শিরোনাম :
ঢাকায় দুস্থদের মাঝে ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ফাউন্ডেশনের ত্রাণ বিতরণ
ডিসিনিউজ ॥ ঢাকা
ঢাকায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ফাউন্ডেশন।
২১ আগস্ট বিকাল ৪টায় ফার্মগেট তেজগাঁও চার্চ কমিউনিটি সেন্টারে প্রায় ৮০টি দুস্থ পরিবারের মধ্যে এই ত্রাণ বিতরণ করা হয়। আর্থিক সহযোগিতায় ছিল ঢাকা ক্রেডিট, দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস্ (কাককো) লি: ও দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:।
ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পংকজ গিলবার্ট কস্তা, ভাইস-চেয়ারম্যান বাবু মার্কুজ গমেজ, সেক্রেটারি লিটন টমাস রোজারিও, ট্রেজারার আলবার্ট আশিস বিশ্বাস, নির্বাহী পরিচালক ডমিনিক রঞ্জন পিউরীফিকেশন, কাককো’র চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও, ফাউন্ডেশনের সদস্য ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, সদস্য রতন পিটার কোড়াইয়া, সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর সম্পাদক ও খ্রিষ্টান কমিউনিকেশন সেন্টারের পরিচালক ফাদার আগস্টিন বুলবুল রিবেরূ, হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগস্টিন পিউরীফিকেশনের প্রতিনিধি হয়ে পরিচালনা পরিষদের সদস্য সুজয় পিউরীফিকেশন ও সুপারভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যান ইউজিন কোড়াইয়াসহ ঢাকা ক্রেডিটের কর্মকর্তাগণ।
ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পংকজ গিলবার্ট কস্তা বলেন, ‘ফাদার ইয়াং আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য ক্রেডিট ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষের যেন দুর্দশা দূর হয়। এই উদ্দেশেই ফাদার ইয়াংকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা তাঁর নামে ফাউন্ডেশন করেছি। এমন কোনো সমবায়ী নেই, যারা ফাদার ইয়াং-এর নাম শোনেনি। ফাদার ইয়াং-এর আদর্শ সকলের কাছে পৌঁছে দিতে আমাদের এই ফাউন্ডেশনের প্রচেষ্টা। এই ফাউন্ডেশন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য কাজ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই করোনা অতিমারিতে অসংখ্য মানুষ দুর্দশায় পতিত হয়েছেন। আমরা দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে থেকে ত্রাণ সহায়তার মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। এই ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে অসহায় দুস্থদের সহযোগিতা করা। এ ছাড়াও এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি প্রদান ও গবেষণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো।’
ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি লিটন টমাস রোজারিও বলেন, ‘ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মহৎ উদ্দেশে। ফাদার ইয়াং যেমন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ক্রেডিট ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেছে, তেমনি সময়ের প্রয়োজনে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জন্য তাঁর নামে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছি। হয়তো এক সময় এই করোনার ক্রান্তিলগ্ন থাকবে না, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে আমাদের একত্রিত প্রচেষ্টায়। ঢাকা ক্রেডিট এই ফাউন্ডেশনে অনেক বড়ো অংশিদারিত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি পর্যায়ও সহযোগিতা পেয়েছি এবং অনেক প্রতিষ্ঠানও এই প্রক্রিয়ার অংশ নিতে অঙ্গিকার করেছে। সুতরাং আমাদের সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই অতিমারি আমরা মোকাবেলা করতে পারবো বলে আশা করছি। আমরা ঢাকা ক্রেডিটের মাধ্যমে সাধারণ সদস্যদের জন্য সরাসরি কাজ করতে পারি, কিন্তু এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ হয়েছে।’
ভাইস-চেয়ারম্যান বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, ‘এই মহামারীর মধ্যে মানুষের জন্য মানুষ কাজ করবে, তা এই ফাউন্ডেশনের মধ্যে করা হচ্ছে। আশা করছি এই মহতী উদ্যোগের সাথে আরো মানুষ সম্পৃক্ত হবেন। কল্যাণমূলক কাজ নিয়ে ফাউন্ডেশন এগিয়ে যাবে এই আশা করছি।’
কাককোর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও বলেন, ‘এই করোনা অতিমারি আমাদের ভয়াবহ ক্ষতি করেছে। তাই এই সহযোগিতা নিতে কেউ যেন হিনমন্যতায় না ভুগি। শুধু আমাদের কমিউনিটিতে নয়, ফাউন্ডেশন কাজ করছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। সকলের সহযোগিতায় আমরা অনুপ্রাণিত হতে পেরেছি, তাই সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই ক্রান্তিকাল মোকাবেলা করতে পারবো।’
ফাউন্ডেশনের সদস্য ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট সব সময় সদস্য ও দেশের মানুষের কথা ভাবে। তাই ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে করোনা সংকট মোকাবেলায় সহযোগিতা করে যাচ্ছে। যারা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দুঃখে-কষ্টে দিনানিপাত করছে, তাদের মাঝে খাদ্য শস্য বিতরণ ও স্বাস্থ্য সামগ্রী প্রদান করে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা আত্মমানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছি। আশা করি সকলের সহযোগিতায় আমরা আরও বেশি সহযোগিতার হাত প্রসারণ করতে পারবো।’
ত্রাণ কার্যক্রমের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নির্বাহী পরিচালক ডমিনিক রঞ্জন পিউরীফিকেশন। ডাক্তার আল আমিন ত্রাণ বিতরণের পূর্বে সকলকে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন।
করোনা অতিমারি মোকাবেলা ও সাধারণ জনগণের পাশে থেকে এই দুর্যোগকালীন সময়ে সহযোগিতার হাত প্রসারণ করতে ফাদার চার্লস জে. ইয়ং ফাউন্ডেশন করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্যপণ্য ও স্বাস্থ্য সামগ্রী প্রদান করছে। ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডমিনিক রঞ্জন পিউরীফিকেশনের ত্বত্তাবধানে কয়েকটি ধাপে এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলবে।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ পণ্যের মধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেল, আলুসহ খাদ্য দ্রব্য এবং ৫টি করে মানসম্পন্ন মাস্ক ও স্বাস্থ্য সামগ্রী। এ ছাড়াও অংশ হিসেবে ছিল করোনা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধী ডাক্তারী পরামর্শ। তাছাড়া এর অংশ হিসেবে থাকবে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের ফ্রি টেলিমেডিসিন সেবা। এ ছাড়াও বিভিন্ন চার্চের কবরখোরকদের জন্য প্রদান করা হয়েছে পিপি, হ্যান্ড স্যানিটারাইজ, মাস্কসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সামগ্রী।
এই ত্রাণ কার্যক্রমের সবচেয়ে বড়ো অংশিদার হয়েছে দেশসেরা সমবায় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্রেডিট। ফাউন্ডেশনটির মাধ্যমে ত্রাণ কার্যক্রমে প্রায় ৭৫ শতাংশ অর্থ সহায়তা দিয়েছে ঢাকা ক্রেডিট। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্রেডিট, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়েও অর্থ সহায়তার মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।