ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ঢাকা ক্রেডিট ঢাকা ক্রেডিটে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন

ঢাকা ক্রেডিটে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন

0
398

‘এ সময় এখন নারীর : উন্নয়নে তারা বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহর কর্ম জীবনধারা’ শ্লোগানে পালিত হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৮।

শনিবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা ক্রেডিটের বি.কে. গুড কনফারেন্স হলে তিন শতাধিক নারীর উপস্থিতিতে এই দিবস উদযাপন করা হয়।

ঢাকা ক্রেডিটের কালচারাল একাডেমির নৃত্যশিল্পদের ‘ফাগুন হাওয়ায় করিছে যে দান’ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নারী দিবস। প্রারম্ভেই বাইবেল পাঠ করেন নারীবিষয়ক উপ-কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব সীমা জেনেবি রোজারিও। সার্বজনীন প্রার্থনা করেন নারীবিষয়ক উপ-কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মঞ্জু মারিয়া পালমা।

এই অনুষ্ঠানে নেতৃস্থানীয় পুরুষগণ যেমন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ, সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা, ট্রেজারার বিপুল লরেন্স গমেজ, কাককোর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন সেক্রেটারি তথা বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই. কোড়াইয়া নারী কমিটির সদস্যদের এবং প্রধান অতিথিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এর পর প্রদীপ প্রজ্বালন করেন প্রধান ও বিশেষ অতিথিসহ ঢাকা ক্রেডিটের নারীবিষয়ক উপ-কমিটির আহবায়ক পূর্ণিমা মারিয়া গমেজ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, ‘আমার আজকের এই অস্তিত্ব নারীর কারণে। নারী দিবসে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ আবশ্যক।’ তিনি বলেন, ‘আগামী বছর আরো বড় পরিসরে নারী দিবস পালন করা হবে। ঢাকা ক্রেডিটে নারীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। গারো মেয়েদের স্বাবলম্বী হবার জন্য নদ্দায় বিউটি পার্লারের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের স্বল্পসুদে ঋণ দিচ্ছি।’ এ সময় তিনি নারীদের সকল কাজের অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানান।

ঢাকা ক্রেডিটের নারীবিষয়ক উপ-কমিটির আহবায়ক পূর্ণিমা মারীয়া গমেজ তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘নারী ঈশ্বরের অপূর্ব সৃষ্টি। ঢাকা ক্রেডিট নারী উন্নয়নে জোর দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। নারীদের সাবলম্বী করার জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ, কনফেকশনারী প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের সুবিধা সৃষ্টি করে যাচ্ছে।’ এ সময় তিনি সংক্ষেপে নারী দিবসের ইতিহাস তুলে ধরেন। পুরনো ও পুরুষতান্ত্রিকতার মনোভাব বাদ দিয়ে নারীদের নতুন সমাজ গঠনের আহ্বান জানান।

নারী দিবসের প্রধান বক্তা ব্যারিস্টার ফৌজিয়া আক্তার পপি বলেন, ‘বর্তমানে নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের দিক থেকে পূর্বের থেকে অনেক বেশি সচেতন হচ্ছে। নারীরা প্রমান করেছে যে তারা সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার যোগ্যতা রাখে। বাংলাদেশে নারীরা অবহেলা ও বঞ্ছনার শিকার হওয়ার পরও উন্নয়নের গতিকে অব্যাহত রেখেছে।’ তিনি উত্তরাধিকার সম্পত্তির বিষয়ে বলেন, ‘হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান সমাজে নারীদের সম্পত্তির অধিকার সামাঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ ক্ষেত্রে নারীদের সম-অধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশের সকল আইন প্রণেতা পুরুষ। তারা আইন প্রণয়ন করার সময় কখনো কোনো নারীর মতামত নেয় না।’

‘ধর্ষিতা নারীরা আইনগত সহায়তা চাইলে সেখানে তারা আরো বেশি অপমানিত হয়। এ ছাড়াও নারীদের সন্তান জন্মদানের স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন’ বলেন ব্যারিস্টার পপি।

কালচারাল একাডমির নৃত্যশিল্পীরা ‘জাগো নারী জাগো বহ্নি শিখা’ গানের তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করে।

এরপর শুরু হয় কুইজ প্রতিযোগিতা। নারী বিষয়ে দশটি প্রশ্ন করা হয়। যারা সঠিক উত্তর দিতে পেরেছেন, তাদেরকে সমবায় গিফট ভাউচার পুরস্কার প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে নারী উপ-কমিটির সকল সদস্য মিলে ‘ধন্য ধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানটি পরিবেশন করেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের নারী কবিতার উদ্বৃত্তি দিয়ে বলেন, ‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ ‘নারীরা আজ অনেক এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, গার্মেন্টস শিল্পে নারীদের অবদান ৯০ শতাংশ,’ বলেন সেক্রেটারি কস্তা।

‘২০০৮ সাল থেকে ঢাকা ক্রেডিট নারী দিবস পালন করে আসছে। সেখান থেকেই পরিবর্তন হচ্ছে ঢাকা ক্রেডিটের সাথে সংশ্লিষ্ট নারীদের। নারীরা আমাদের মূল শক্তি। আমাদের অগ্রযাত্রার সঙ্গী।’ আগামীতে ‘মা দিবস’ আরো গুরুত্বের সাথে পালন করা এবং সেই সাথে ‘বাবা দিবস’ পালন করতে নারীদের সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও।

বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া বলেন, ‘সাড়া বিশ্বে নারীরা এগিয়ে আছে, বর্তমানে খ্রিষ্টান নারী সচিব হয়েছে।’ এ সময় তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে আরো গুরুত্বের সাথে নারীদের সম্পৃক্ততার আহ্বান জানান।

ঢাকা ক্রেডিটের নারীবিষয়ক উপ-কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মার্সিয়া মিলি গমেজ বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিটের সবচেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে নারী কমিটি। সর্বক্ষেত্রেই নারীর প্রয়োজন আছে। যিশুর মৃত্যুর সময় তাঁর পাশে ছিলেন নারী, যিশুর পুনরুত্থানের প্রথম সাক্ষী ছিলেন নারী।’

ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ বলেন, ‘নারী হচ্ছে মা, বোন, কণ্যা, গর্ভধারিণী, মততাময়ী ও স্নেহময়ী মা।’ এ সময় তিনি এই সুন্দর অনুষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের ট্রেজারার বিপুল লরেন্স গমেজ, ডিরেক্টর পাপিয়া রিবেরু, রতন পিটার কোড়াইয়া, সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য তথা নারীবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ষ্টেলা হাজরাসহ আরো অনেকে।

এ ছাড়াও বিগত বড়দিনের কীর্তন প্রতিযোগিতায় নারী-উপকমিটির অংশগ্রহণকারী নারীদের পুরস্কার হিসেবে সমবায় বাজরের গিফট ভাউচার তুলে দেন প্রধান ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের সুপারভাজরি কমিটির সদস্য তথা নারী কমিটির সদস্যসচিব ষ্টেলা হাজরা। সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন নারীবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য চম্পা মনিকা গমেজ। নারীবিষয়ক উপকমিটির সদস্য সিসিলিয়া রোজারিওর শেষ প্রার্থনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।