শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের ৬১তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
সুমন কোড়াইয়া ॥ ঢাকা
দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট)-এর ৬১তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
৩ ডিসেম্বর তেজগাঁওয়ের বটমলী হোম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হওয়া এই বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক ড. মো: হারুন-অর-রশিদ বিশ্বাস, যুগ্ম নিবন্ধক মোঃ রিয়াজুল কবীর, উপ-নিবন্ধক (প্রশাসন) মোছা: নূর-ই-জান্নাত, দি সেন্ট্রাল
এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস (কাককো) লি: এর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এর চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন, দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ, ঢাকা’র সাবেক প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নির্বাহী সদস্য রেমন্ড আরেং, তেজগাঁও ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার সুব্রত বনিফাস গমেজ, খ্রীষ্টিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ডেভিড অনিল হালদার।
এছাড়াও মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলবার্ট আশিস বিশ্বাস , ট্রেজারার পিটার রতন কোড়াইয়া ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন টমাস রোজারিওসহ ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্যগণ।
বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা তাঁর স্বগত বক্তব্যে বলেন, ‘সদস্যদের সেবা প্রদানের নিমিত্তে ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমানে ১৭টি সঞ্চয়ী প্রোডাক্ট, ৩৪টি ঋণ প্রডাক্ট ও ৩৫টি সেবা ও প্রকল্পসহ সর্বমোট ৮৬টি প্রোডাক্ট ও সেবা নিয়ে ঢাকা ক্রেডিট ক্রমশই সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই মহাযজ্ঞের মাধ্যমে হাজারো সদস্যদের জীবনমানের উন্নয় ঘটেছে যার সুফল শুধু সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইতিমধ্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই ঢাকা ক্রেডিটের সেবা পাচ্ছে। ভবিষ্যতে যার ব্যাপ্তি নিঃসন্দেহে আরও প্রসারিত হবে।’
তিনি জানান, পূর্ব তেজতুরীবাজার তেজগাঁও ঢাকায় ১৪ শতাংশ জমি ক্রয় করা হয়েছে, সেখানে স্বপ্নের ঢাকা ক্রেডিট টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। তিনি ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষে বিগত এক বছর সদস্যদের অকাতরে সমর্থন ও সহযোগিতা দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
নতুন প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল একটি প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে পরিচালনা করা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমবায় সমিতিগুলোকে যৌথ উদ্যোগে কাজ করা, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নিজস্ব সফটওয়্যার এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, নিজস্ব জমিতে গরু মোটাতাজাকরণ ও গাভী পালন এবং মৎস চাষ ও ফলের চাষ। সমিতির সদস্যগণের প্রস্তাব ও সমর্থনে নতুন প্রস্তাবগুলো সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ও অনুমোদিত হয়।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এমপি ঢাকা ক্রেডিটের নেতৃবৃন্দের প্রশংসা করে বলেন, আমি ঢাকা ক্রেডিটের অগ্রগতি দেখে অবাক হই। বিশ্বাস, ভরসার ও বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে এই সমিতি দীর্ঘ ৬৬ বছর ধরে পথ চলছে। খ্রিষ্টানদের ভদ্রতা, সততা ও সমবায়ে তাঁদের আন্তরিকতা আমার ভালো লাগে।
সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বর্তমান সমবায় মন্ত্রণালয় সমবায়ীদের শুভাকাক্সক্ষী। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে চাই।
সাধারণ সভায় বক্তাগণ বলেন, সমবায় বান্ধব আইন প্রয়োজন। যেন সদস্যরা উপকৃত হন। এছাড়া সমবায় সম্পর্কে জানার জন্য স্কুল-কলেজে পাঠ্য পুস্তকে তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বক্তাগণ ঢাকা ক্রেডিটের ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগকে প্রশংসা করেন। তারা বলেন, ঢাকা ক্রেডিটের সময় উপযোগী একটি পদক্ষেপ এটি।
সকাল দশটায় শুরু হওয়া বার্ষিক সাধারণ সভা বিকাল ৫টা বাজার ৫ মিনিট আগেই শেষ হয়ে যায়। বার্ষিক সাধারণ সভা সঞ্চালনা করেন সমিতির সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া।
বার্ষিক সাধারণ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের বোর্ড অব ডিরেক্টর: সজল যোসেফ গমেজ, পল্লব লিনুস ডি’রোজারিও, সলোমন ইগ্নেসিয়াস রোজারিও, মনিকা গমেজ, প্রত্যেশ রাংসা, পাপড়ি প্যাট্রিশিয়া আরেং, আনন্দ ফিলিপ পালমা ও পাপিয়া রিবেরূ। ক্রেডিট কমিটির চেয়ারম্যান সুকুমার লিনুস ক্রুশ, সেক্রেটারি জনি এস. গমেজ, সদস্য লরেন্স পিটার গমেজ, অন্তর মানখিন ও উমা ম্যাগডেলিন গমেজ, সুপারভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যান জন গমেজ, সেক্রেটারি প্রিয়ন্ত সি. কস্তা, সদস্য বার্নার্ড পংকজ ডি’রোজারিও, মাধবী অনিতা গমেজ ও ষ্টেলা হাজরা।
