শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
‘সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো, নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ^ গড়ো’ প্রতিপাদকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৯ পালন করে ঢাকা ক্রেডিট।
আজ শনিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা ক্রেডিটের আয়োজনে তেজগাঁও চার্চ কমিউনিটি সেন্টারে সহস্্রাধিক নারীর-পুরুষের উপস্থিতিতে নারী দিবস পালন করা হয়। তবে নারী সংখ্যাই ছিল বেশি।
ঢাকা ক্রেডিট কতৃর্ক আয়োজিত আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মাকুর্জ গমেজের সভাপতিত্বে উপস্থিত প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, এমপি।
‘কন্যা শিশুকে স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠতে দিতে হবে, প্রতিভা বিকাশের সুযোগ দিতে হ্েব, দুর্বল নারীকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমতার জন্য বর্তমান প্রধানন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম নারী স্পীকার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন এবং নারীরা এই দায়িত্ব পালনে সাফল্য অর্জন করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের মিশনারী স্কুলগুলো মাত্র শিক্ষত করে না, সত্যিকারের ভালো মানুষ গড়ে তোলার প্রতিষ্ঠান এসব প্রতিষ্ঠান। প্রথম সারির স্কুলগুলোর তালিকা করলে মিশনারী স্কুলগুলোর নাম চলে আসবে সবার আগে। মিশনারী স্কুলে যারা শিক্ষকতা করেন, তারা ধর্মের একটি পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করে আন্তরিকতার সাথে কাজ করেন তাঁরা। তাই মিশনারী স্কুল-কলেজগুলোর ব্যবস্থাপনা কাজের স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজন আছে।’
নারী সমাজকে সমতায় ও সহিংসতা থেকে মুক্ত হতে হলে হীনমন্যতাসম্পন্ন মনোভাবের পরিবর্তন প্রয়োজন। নারী সমাজকে পরিবর্তন করলে হলে চিন্তায় সমতা আসতে হবে। নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা আসলে সমাজ-জাতি-বিশ^- সকলেই উপকৃত হবে, জানান শিক্ষামন্ত্রী দিপু।
‘নারীরা আছে বিধায় পৃথিবী আজ এতো সুন্দর’ বলেন অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ। তিনি বলেন, ঢাকা ক্রেডিটে পুরুষ সদস্যের তুলনায় নারী সদস্যদের সঞ্চয়ী মনোভাব বেশি। নারীর ঋণ গ্রহণ করে খেলাপি হওয়ার সংখ্যা খুব কম। বর্তমানে সমিতির মোট সদস্যর ৪৮% হচ্ছে নারী। ঢাকা ক্রেডিটের সকল উপকমিটির মধ্যে নারী কমিটি হচ্ছে একটি ভাইব্রেন্ড কমিটি।
প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ঢাকা ক্রেডিটের নারী সদস্যসহ বিশে^র সকল নারীকে শুভেচ্ছা জানান।
ঢাকা ক্রেডিটের নারী কমিটির আহ্বায়ক এবং বোর্ড অব ডিরেক্টর পাপিয়া রিবেরু বলেন, ‘আজকে এই নারী দিবস পালন করার উদ্দেশ্যেই হচ্ছে সকল নারীর নির্যাতন ও পরিশ্রমের ইতিহাস স্মরণ করা।
ঢাকা ক্রেডিট নারী বৈষম্য দূর, সমতা অর্জনের জন্য সর্বদা কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সাথে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে ঢাকা ক্রেডিট কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং সফল হয়েছে। নারীদের পাহার-সমান বাধা অতিক্রম করতে প্রয়োজন আত্মবিশ^াস এবং সামাজিক স্বীকৃতি’ বলেন নারী কমিটির আহ্বায়ক পাপিয়া রিবেরু।
‘নারীদের অবস্থান উন্নতি হয়েছে এবং হবে। কোন অধিকার সংগ্রাম ব্যতীত অর্জন হয়নি, তাই আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে’ বলেন কাক্কোর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও।
তিনি শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন, ‘বাংলাদেশে মিশনারী স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্চবিশপের যে স্বাধীনতা আছে, সেখানে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তার নিরসন প্রয়োজন। যে সকল স্কুলে খ্রিষ্টান ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে, সেখানে যেন খ্রিষ্টান ধর্মের শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় তার জন্য অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও বলেন, মন্ডলীতে আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছি এবং কাজ করে যেতে চাই। ষাটের দশকে মন্ডলী নারী জাগরণে শিক্ষার একটি বিশেষ ভূমিকার রেখেছিল। তারই সুস্বাদু ফসল হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি এমপি। কারণ তিনি মিশনারী স্কুলের ছাত্রী।
তিনি আরো বলেন, নারী উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন নারী-পুরুষের সমতা, স্বাধীনতা, মর্যদা ও অধিকার। এই প্রয়োজন অনুভব করি ঐশতাত্তিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের খুলনা বাগেরহাট সংরক্ষিত মহিলা আসনে আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিটের নির্বাচনে শতকরা ৩০ভাগ নারী সদস্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়’।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জনান তাকে সংরক্ষিত আসনে বাংলাদেশের প্রথম নারী এমপি হিসেবে সুযোগ দানের জন্য।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা এবং সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন করেন ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকা ক্রেডিট কালাচারাল একাডেমির শিল্পীদের নৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয়। বাইবেল পাঠ করেন ঢাকা ক্রেডিটের নারী কমিটির যুগ্মসদস্য সচিব সুমি ক্যাথরিন কস্তা, প্রার্থনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য পাপড়ি আরেং। প্রদীপ প্রজ¦ালনের সময় নারী কমিটি গান পরিবেশন করেন। ঢাকা ক্রেডিটের নারী কমিটির একযুগের পথ চলার উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে পরে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১০জন নারীকে সমাজে বিভিন্ন অবদানের জন্য সম্মানিত করা হয়। তারা হলেন জাতীয় ক্রিড়াবিদ মিউরেল গমেজ, খুলনা-বাগেরহাট সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, স্বাস্থ্য সেবায় ইরা দিব্রা, স্বাস্থ্য সেবায় সিস্টার নিবেদিতা রেবেকা রিবেরু এসএমআরএ, শ্রেষ্ঠ সমবায়ী পুষ্প কলেটা গমেজ, মার্সেলা গমেজ, উমা ম্যাগডেলিন গমেজ, শিক্ষা ও সমাজ সেবার জন্য সিস্টার রেবা ভেরোনিকা ডি’কস্তা আরএনডিএম, অসীমা সরকার, সফল বিউটি পার্লার ব্যাবসায়ী সুচরিতা হাদিমা। শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অয়োজন করা হয়। নারী কমিটির সচিব শান্তি কোড়াইয়ার প্রার্থনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্ত হয়।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ররমন্ড আরেং, ঢাকা ক্রেডিটের কর্মকর্তাবৃন্দ, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশসের মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়াসহ আরো অনেকে।