শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা কমিটির শপথ গ্রহণ
সুমন কোড়াইয়া, ঢাকা:
পঁয়ষট্টি বছরের ঐতিহ্যবাহী ৪২ হাজার সদস্যের সমিতি ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা কমিটির ২২ জন নবনির্বাচিত সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন।
আজ ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান।
কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট একটি সামাজিক সংগঠন। এটি পরিচালনা করছেন খ্রিষ্টভক্তরা। আমার অনুরোধ- এই সামাজিক কাজ যেন খ্রিষ্টীয় মূল্যবোধে পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ পরিচালনা করেছেন- তার একটি আধ্যত্মিকতা ছিলো। খ্রিষ্টান সংগঠনে আধ্যাত্মিক শক্তি কাজ করবে এই কামনা করি।’
তিনি আরো বলেন, যারা দায়িত্বে আছেন, তারা যেন ঢাকা ক্রেডিটের সদস্যদের গঠন দান করেন। যা আপনাদের কর্মকান্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকা উচিত। ধর্মকে কোনোভাবে বাদ দেওয়া যাচ্ছে না। তাই সমিতিতে একজন ব্যক্তিকে ধর্মীয় উপদেষ্টা রাখার আহ্বান জানাই। আমার এই খ্রিষ্টীয় আবেদন সবার নিকট করছি। আপনারা দেখবেন, আপনারা এর সুফল পাবেন।
কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও শপথ নেওয়া ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আজ ভাল লাগছে, নারীদের উপস্থিতি মঞ্চে রয়েছে। সমিতির প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা এবং আপনার ব্যবস্থাপনা কমিটি- আপনাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনাদের জন্য আমি আধ্যাত্মিকভাবে যাত্রা করবো, সেই যাত্রা হবে প্রার্থনায়, উপদেশে।
[wp1s id=”11618″]
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমবায় অধিদপ্তরের যুগ্ম-নিবন্ধক জনাব মো. লুৎফর রহমান, উপনিবন্ধক (প্রশাসন) নূর-ই-জান্নাত, দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভস-এর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এর চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন, ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গমেজ, তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চ-এর পাল-পুরোহিত সুব্রত বনিফাস গমেজ, বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ সংঘের সহ-সভাপতি জেমস প্রদীপ বিশ্বাস, ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলবার্ট আশিস বিশ্বাস, ন্যায় সত্য সুন্দর দলের মহাসচিব ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন ম্যানেজার নিপুন সাংমা, তেজগাঁও থানা সমবায় কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার। অনুষ্ঠানে সমবায় অঙ্গনের অনেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বসহ প্রায় ১১০০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিটে এই ৬৪ বছরের পথ যাত্রায় আমরা অনেক পথ অতিক্রম করেছি। সমিতির কয়েকজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। আমাদের এই নয় বছরের কার্যকালের সময় আমরা বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছি। আমাদের ওপর যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা ব্যবস্থপনা কমিটি আজ দৃঢ় কন্ঠে বলতে চাই সমিতির চলমান কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করবো।’
তিনি আরো বলেন, ঢাকা ক্রেডিট খ্রীষ্টান সমাজের আর্থিক উন্নয়ন ছাড়াও আধ্যাত্মিক, সামাজিক উন্নয়নও করে যাচ্ছে। ট্রেডিশনাল সমবায় সমিতির কার্যক্রম পরিচালনায় চ্যালেঞ্জ-এর সম্মুখিন হতে হচ্ছে। ঋণখেলাপি তার মধ্যে অন্যতম। বন্ধুপ্রতিম সমবায় সমিতিগুলোকে অনুরোধ করি, আসুন আমরা সকলে মিলে এই চ্যালেঞ্জ জয় করি।
ঢাকা ক্রেডিটকে সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রার্থনায় খ্রিষ্টীয় নেতৃত্ব সৃষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করেন তেজগাঁও ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত সুব্রত বনিফাস গমেজ।
ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা পরিষদের আজ যারা শপথ নিলেন তারা হলেন: অফিস বেয়ারার: প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা, ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলবার্ট আশিস বিশ্বাস, সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, ট্রেজারার পিটার রতন কোড়াইয়া। বোর্ড অব ডিরেক্টর: সজল যোসেফ গমেজ, পল্লব লিনুস ডি’রোজারিও, সলোমন ইগ্নেসিয়াস রোজারিও, মনিকা গমেজ, প্রত্যেশ রাংসা, পাপড়ি প্যাট্রিশিয়া আরেং, আনন্দ ফিলিপ পালমা ও পাপিয়া রিবেরূ। ক্রেডিট কমিটি: চেয়ারম্যান মানিক লরেন্স রোজারিও, সেক্রেটারি জনি এস. গমেজ, সদস্য লরেন্স পিটার গমেজ, অন্তর মানখিন ও উমা ম্যাগডেলিন গমেজ। সুপারভাইজরি কমিটি: চেয়ারম্যান জন গমেজ, সেক্রেটারি প্রিয়ন্ত সি. কস্তা, সদস্য বার্নার্ড পংকজ ডি’রোজারিও, মাধবী অনিতা গমেজ ও ষ্টেলা হাজরা।
