শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের ৬২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন : ১৯৫৫ থেকে ২০১৭
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) ঢাকার তেজগাঁও চার্চ কমিউনিটি সেন্টারে ৬২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করে। ১৫ জুলাই, শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় এই তাৎপর্যপূর্ণ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেত্রী তথা সাবেক সংসদ সদস্য কবরী সারোয়ার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস (কাককো) লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গমেজ, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন এবং হেল্প বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক রেভারেন্ড ডেভিড অনিল হালদার।
রঙবেরঙের বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়। সভাপতি, প্রধান অতিথি কবরী সারোয়ারসহ সকল অতিথি, ঢাকা ক্রেডিটের কর্মকর্তা, সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, উপদেষ্টা, প্রাক্তন কর্মকর্তা, নারী কমিটির প্রতিনিধি, বিভিন্ন সমিতির প্রতিনিধি ও কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ৬২টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন। সমিতির সকল কর্মকর্তা, উপদেষ্টা, শুভানুধ্যায়ী, সদস্যসহ প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বাবু মার্কুজ গমেজ তার সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকা ক্রেডিটের বিরতিহীন উন্নয়নের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ঢাকা ক্রেডিটকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা দরকার। প্রামান্যচিত্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘এই প্রামান্যচিত্রই আমাদের বাস্তবতা। এখান থেকেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ত্রি-বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার ও বাস্তবায়ন বোঝা যায়।’
ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠার ৬২ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বাবু মার্কুজ গমেজ সমিতির পরলোগত সকল বোর্ড কর্মকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানান ও গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। যাঁরা ২৫ টাকার প্রতিষ্ঠানকে ৫০০ কোটির টাকার প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছেন, তাদের তিনি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। তিনি ২০১৪-২০১৭ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদ এবং বর্তমান বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মীদের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি নারী-পুরুষ সবার ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপমহাদেশের কিংবদন্তী অভিনেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য কবরী সারোয়ার বলেন, সর্বক্ষেত্রে নারীদের অবদান রয়েছে। একজন মা-ই পারেন ভাল জাতি গড়তে। এ জন্য মায়েদের তাদের সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ানোর ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নারীদের সম্মাননা প্রদান করার জন্য ঢাকা ক্রেডিটকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি ঢাকা ক্রেডিটের বিভিন্ন কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
কাক্কোর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও বলেন, দেশের উন্নয়নে ঢাকা ক্রেডিট সামনে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। তাই ঢাকা ক্রেডিটকেই দেশের অন্যান্য কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নগুলো অনুসরণ করছে।
রেভা. ডেভিড অনিল হালদার বলেন, খ্রীষ্টান মিশনারীদের ত্যাগ ও অবদানের কারণেই খ্রিষ্টান প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি হয়েছে এবং হচ্ছে। ঢাকা ক্রেডিটের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। ফাদার চার্লস জে ইয়াং-এর নেতৃত্বেই ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠা ও অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। হালদার এই অগ্রযাত্রাকে গতিশীল রাখার আহ্বান জানানএবং ঢাকা ক্রেডিটের উত্তরোত্তর উন্নতি কামনা করেন।
দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এর চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশনের স্থলে সেক্রেটারি ইম্মানুয়েল বাপ্পী মন্ডল তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, প্রামান্যচিত্রে ঢাকা ক্রেডিটের উন্নয়নের যে ধারা প্রদর্শিত হয়েছে তা সদস্যদের কাছে উৎসাহব্যঞ্জক। এই গতিকে অব্যাহত রাখার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টজনদের আহ্বান জানান এবং সাফল্যময় কার্যক্রমের জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটিকে অভিনন্দন জানান।
সমাজে নানা অবদানের জন্য বর্ষপূর্তির এই অনুষ্ঠানে ১৫ জন নারী ও মাকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। প্রধান অতিথির হাত থেকে তাঁরা এই স্মরক গ্রহণ করেন। ঢাকা ক্রেডিট তাঁদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য যেমন- শিক্ষা ও সমাজসেবায় মমতা আরেং; সমাজসেবা, সমবায় ও লেখালেখির জন্য হেলেন রোজারিও; শিক্ষা ও সমাজসেবায় দীপ্তি ডি’কস্তা; সমাজ ও স্বাস্থ্যসেবায় বাসন্তী তেরেজা রিবেরু; শ্রেষ্ঠ সমবায়ী হিসেবে পলিন গমেজ; আধ্যাত্মিক সংগঠক হিসেবে মারীয়া গমেজ; উন্নয়নকর্মী ও সংগঠক হিসেবে মঞ্জু মারিয়া পালমা; রাজনীতি ও সমাজসেবায় কল্পনা মারীয়া ফলিয়া; সমাজসেবায় শিশিলিয়া গমেজ; সমাজসেবা ও উন্নয়নকর্মী হিসেবে সিসিলিয়া রোজারিও; স্বাস্থ্যসেবায় মমতা অধিকারী; সাংবাদিকতায় ফিলোমিনা অরুণা গোমেজ; সমাজসেবায় শান্তি কোড়াইয়া; পুলিশ কর্মকর্তা হিসেব লিমা চিসিম ও ব্যাংকার হিসেবে ম্যাগডেলিন দেশাইকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে ছিল ঢাকা ক্রেডিটের ৬২ বছরের বর্ষপূর্তির উদ্বোধন, ঢাকা ক্রেডিটের কালচারাল একাডেমির শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশন, প্রারম্ভিক প্রার্থনা, সমিতির ৬২বছরের কার্যক্রমের ওপর প্রামান্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে সমিতির বিভিন্ন ত্রি-বার্ষিক মেয়াদের কর্মপরিকল্পনার ও লক্ষ্য অর্জনগুলোর প্রদর্শন, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, অতিথিদের আসন গ্রহণ, অতিথিদের ফুলের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন, নারী কমিটির সদস্য কর্তৃক আবৃত্তি-গান পরিবেশনা, কেক কাটা, নারী ও মা’দের সম্মাননা প্রদান, প্রধান ও বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য, প্রধান অতিথিকে ক্রেস্ট প্রদান এবং সমাপনী প্রার্থনা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা।
আরপি/আরবি/১৫ জুলাই, ২০১৭