সমিতির উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. বেনেডিক্ট আলো ডি’রোজারিও, নিপুন সাংমা, পাস্টর আনোয়ার হোসেন, ডা. রবার্ট ডি’ক্রুজ, প্রদীপ সরকার, জেমস সুব্রত হাজরা, জোনাস বটলেরু, পল মিস্ত্রি, মিল্টন বাড়ৈ, দীলিপ ফিলিপ রোজারিও, সাইমন গমেজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্মল রোজারিও, রঞ্জন এডুয়ার্ড রোজারিও, পিটার রতন গমেজ, রবার্ট সাইমন গমেজ, মেরিলিন গমেজ, যোসেফ নির্মল গমেজ, অনিল লিও কস্তা, অমল আগষ্টিন গমেজ, শান্তি কোড়াইয়া, পুষ্প কলেটা গমেজ প্রমুখ উপদেষ্টাগণ।
অন্যান্য সমবায় সমিতি ও সংস্থার নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক সেবাষ্টিয়ান রোজারিও, জাতীয় ওয়াইএমসিএ’র প্রেসিডেন্ট জনি হিউবার্ট রোজারিও, বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ সংঘের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেমস প্রদীপ বিশ^াস, মঠবাড়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান সুরেন রিচার্ড গমেজ, ঢাকা খ্রীষ্টিয়ান বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি ডা. বিনয় গোস্বামী, ধরেন্ডা খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট উজ্জ্বল শিমন রোজারিও, সেক্রেটারি বিকাশ পলিনুস কোড়াইয়া, হারবাইদ খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের চেয়ারম্যান পবিত্র ফ্রান্সিস কস্তা, আঠারগ্রাম খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের চেয়ারম্যান জন পিরিচ, তুইতাল খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের ভাইস-চেয়ারম্যান নির্মল ডি’রোজারিও, সেক্রেটারি অঞ্জলি দেছা, নয়নশ্রী খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের ভাইস-চেয়ারম্যান খ্রিষ্টফার দেছা, হাসনাবাদ খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের চেয়ারম্যান রাজু নিকোলাস কোড়াইয়া, তেজগাঁও মেট্রোপলিটান থানা সমবায় কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো: রেজাউল বারী প্রমুখ।
ঢাকা ক্রেডিটের বার্ষিক সাধারণ সভার শুরুতে জাতীয়, সমবায়ী ও সমিতির পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং জাতীয় ও সমবায় সংগীত গাওয়া হয়। অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল উপস্থিতি গণনা, আসন গ্রহণ, পবিত্র বাইবেল পাঠ ও প্রার্থনা, মৃত সদস্যদের কল্যাণে নিরবতা পালন, প্রামাণ্যচিত্রসহ ৬০তম বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন, প্রামাণ্যচিত্রসহ ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক বার্ষিক কার্যক্রম প্রতিবেদন পেশ ও অনুমোদন, বার্ষিক হিসাব বিবরণী পেশ ও অনুমোদন, ক্রেডিট ও সুপারভাইজরি কমিটির প্রতিবেদন পেশ ও অনুমোদন ইত্যাদি।
বার্ষিক সাধারণ সভার একাংশে ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেন ঢাকা ক্রেডিটের কালচারাল একাডেমির শিল্পী ও ঢাকা ক্রেডিটের কর্মীবৃন্দ। এই সময় উপস্থাপনায় ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের কর্মী রিচার্ড ফ্রান্সিস রোজারিও ও চম্পা মনিকা গমেজ।
শেষে ছিল কোরাম পূর্তি ও সাধারণ লটারী পর্ব। এই সময় উপস্থাপনায় ছিলেন সুপারভাইজরি কমিটির সেক্রেটারি প্রিয়ন্ত সি. কস্তা ও ক্রেডিট কমিটির সদস্য অন্তর মানকিন।
ঢাকা ক্রেডিট দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম একটি স্বনামধন্য সমবায় প্রতিষ্ঠান। এই সমিতি প্রান্তিক সদস্যদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সদস্যরা এই সমিতি থেকে স্বল্পসুদে ঋণ নিয়ে উৎপাদন মুখী কার্যক্রম করছে।
১৯৫৫ সালে যাত্রা করা ঢাকা ক্রেডিটের বর্তমানে প্রায় ৪৩ হাজার সদস্যের সাড়ে ৯ শ কোটি টাকার ওপর সম্পদ-পরিসম্পদ রয়েছে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ কর্ম এলাকা হলেও দেশের আপমর জনগণ ঢাকা ক্রেডিটের সেবা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
ঢাকা ক্রেডিটের বর্তমানে মেগা প্রকল্প গাজীপুরের মঠবাড়ীতে ৩শ বেডের ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কাজ চলমান রয়েছে এবং ২০২২ সালের মধ্যেই এই হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হবে। হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে ৫৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
এ ছাড়াও ঢাকা ক্রেডিটের সর্বসাধারণের জন্য রয়েছে স্কুল, আন্তর্জাতিকমানের চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টার, বিউটি পার্লার ও ট্রেনিং সেন্টার, জিম, সমবায় বাজার আউটলেট ও কালচারাল একাডেমি। তাছাড়া ঢাকা ক্রেডিট মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, এটিএম, ইনস্ট্যান্ট লোন, উদ্যোক্তা ঋণসহ আরো অনেক প্রডাক্ট ও প্রকল্পের মাধ্যমে সদস্যদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
ঢাকা ক্রেডিটের মাধ্যমে প্রায় ৬শ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যা বেকারত্ব দূরীকরণের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।
ছবি: রবীন ভাবুক, সুবীর ডি’ক্রুশ