শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
সুমন কোড়াইয়া || ঢাকা
একটি চারা রোপিত হয়েছিল ৬৫ বছর আগে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে। সেটি দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট)। প্রতিষ্ঠানটি আজ বিশাল মহিরূহে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর এই সমবায় প্রতিষ্ঠানটির আজ জন্মদিন; ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ উপলক্ষে করোনার মহামারি থাকার কারণে বড় কোনো অনুষ্ঠান হাতে নেওয়া হয়নি ঢাকা ক্রেডিটের পক্ষ হতে। ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর তেজগাঁও গির্জায় পবিত্র খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন তেজগাঁও ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত সুব্রত বি গমেজ।
খ্রিষ্টযাগের উপদেশ বাণীতে ফাদার সুব্রত বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো একক ব্যক্তির কোনো স্বার্থের জন্য নয়, বরং গোটা খ্রিষ্টান সমাজের মঙ্গলের জন্য। ঢাকা ক্রেডিটের মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান যেমন সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি আমাদের সমাজে খ্রিষ্টান নেতৃত্বও তৈরি হচ্ছে।’ সমিতির নানা সেবা ও সমাজ কল্যাণমূলক কার্যক্রমের উল্লেখ করে তিনি ঢাকা ক্রেডিটে অবদানের জন্য প্রশংসা করেন।
ফাদার সুব্রতর উপদেশের অডিও শুনুন এখানে:
দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভস্ লিমিটেডের চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও ঢাকা ক্রেডিটের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বলেন, ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলন বেগবান হয়। তিনি ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালনা ও সদস্য হিসেবে যাঁরা জড়িত ছিলেন এবং প্রয়াত হয়েছেন তাঁদের সকলকে স্মরণ করেন। তাঁদের আত্মার মঙ্গল কামনা করেন। ঢাকা ক্রেডিটের আরো সমৃদ্ধি কামনা করেন।
নির্মল রোজারিওর বক্তব্যের অডিও শুনুন এখানে:
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা সমিতির জন্মদিন উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা জানানিয়ে বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিটের একটি শ্লোগান আছে, আমরা গর্বিত আমাদের পূর্ব পুরুষদের কৃতিত্বে। সুদীর্ঘ পথ চলায় ঢাকা ক্রেডিটে যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন, সেই কৃতীমান ব্যক্তিদের আজ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।’
পংকজ গিলবার্ট কস্তার বক্তব্যের অডিও শুনুন এখানে:
পবিত্র খ্রিষ্টযাগের পর ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা হলিক্রস মিশনারী ফাদার চালর্স যোসেফ ইয়াংয়ের কবরে সমিতির পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
ঢাকা ক্রেডিটে যেসব ব্যক্তি কর্মকর্তা হিসেবে সেবা দিয়েছেন এবং মারা গেছেন তাদের নাম পাঠ করেন ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি হেমন্ত ইগ্নাসিওস কোড়াইয়া। তাঁরা হলেন (তেজগাঁও গির্জার কবরে যাদের কবর): ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চালর্স যোসেফ ইয়াং সিএসসি, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডানিয়েল কোড়াইয়া. প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট টি ডি রোজারিও, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অরুণ বার্নার্ড কস্তা, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক গাব্রিয়েল মানিক গোমেজ, প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট আরনল্ড সি গোমেজ, প্রাক্তন সেক্রেটারি খ্রীষ্টফার গমেজ, প্রাক্তন সেক্রেটারি এন্ডু ডি’কস্তা, প্রাক্তন সেক্রেটারি রবীন রোজারিও, প্রাক্তন ম্যানেজার জন পি কস্তা, প্রাক্তন ট্রেজারার আইজাক গমেজ, প্রাক্তন ট্রেজারার স্ট্যানলী টেনু গমেজ, প্রাক্তন ডিরেক্টর আলেকজান্ডার রোজারিও, প্রাক্তন ক্রেডিট কমিটির সেক্রেটারি কাথবার্ট পিরিছ।
ওয়ারী খ্রিষ্টান কবরস্থান ও অন্যান্য কবরস্থানে ঢাকা ক্রেডিটের যেসব কর্তকতাদের সমাহিত করা হয়েছে তাঁদের নামও পাঠ করা হয়। তারা হলেন: প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জোনাস রোজারিও, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পিটার পল গমেজ, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পিটার এম কস্তা, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট লাফন্ড গমেজ, প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট যোসেফ এইচ কস্তা, প্রাক্তন সেক্রেটারি আন্দ্রেজ গমেজ, প্রাক্তন সেক্রেটারি যাখারিয়াস কস্তা, প্রাক্তন সেক্রেটারি স্কলাষ্টিকা সুনীলা কস্তা, প্রাক্তন সেক্রেটারি রাফায়েল জে কোড়াইয়া, প্রাক্তন ম্যানেজার সিরিল রোজারিও, ও প্রাক্তন ক্রেডিট কমিটির চেয়ারম্যান ইগ্নাসিয়াস এ গমেজ মনুসহ প্রাক্তন কর্তকর্তা, উপদেষ্টা ও সদস্য। মৃত এই সব সমবায় নেতাদের আত্মার কল্যাণে প্রার্থনা করেন ফাদার সুব্রত বি গমেজ।
প্রসঙ্গত, ১৯৫৫ সনের ৩ জুলাই, হলিক্রস মিশনারি ফাদার চালর্স যোসেফ ইয়াং লক্ষ্মীবাজারে ৫০ জন সদস্য এবং ২৫ টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করেন ঢাকা ক্রেডিট। বর্তমানে এই সমিতির সদস্য প্রায় ৪৩ হাজার এবং মূলধন প্রায় আট শ কোটি টাকা। দেশের চারটি জেলায় এই সমিতির কার্যক্রম বিস্তৃত। ঢাকা ক্রেডিটের প্রধান কার্যালয়সহ রয়েছে ১৮টি সেবাকেন্দ্র ও কালেকশন বুথ। ঋণ, সঞ্চয়, সেবা ও নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ও পডাক্টের পরিমান ৭৭টি। এই সমিতির প্রকল্পেগুলোর মধ্যে রয়েছে সমবায় বাজার, ডিসি চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টার, রিসোর্ট, মিডিয়া ও পাবলিকেশনস বিভাগ, নির্মানাধীন ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল, বিউটি পার্লার, জিম, স্কুল ইত্যাদি। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইতিমধ্যে সাত শ’রও অধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
ঢাকা ক্রেডিটের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশিষ্টজনদের শুভেচ্ছা