শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের উপদেষ্টা পিটার কোড়াইয়ার মহাপ্রয়ান
দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা এর উপদেষ্টা পিটার কোড়াইয়া ১০ মে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় মনিপুরীপাড়ায় তাঁর নিজ ফø্যাটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি সহধর্মিনী শান্তি কোড়াইয়া, তিন সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ও অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিকস রোগে ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট অভিনেতা কল্যাণ কোড়াইয়া তাঁর সুযোগ্য পুত্র। তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনে তাঁকে একনজর দেখার জন্য ও তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানানোর জন্য বহু নারী-পুরুষ তাঁর বাসায় সমবেত হন। তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অনেক আত্মীয়-অনাত্মীয়, শুভাকাঙ্খী ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এতেই প্রমাণিত হয় যে তিনি একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন।
তিনি ঢাকা ক্রেডিটের একজন প্রকৃত শুভাকাঙ্খী ছিলেন। তিনি ঢাকা ক্রেডিটের বিভিন্ন উপ-কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে অবদান রেখে গেছেন। সর্বশেষ তিনি ঢাকা ক্রেডিটের একজন সম্মানিত উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি খুবই সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। তিনি ছিলেন একজন মাটির মানুষ; একজন অতি সাধারণ ও সাদা মনের মানুষ ছিলেন। তিনি সর্বদা হাসি-খুশি ও সদালাপী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি প্রায়ই ক্রেডিটের অফিসে আসতেন। তিনি ক্রেডিটে এসে আমাদের সবার খোঁজ-খবর না নিয়ে যেতেন না। তিনি ক্রেডিটের যেকোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহী ছিলেন এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তিনি জানতেন ক্রেডিটের অনুষ্ঠানসমূহ আমাদের দপ্তর থেকে ঘোষণা করা হয়ে থাকে। তাই তিনি ক্রেডিটে এসেই আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘সামনে কোনো অনুষ্ঠান আছে কি না?’
আমি অনেক সময় কাজের চাপে তাঁকে সঠিক সময়ে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভুলে যেতাম। কিন্তু তাতে তিনি মনে কিছু ধরে রাখতেন না। তাকে দেরিতে আমন্ত্রণ জানালেও তিনি আমাদের অনুষ্ঠানে যথাসময়ে আসতেন। ঢাকা ক্রেডিটের প্রতি তাঁর অপার ভালবাসার জন্যই তিনি আমাদের কাছে আসতেন বারবার।
তিনি একজন ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। মন্ডলীর নানা কাজেও তিনি সকল সময় সহযোগিতার হাত বাড়াতেন। তিনি নিয়মিত খ্রিষ্টযাগে অংশগ্রহণ করতেন। তিনি প্যারিশ কাউন্সিলের সাথেও সংযুক্ত থেকে মন্ডলীকে অকাতরে সেবা দিয়ে গেছেন। মন্ডলীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে সবার সামনে থেকে জনসাধারণকে সেবা প্রদান করে তিনি তা প্রমাণ করেছেন।
তিনি তাঁর জীবনের অনেক সময় বিদেশে কাটিয়েছিলেন। তিনি ক্যাটারিং লাইনে খুবই দক্ষ একজন কারিগর ছিলেন। তিনি এ কাজে অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি হাইজেনিকের ওপর আমাদের স্টাফদের সুন্দরভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন যা আমাদের কর্মীরা এখনও মনে রেখেছেন।
তার আদিবাড়ি পাবনা জেলার চাটমোহর থানার মথুরাপুর কাথলিক মিশনে। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন সৎ, নির্ভীক, সমাজসেবক, সংস্কৃতিমনা ও আদর্শ বাবা।
১১ মে শুক্রবার তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর তেজগাঁর চার্চ ক্যাম্পাসের কবরস্থানে তার মৃতদেহ সমাহিত করা হয়।
তিনি স্বশরীরে আমাদের মাঝে নেই। তিনি যে আদর্শ রেখে গেছেন তা পৃথিবীতে বিদ্যমান। আমরা যেন তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে একটি সুন্দর পৃথিবী তৈরি করতে পারি- সেটাই আমার কামনা।