শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের নারীবিষয়ক উপ-কমিটির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কর্মশালা
গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার মঠবাড়ী কুচিলাবাড়ী সংলগ্ন ঢাকা ক্রেডিট রিসোর্ট এন্ড ট্রেনিং সেন্টারে ৩০ সেপ্টেম্বর, শনিবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা ক্রেডিটের নারীবিষয়ক উপ-কমিটির ৫ম ত্রি-বার্ষিক কৌশলগত পরিকল্পনা (২০১৭-২০২০) বাস্তবায়ন কর্মশালা । কর্মশালার মূলসুর ছিল ‘আমরা পারব, আমরা গড়ব’।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট)-এর প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ, সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা বর্তমান বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, মহাসচিব ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, ক্লাব-এর সেক্রেটারি এমদাদ হোসেন মালেক, দি সিসিসিইউএল-এর নারীবিষয়ক উপ-কমিটির আহবায়ক পূর্ণিমা মারীয়া গমেজ, দি সিসিসিইউএল-এর অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী বৃন্দ এবং প্রায় ২০০ জন নারী সদস্য।
অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য ষ্টেলা হাজরা ও নারী বিষয়ক উপ-কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মঞ্জু মারীয়া পালমা। সকালে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর হয় আসন গ্রহণ ও এলাকাভিত্তিক পরিচিতি পর্ব। পরিচিতি পর্ব পরিচালনা করেন নারী বিষয়ক উপ-কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মার্সিয়া মিলি গমেজ।
স্বাগত বক্তব্যে উপ-কমিটির আহবায়ক পূর্ণিমা মারীয়া গমেজ বলেন, ‘আমরা আজ এখানে মিলিত হতে পেরে সত্যি অনেক আনন্দিত। আজকে আমরা নারীরা সবাই এখানে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দিনটি সাফল্য মন্ডিত করব। আপনাদের বুদ্ধি, পরামর্শ আজ এখানে উপস্থাপন করবেন যেন আমরা নারীরা ঢাকা ক্রেডিটের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।’
প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, ‘আজকের এই বোর্ড আপনাদের ভালোবাসার দান, আপনারা জানুয়ারির নির্বাচনে আমাদের সাথে ছিলেন বলেই শত মামলা পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করতে পেরেছি। তাই এই জয় আপনাদের। আপনাদের আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। কারণ, আমরা ২০২০ সালের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, সেখানে নারীদের অনেক কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আমরা মঠবাড়িতে ২২ বিঘা জমির ওপর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ করব এবং ডিসেম্বর মাসেই তার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হবে। আমরা ঢাকায় নদ্দায় নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক বিউটিশিয়ান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও হোস্টেল করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আমরা চাই নারীরা যেন শক্ত ভিত্তির ওপর নিজেদের দাঁড় করাতে পারে। এছাড়াও আমরা ২০২০ সালের মধ্যে সিকিউরিটি সেক্টরে ৪০০ জনের কর্মসংস্থান করব।’ তিনি আরো বলেন, ‘সবকিছুর জন্যই আপনাদের নৈতিক সমর্থন দরকার। আমাদের সামনে আরও যত বাধা বা চ্যালেঞ্জ আসবে, আমরা সেগুলো আপনাদের সাথে নিয়ে মোকাবেলা করতে চাই। আর আমরা আপনাদের সাথে নিয়েই এজিএম করতে চেয়েছিলাম; কিন্তু আমরা কেউই আইনের উর্ধ্বে নই। আমরা চেষ্টা করছি পরবর্তী থেকে আবারও আপনাদেরকে সাথে নিয়ে আগের মতো উৎসবমুখর পরিবেশে এজিএম করার।’
