শিরোনাম :
তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে আসছেন পোপ ফ্রান্সিস
অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফরের দিনক্ষণ ঘোষণা দিল বাংলাদেশ কাথলিক মন্ডলীর নিতীনির্ধারকরা। ঢাকার কাকরাইলে আর্চবিশপ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
সোমাবার (২৮ আগস্ট) দুপুর ২টায় কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি, ভাতিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী, ঢাকার সহকারী বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ, ভাতিকান অ্যাম্বাসীর সেক্রেটারি লুকা মারাবেজে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্বের কাথলিকদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিসের আসার প্রস্তুতি, দিনক্ষণ, সফরসূচি, মূলভাব এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পোপ ফ্রান্সিস ৩০ নভেম্বর, ২০১৭ বাংলাদেশে আসবেন এবং তিনদিন তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। তার সফরের সম্ভাব্য কর্মসূচি হলো, আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পোপ ফ্রান্সিসকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বরণ, জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন, বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে সাক্ষাৎ, বাংলাদেশ সরকারে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ, সারা দেশের খ্রিষ্টবিশ্বাসীর জন্য আয়োজিত খ্রিষ্টযাগ অর্পন এবং ছয়জন ডিকনকে যাজকাভিষেক প্রদান, কার্ডিলান, আর্চবিশপ এবং বিশপদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ, নাগরিক সমাবেশ, বিভিন্ন ধর্ম ও চার্চের প্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি এবং সুশীল সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে আন্তঃধর্মীয় এবং আন্তঃমান্ডলিক সমাবেশ, কাথলিক মন্ডলীর দ্বারা পরিচালিত সেবাগৃহের দুস্থ, প্রতিবন্ধী, অসুস্থ, মাদকাসক্ত ও অনাথদের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ, ধর্মযাজক, সন্ন্যাসব্রতীদের ভবিষ্যৎ কতিপয় প্রার্থীদের সাথে সাক্ষাৎ, চার্চের যুব সমাজের প্রতিনিধি এবং চার্চ পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষারত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকমন্ডলীর প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পোপ ফ্রান্সিসের সফরের দুটি দিক রয়েছে। একটি দিক হলো, ভাতিকানের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন এবং অন্যটি হলো কাথলিক মন্ডলীর প্রধান ধর্মগুরু ও প্রধান পালক হিসেবে খ্রিষ্টান সমাজের কাছে পালকীয় সফর করবেন।
পোপ ফ্রান্সিসের আগমন উপলক্ষে বাংলাদেশ কাথলিক মন্ডলী ‘সম্প্রীতি ও শান্তি’ মূলভাব গ্রহণ করেছে। এই মূল ভাবকে ঘিরে পোপের সফরে তিনটি দিক বাংলাদেশ মন্ডলী গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। (১) পোপ একজন ধর্মগুরু হিসেবে বাংলাদেশে তাঁর আগমন খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা দেখছে অন্তরে তীর্থযাত্রারূপে (২) তাঁর আগমনে অনুভব হবে পরম করুণাময় প্রভু যেমন, পোপও তেমন বাংলাদেশের দীনজনদের ভালবাসেন, তাঁর ভালবাসায় বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেয় (৩) তাঁর আগমনে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র মেষদলের প্রতি পূণ্যপিতা পোপের ভালবাসা ও যত্ন ব্যক্ত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পোপের আগমন উপলক্ষে ‘সম্প্রীতি ও শান্তি’ মূলভাবে লোগো উন্মোচন করেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক এবং আর্চবিশপ কোচেরী।
গত বছর মার্চ মাসে বাংলাদেশ বিশপ কাথলিক সম্মিলনী পোপ ফ্রান্সিসকে পালকীয় সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত বছরই পোপ ফ্রান্সিসকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। গত আক্টোবর-নভেম্বরে পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশ সফরে আসার প্রাথমিকভাবে ইচ্ছা পোষণ করেন।
১৯৭০ সালের ২৬ নভেম্বর পোপ ষষ্ঠ পল বাংলার মাটিতে আসেন, যা ছিল কোনো পোপের বাংলাদেশে প্রথম আগমন। এরপর ১৯৮৬ সালের ১৯ নভেম্বর পোপ দ্বিতীয় জন পল রাষ্ট্রীয় এবং পালকীয় সফরের জন্য বাংলাদেশে আগমন করেন এবং তা বাংলাদেশে পোপের আগমনের দ্বিতীয় ঘটনা। সর্বশেষ সকল প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে তৃতীয়বারের মতো কোনো পোপ বাংলাদেশ সফরে আসছেন। পোপ ফ্রান্সিস তৃতীয় পোপ যিনি বাংলাদেশ সফর করবেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র কয়েক মাস পরই ভাতিকান রাষ্ট্র প্রধান পোপ ষষ্ঠ পল বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং ১৯৭৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশের সাথে ভাতিকানের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ফলশ্রুতিতে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্ব, ভালবাসা এবং সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাছে।
আরবি/আরপি/২৮ আগস্ট, ২০১৭