শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন
ডিসিনিউজ ॥ ঢাকা
দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট)-এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়।
৮ মার্চ সন্ধ্যায় তেজগাঁও চার্চ কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত নারী দিবসে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা মহা ধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় নিসেফোরস ডি’ ক্রুজ, ওএমআই। ঢাকা ক্রেডিটের ডিরেক্টর ও নারী উপ-কমিটির আহ্বায়ক পাপড়ী আরেংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা, রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট কালেকটিভ-এর জেনারেল সেক্রেটারি জান্নাত ই ফেরদৌসী, দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস (কাককো) এর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের সাবেক প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, কোর দি- জুট ওয়ার্কসের ডিরেক্টর বার্থা গীতি বাড়ৈ, তেজগাঁও ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার সুব্রত বনিফাস গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলবার্ট আশিস বিশ্বাস, সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, ট্রেজারার পিটার রতন কোড়াইয়া ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন টমাস রোজারিও।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল : ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা মহা ধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় নিসেফোরস ডি’ ক্রুজ, ওএমআই তাঁর বক্তব্যে সকল নারীকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘নারী দিবস হলো তাঁদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ ও কৃতজ্ঞা জানানোর দিন। ঈশ্বর নারী-পুরুষ তাঁর প্রতিমূর্তিতে ও সমান মর্যাদায় সৃষ্টি করেছেন। তাই নারী-পুরুষ সবার মানব মর্যাদা দিতে হবে।’
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। এদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকারও নারী। নারীরা খেলাধুলায়, ব্যবসায় এগিয়ে এসেছে। এত কিছুর পরও নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।’ তিনি মনে করেন, নারী বৈষম্য কমানোর জন্য শুধু আইন যথেষ্ট নয়। দরকার সামাজিক ও ধর্মীয় উদ্যোগ। হতে হবে সকলকে সচেতন।
দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস (কাককো) এর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও নারী সমবায়ীদের প্রশংসা করে বলেন, শুধু ঢাকা ক্রেডিট নয়, সব ক্রেডিটে নারীদের নেতৃত্বে যাওয়া উচিত। নারী সমবায়ীদের নিকট সমবায় সমিতি নিরাপদ বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি পুরুষদের উদ্দেশে বলেন, নারীদের সহযোগিতা করতে হবে। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ঢাকা ক্রেডিট নারী, শিশু ও আদিবাসীদের অগ্রাধীকার দিয়ে কাজ শুরু হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঢাকা ক্রেডিটের সাবেক প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, নির্বাচনে নারীদের জায়গা করে দেওয়া হয় না। তাই নারীদের জায়গা করে নিতে হবে। তিনি ঢাকা ক্রেডিটে আরো বেশি নারীদের নেতৃত্ব দানের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
কোর দি- জুট ওয়ার্কসের ডিরেক্টর বার্থা গীতি বাড়ৈ উল্লেখ করেন যে পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। নারী যখন নিজের মেধা ব্যবহার করতে পারবে, তখন নারী ক্ষমতায়ন হবে। এদেশের নারীরা এগিয়ে গেছে। কিন্তু নির্যাতনের শিকারও হচ্ছে। তাই নির্যাতন প্রতিরোধ পুরুষদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি নারী বৈষম্য দূর করতে পুরুষদের পুরুষ তান্ত্রিক মনোভাব ত্যাগ করার আহ্বান জানান।
ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিটের যত সফলতা, তার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নারী সদস্যদের জন্য। ঢাকা ক্রেডিটের ঋণ খেলাপিদের মধ্য নারীরা ৩০ ভাগ, পুরুষরা ৭০ ভাগ। ঢাকা ক্রেডিট নারী বান্ধব সমবায় প্রতিষ্ঠান।’ তিনি ঢাকা ক্রেডিটের উদ্যোগে হোস্টেল, বিউটি পার্লারসহ নারীদের জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরেন।
ঢাকা ক্রেডিটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন টমাস রোজারিও কর্মীদের পক্ষে উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিটের ৪৫ ভাগ নারী সদস্য। তারা পুরুষের তুলনায় বেশি সঞ্চয় করেন, তবে তুলনামূলক কম ঋণ গ্রহণ করেন। নারীরা সচেতন ও সঞ্চয়প্রবণ কিন্তু নতুন সাহস সঞ্চয় করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে কিছুটা ভীত। আমরা সবাই যেন আমাদের মানসিকতাটা পরিবর্তণ করি, নারীদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করি।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন ঢাকা ক্রেডিট কালচারাল একাডেমীর শিল্পীবৃন্দ। এরপর পবিত্র বাইবেল পাঠ করেন ঢাকা ক্রেডিটের ডিরেক্টর মনিকা গমেজ। প্রার্থনা পরিচালনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য ষ্টেলা হাজরা। এরপর প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিসহ অন্যান্য ব্যক্তিগণ প্রদীপ প্রজ্জলন করেন।
শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলবার্ট আশিস বিশ্বাস।
শেষ প্রার্থনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের ডিরেক্টর পাপিয়া রিবেরু।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন নারী বিষয়ক উপ-কমিটির যুগ্ন আহবায়ক মঞ্জু মারীয়া পালমা ও ঢাকা ক্রেডিটের লোন ইনভেস্টিগেশন এন্ড রিকোভারি বিভাগের এ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার রিচার্ড ফ্রান্সিস রোজারিও। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের ফিন্যান্স – বিভাগের অফিসার চম্পা মনিকা গমেজ।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা পরিষদের অন্যান্য সদস্য ও উপদেষ্টাগণসহ ঢাকা ক্রেডিটের নারী উপ-কমিটির ১ হাজারের বেশি সদস্য।
আলোকচিত্র: রবীন ভাবুক