শিরোনাম :
তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে ‘আদর্শ ছেলে’ বিকৃতি: চলছে সমালোচনার ঝড়
‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে?/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?’ ধাক্কাটা এখানেই। তৃতীয় শ্রেণির বাংলা পাঠ্য ‘আমার বই’য়ে এই ধাক্কাই দেওয়া হয়েছে।
কুসুমকুমারী দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘আদর্শ ছেলে’র মূল লাইন ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’র শব্দ উল্টে দিয়ে এই বিভ্রান্তির ধাক্কা দিয়েছেন ‘পণ্ডিত’ পাঠ্য রচয়িতারা।
কুসুমকুমারী দাশের রচনায় ‘আমাদের দেশে’র পর ‘হবে’ লেখা হলেও বিকৃত লাইনটিতে এসেছে ‘সেই’। আর ‘হবে’ শব্দটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে একেবারে শেষে। ফলে কবি যে ‘ছন্দ’ ‘অন্ত্যমিল’ মাথায় রেখে কবিতার লাইনটি লিখেছেন, তা দৃশ্যতই গড়বড়ে হয়ে গেছে।
এখানেই বিকৃতির শেষ নয়, কবিতার চতুর্থ লাইনে কুসুমকুমারী লিখেছেন, ‘মানুষ হইতে হবে’- এই তার পণ। বিকৃত কবিতায় ‘হইতে’ শব্দটিকে ‘পাণ্ডিত্য’ দেখিয়ে ‘সম্পাদনা’ করে ‘হতেই’ লিখেছেন পাঠ্য রচয়িতারা।
নবম লাইনে মূল কবিতায় লেখা আছে, ‘সে ছেলে কে চায় বল কথায়-কথায়’। এই লাইনের ‘চায়’ শব্দটিকে বিকৃত করে অথবা উচ্চারণ অজ্ঞতায় পাঠ্য রচয়িতারা লিখেছেন ‘চাই’, অর্থাৎ ‘সে ছেলে কে চাই বল কথায় কথায়’!
এরপর ‘আমার বই’য়ে দেখাই গেলো না একাদশ থেকে চতুর্দশ লাইন পর্যন্ত। সে চারটি লাইন হলো, ‘সাদা প্রাণে হাসি মুখে কর এই পণ—/‘মানুষ’ হইতে হবে মানুষ যখন।/কৃষকের শিশু কিংবা রাজার কুমার/সবারি রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার,/’
মূল কবিতার পঞ্চদশ লাইনে লেখা ‘হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান’। এই লাইনের ‘খাট’’ শব্দটিকে বিকৃত করে লেখা হয়েছে ‘খাটো’।
এভাবে শব্দ-লাইন বিকৃতির পাশাপাশি বালাই দেখা গেলো না যতি চিহ্নের ব্যবহারেও। ড্যাশ-কমা-ঊর্ধ্বকমা ইচ্ছেমতো ব্যবহার বা বর্জন করা হয়েছে।
কবি জীবনানন্দ দাশের মা কুসুমকুমারী দাশের প্রসিদ্ধ এই কবিতার এমন বিকৃতিতে সমালোচনার ঝড় চলছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পাঠ্য রচয়িতাদের তুলোধুনো করছেন তারা ন্যূনতম দায়বদ্ধতা না দেখানোয়।
শিক্ষানুরাগীদের অভিযোগ, এভাবে যদি শিশু বইয়েই বিকৃতির ছড়াছড়ি হতে থাকে, তালে কোমলমতি শিশুদের কি শিক্ষা দেওয়া হবে? যারা নতুন বই প্রকাশের সাথে জড়িত, তাদের আরো বেশি সতর্ক এবং সচেতন হতে হবে বলে তারা উল্লেখ করেন।
আরবি/এসএন/আরপি/ ৩ জানুয়ারি, ২০১৬