শিরোনাম :
ঢাকা খ্রীষ্টিয়ান বহুমুখী সমবায় সমিতির ৩৭তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
ডিসিনিউজ || ঢাকা
অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঢাকা খ্রীষ্টিয়ান বহুমুখী সমবায় সমিতির ৩৭তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। তেজগাঁয়ের বটমলী হোম অর্ফানেজ টেকনিক্যাল স্কুল প্রঙ্গণে আজ ৬ মার্চ সমিতির প্রেসিডেন্ট প্রদীপ সরকারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সমবায়ের ঢাকা বিভাগের যুগ্ম নিবন্ধক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথিদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা, দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চের সহ-সভাপতি জেমস প্রদীপ বিশ্বাস এবং ঢাকা জেলা সমবায় কর্মকর্তা জহিরুল হক।
সমিতির প্রেসিডেন্ট প্রদীপ সরকার তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘বর্তমানে সমবায় সমিতিগুলো শুধু ঋণ দেওয়া-নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, আয়মূলক প্রকল্পে বিনিয়োগ করা এই সমিতিতে একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করি।’
তিনি উল্লেখ করেন, খেলাপি ঋণ আদায় বা হালনাগাদ করার ব্যাপারে নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও অনেক সদস্যকেই ঋণখেলাপি এবং অনিয়মিত হদে দেখা যাচ্ছে। বাস্তবতা হলো- ঋণ গ্রহীতা ও জামিনদাররা সচেতন না হলে শুধু সমিতির পক্ষে ঋণখেলাপি কমিয়ে আনা খুবই কঠিন।
সমবায়ের ঢাকা বিভাগের যুগ্ম নিবন্ধক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, খ্রিষ্টানদের দ্বারা পরিচালিত সমবায় সমিতিগুলো নিয়ম মেনে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে, তাই তাদের ধন্যবাদ জানাই।
আজকের বার্ষিক সাধারণ সভায় সদস্যদের অংশগ্রহণ খুব ভালো উল্লেখ করে ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবাট কস্তা বলেন, সমবায় সিমিতিগুলোতে ঋণখেলাপি ও মামলা বড় সমস্যা । তিনি আরো বলেন, গতানুগতিক ঋণ দিয়ে বর্তমানে সমবায় সমিতি পরিচালনা এখন সম্ভব নয়। তাই উৎপাদনমুখী খাতে ঋণ দিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, বিনিয়োগের কারণে কর্মসংস্থান যেমন হবে, তেমনি সমাজের উন্নয়নও হবে। তিনি ঋণখেলাপি রোধে কাককোর যে সফটওয়্যার রয়েছে তা ব্যবহারের আহ্বান জানান। এ ছাড়া তিনি ঋণ গ্রহণের জন্য মিথ্যা তথ্য না দিয়ে সঠিক তথ্য দেওয়ার অনুরোধ করেন, তাহলে ভবিষ্যতে কার্যকরভাবে ঋণখেলাপি রোধ হবে বলে মনে করেন। তিনি আগামীকাল (৭ মার্চ) ঢাকা ক্রেডিট যে নারী দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছে, সেখানে বহুমুখী সমিতির নারী সদস্যদের আমন্ত্রণ জানান।
দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও বলেন, সমিতিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে চেষ্টা করছেন ঢাকা খ্রীষ্টিয়ান বহুমুখী সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা। তারা ত্রি-বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, নতুন নতুন প্রডাক্ট হাতে নিচ্ছেন- এটা আমার ভালো লেগেছে। আশা করি তারা সফল হবেন। তিনি সমিতির কর্মকর্তা-সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘ঋণ যেমন উন্নয়নে সাহায্য করে, তেমনি ধ্বংসও করতে পারে। তাই যারা ঋণ নিবেন, তারা ভেবে-চিন্তে নিবেন। কর্মকর্তাদের অনুরোধ করি, সদস্যদের ঋণ সঠিকভাবে ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিবেন।’
তিনি আরো বলেন, সমবায় সমিতির মূল লক্ষ্য হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। টেকসই উন্নয়নের জন্য সমিতিতে সময়উপযোগী প্রডাক্ট প্রচলন করতে হবে।
ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, ‘সমবায় সমিতির মধ্যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ঋণখেলাপির কারণে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে সমবায় সমিতি। সমিতিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা আরেকটি চ্যালেঞ্জ।’ তিনি মনে করেন, সমবায় সমিতিতে নারীদের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে যেন তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখতে পারে।
ঢাকা জেলা সমবায় কর্মকর্তা জহিরুল হক গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস যোসেফ ইয়াং এবং ঢাকা খ্রীষ্টিয়ান বহুমুখী সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সিতাংশু সেন। তিনি বলেন, খ্রিষ্টান সমাজের সমবায়ের কিছু বিপথগামী সদস্যের সাংঘর্ষিক আচরণ উল্লেখ করে বলেন, ঢাকা খ্রীষ্টিয়ান বহুমুখী সমবায় সমিতি যখন সাধারণ সদস্যদের নিয়ে এজিএম করে, তখন তারা আমাদের নিকট অভিযোগ করেন কেন প্রতিনিধির মাধ্যমে এজিএম হয় না। আবার ঢাকা ক্রেডিট যখন প্রতিনিধির মাধ্যমে এজিএম করে, তখন অভিযোগ করেন, কেন সকল সদস্য নিয়ে এজিএম হয় না। এই মামলাবাজরা সমাজের ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। তাদের নিকট থেকে সাবধান থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চের সহ-সভাপতি জেমস প্রদীপ বিশ্বাস সমিতির কর্মীদের মধ্যে পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি করার প্রস্তাব রাখেন। যেসব ঋণ সুপারিশের প্রেক্ষিতে দেওয়া হয়, সেগুলো বেশি ঋণখেলাপি হয়ে থাকে বিধায় এই ধরনের ঋণ প্রদান থেকে বিরত থাকারও পরামর্শ দেন।
ঢাকা খ্রীষ্টিয়ান বহুমুখী সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় ৩০ আগস্ট ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে। সমিতির সদস্য প্রায় ১৫ হাজার এবং সম্পদ-পরি-সম্পদদের পরিমাণ ৭৩ কোটি টাকারও বেশি।