২০১৯-এর ১৩ ডিসেম্বর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে এই ২২ জনের পরিচালনা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভস-এর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও বলেন, ভাল নেতৃত্ব গড়ে তোলা ভাল নেতার বড় যোগ্যতা। ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ সেটা করেছেন। তিনি একটি যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলেছেন, তাকে অভিনন্দন জানাই। তিনি সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমরা তা সঠিকভাবে করবো।
ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ মনে করেন, ঢাকা ক্রেডিটে বিভিন্ন মন্ডলীর সদস্য, বিভিন্ন এলাকার কর্মী এবং বিভিন্ন ধরনের প্রডাক্ট থাকা এবং
বেশ কিছু ‘সেবা’ এই সমিতি দেশের সেরা হয়ে উঠেছে। আশা করি সমিতিতে যদি সুশাসন বিদ্যমান থাকে তাহলে এই সমিতি আরো অনেক দূরে এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গমেজ নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রতি আহ্বান জানান, যারা ঋণখেলাপি তাদের ঋণ যেন নিয়মিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
সমবায় অধিদপ্তরের যুগ্ম-নিবন্ধক জনাব মো. লুৎফর রহমান বলেন, সমবায়ে যারা নেতৃত্ব দিতে আসবেন, তাদের অনুরোধ, আপনারা সমবায়ের আইন সম্পর্কে পড়াশোনা করবেন, তাহলে অনেক সমস্যা সহজে সমাধান করতে পারবেন। তিনি ঢাকা ক্রেডিটের কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, আমি সব সময় ঢাকা ক্রেডিটের পাশে থাকবো। আপনারা ডাকলে আমি সহযোগিতা করবো।
‘অন্য ধর্মের চেয়ে খ্রিষ্টান সমবায় সমিতিগুলো ভাল পরিচালিত হয় এর কারণ হলো খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় অনুশাসন’ বলে মন্তব্য করেন উপনিবন্ধক (প্রশাসন) নূর-ই-জান্নাত।
বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ সংঘের সহ-সভাপতি জেমস প্রদীপ বিশ^াস বলেন, বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রতি অনুরোধ ঢাকা ক্রেডিট অতীতে যেমন ভাল কাজ করেছে, তারাও সেই ধারা অব্যাহত রাখবে। ঢাকা ক্রেডিটে ৭৫টি প্রডাক্ট রয়েছে, আশা করি ঢাকা ক্রেডিটের নতুন বোর্ড ১০০টি প্রডাক্টে উন্নিত করবে এবং সেবা দিবে।
‘আজকের এই সুন্দর দিনে সকলকে সমবায়ী শুভেচ্ছা জানাই। কারণ আজকে বিশেষ একটি দিন। আজকে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ২২ জন ঢাকা ক্রেডিট পরিচালনা করবেন। নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটিকে হাউজিং সোসাইটির পক্ষে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে, বলেন দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:-এর চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন। তিনি যোগ করে বলেন, সব সমবায় সমিতি যদি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে তবে আমাদের সমাজে কোনো গরীব মানুষ থাকবে না। তিনি ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজের প্রশংসা করেন।
ন্যায় সত্য সুন্দর দলের মহাসচিব ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন ম্যানেজার নিপুন সাংমা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ঢাকা ক্রেডিটের নেতৃবৃন্দের মধ্যে সুশাসন বিদ্যমান। তাই আমি তাদের নেতৃত্বের প্রশংসা করি।
তেজগাঁও থানা সমবায় কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার বলেন, সদস্যরা ঢাকা ক্রেডিটকে নিজের মনে করেন তাই এই সমিতি দিন দিন উন্নতি করছে। নেতৃবৃন্দও দক্ষ ও আন্তরিক। সমিতির সদস্য ও নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানাই।
অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সমিতির ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলবার্ট আশিস বিশ্বাস। শেষ প্রার্থনা করেন পাস্টর তরুন চাম্বুগং।
তুমিলিয়া ক্রেডিট, মঠবাড়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, বিসিএ-এর মিরপুর শাখা, বৃহত্তর কুষ্টিয়া সমিতির নেতৃবৃন্দ নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট পংকজ ও নবনির্বাচিত কমিটিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
আর্থিক মূলধন ও সদস্যের মাপকাঠিতে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সমবায় সমিতি ঢাকা ক্রেডিট, যা ৬৪ বছর যাবৎ সততা, দক্ষতা ও দূরদৃষ্টির সাথে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। মূলত ঢাকা ক্রেডিট ‘দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা’ নামে সরকারের নিবন্ধিত একটি সমবায় সমিতি।
ঋণ দেওয়া-নেওয়ার পাশাপাশি এই সমিতির রয়েছে উল্লেখযোগ্য নানা প্রকল্প ও প্রডাক্ট। প্রক্রিয়াধীন ৩ শ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, আন্তর্জাতিকমানের চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টার, গেস্ট হাউজ, রিসোর্ট, সমবায় বাজার, জিম, ইংরেজি প্রশিক্ষণ ও আইইএলটিএস কোর্স, উচ্চশিক্ষার জন্য ছাত্রী হোস্টেল, বিউটি পার্লার এন্ড ট্রেনিং সেন্টার, নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ মোট ৭৫টি প্রকল্প ও প্রডাক্ট নিয়ে ঢাকা ক্রেডিটের কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে। কর্মপরিধি ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলা।
আলোকচিত্র: রবীন ভাবুক