নির্মল রোজারিও বলেন, নারীরাই সবচেয়ে ভাল সদস্য। তাদের সার্বিক সহযোগিতা ছিল বলেই বর্তমান বোর্ড নির্বাচনে পরাজিত দলকে উপযুক্ত জবাব দেওয়া সম্ভব হয়েছে এবং সকল মামলাতে জয় লাভ করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘নারী সদস্যরা এক একজন সৈনিক। আর আমাদের লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। ঢাকা ক্রেডিটের অগ্রযাত্রাকে যারা বাধাগ্রস্ত করছে, আমরা সবই যেন তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।’
ভাইস প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ বলেন নারীরাই পারে আমাদের এই খেলাপী সংখ্যাকে কমিয়ে আনতে। তারা যদি সচেতন হয়, তাহলে তাদের স্বামীরা খেলাপী হবেন না। তাই তাদের প্রতি আহ্বান করছি, এক হয়ে আমাদের সাথে কাজ করার জন্য। ২০২০ সালের মধ্যে আমরা সমিতিকে যেই অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই, সেখানে পৌঁছানোর জন্য আমাদের পাশে থেকে অবশ্যই সহায্য সহযোগিতা করবেন।
নারী কমিটির সদস্যদের লক্ষ্য করে ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পঙ্কজ গিলবার্ট কস্তা বলেন, আপনাদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে আমরা সত্যি খুব আনন্দিত। আপনাদের সঠিক নেতৃত্বে আমাদের এই ক্রেডিট অনেক দূর এগিয়ে যাবে। নির্বাচন কালীন সময়ে আপনারা যে আমাদের পাশে ছিলেন তা বুঝা গেছে। একজন মা যেমন তার সন্তানদের গঠনে ভূমিকা পালন করেন, ঠিক তেমনিভাবে আপনাদের নেতৃত্বে আমাদের এই সমিতি আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। ‘যারা আমাদের সমিতিকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে তাদের আমাদের অফিসে নিয়ে আসুন, আমরা অফিস এ তাদের কথার জবাব দিব, আপনারা তাদের প্রতি এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিবেন।’
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন-এর মহাসচিব ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বলেন, আপনাদের একসাথে দেখতে পেয়ে আমরা অনেক বেশি আনন্দিত । বর্তমান বোর্ড বরাবরই নারী নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে, আপনারা এভাবেই সাথে থাকবেন এবং এজিএম নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তা অচিরেই সমাধান করবে এই বোর্ড । ‘আমরা আবারো আগের মতো একসাথে মিলিত হয়ে এজিএম করবো । আর যারাই দুর্নীতির সাথে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন । আমরা আপনাদের পাশেই আছি । বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন-এর ৫০ বছরের জুবলি অনুষ্ঠানে আপনাদের সকলের আমন্ত্রণ রইলো।’
ক্লাব-এর সেক্রেটারি এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট তাদের বাণিজ্যিক কর্মকান্ড নিয়ে যেভাবে এগিয়ে চলেছে, সেটি সত্যিই প্রশংসনীয়। আর সেই এগিয়ে যাওয়াতে নারীরা যৌক্তিক ভূমিকা পালন করছে। ঢাকা ক্রেডিটের করে যাওয়া নেতৃত্বের ফলে আজ কাল্ব এতটা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আপনারা নারীরা সবাই আমাদের পাশে থাকবেন যেন আমরা ফাঃ চার্লস জে ইয়ং-এর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারি।’
এ সময় উপস্থিত এক নারী সদস্য তার অনুভুতি সহভাগিতাকালে বলেন, ‘মা মারীয়া ছিলেন সাহসী একজন নারী। আমরা তাকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি আমাদের আদর্শ। এবারের ক্রেডিটের নির্বাচন নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল, আমরা সেই সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক প্রার্থনা করেছি আর ঈশ্বরের আশীর্বাদে আমরা জয় লাভ করেছি। আমি সকল নারীকে আহ্বান করব যেন তারা সামনের দিকে এগিয়ে আসেন। ক্রেডিটের উন্নয়নে আমরা নারীরা যেন বলিষ্ঠ ভূমিকা ও আদর্শ স্থাপন করতে পারি।’
এরপর দুপুরের আহার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই কর্মশালার আনুষ্ঠানিক সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
আরবি/আরপি/১ অক্টোবর, ২০১৭