ত্রিক দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনভাবে ধর্মীয় অনুশাসন অনুশীলন করা সাংবিধানিক অধিকার। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে জাতিত্বের বিষবাষ্প থেকে বেড়িয়ে এসে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার ফলশ্রুতিতে। স্বাধীনতার একটি মূলস্তম্ভ হলো অসাম্প্রদায়িক এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের চেতনা। কিন্তু, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, গির্জা ও মন্দিরে ভাঙচুর সত্যিই স্বাধীন বাংলার সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। আমরা জয়পুরহাটে গির্জায় ভাঙচুরের সঠিক তদন্ত ও বিচার কামনা করছি। মাননীয় সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাসহ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রেখে স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রাখবে বলে আশা করছি।’

অপর দিকে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন। এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও ও মহাসচিব ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকালের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে একটি মহল দাবি করছে। এর আগেও কুমিল্লায় মন্দিরে হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন সময়েই দেখা যায়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর বা উপাসনালয়ে হামলায় জড়িতদের মানসিক ভারসাম্যহীন প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে ঘটনাকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে একটি মহল। সুপরিকল্পিত না হলে বারবার নির্দিষ্ট সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলার ঘটনার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অহরহ এমন ঘটনা সত্যিই ন্যাক্কারজনক এবং ঘৃণ্য।’

‘সরকার প্রসাশনের উচিত বিষয়টি ভাল করে খুঁটিয়ে দেখা। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী এই দায় এড়াতে পারে না। তাই ঘটনা যেন অন্যদিকে প্রবাহিত না হয়, সেই দিকে সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে লক্ষ্য রেখে দোষীকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। গির্জায় ঢুকে ধর্মীয় জিনিসপত্র ভাঙচুর অর্থাৎ ধর্মের উপর নির্মম আঘাত। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। এ ছাড়াও বার বার সংখ্যালঘুদের উপর এমন হামলার ঘটনা সরকারেরও ব্যর্থতা। কোনোভাবেই সরকার এই দায় এড়াতে পারে না’ বলেন তারা।

গির্জা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুবাশ মুরমু বলেন, মূর্তি ভাঙা মানে ধর্মে আঘাত করা। মূর্তি ভাঙার পেছনে অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে। তবে এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাটি তদন্ত করে মূর্তি ভাঙার রহস্য উন্মোচন করবে বলে আশা করছেন।

কালাই থানার ওসি এস এম মঈনুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার তরুণ মানসিক প্রতিবন্ধী বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।