ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ ত্রিপুরা ভাষা ককবরক (Kokborok) শিক্ষার মৌলিক কোর্স অনুষ্ঠিত

ত্রিপুরা ভাষা ককবরক (Kokborok) শিক্ষার মৌলিক কোর্স অনুষ্ঠিত

0
3389
ছবি : ম্যাগডালিন ডি’সিলভা

কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধীনে বান্দরবানের উজানী পাড়াস্থ বান্দরবান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে (বিটিটিসি) শিক্ষকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ৫দিন ব্যাপী ত্রিপুরা ভাষা শিক্ষার মৌলিক কোর্স।

কারিতাস ‘সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প-পার্বত্য চট্টগ্রাম’ প্রকল্পের কর্ম এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ‘গ্রামভিত্তিক শিক্ষা কেন্দ্রের মোট ১৭জন শিক্ষককে নিয়ে ১৭-২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ পর্যন্ত ৫দিনের এ কোর্স সম্পন্ন হয়।

তিন পার্বত্য এলাকায় প্রায় ১১টি সম্প্রদায়ভিত্তিক আদিবাসী বাস করে। এর মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, খেয়াং, বম, লুসাই, পাংখোয়া, ম্রং ইত্যাদি অন্যতম।

সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পটি (আইসিডিপি-সিএইচটি) ২০০২ সাল থেকে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি এ তিন পার্বত্য জেলার রোয়াংছড়ি, আলীকদম, রুমা, থানছি, মানিকছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলায় পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রকল্পটি উন্নয়নের কয়েকটি ধারায় যেমন- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি ও সংস্কৃতি, কৃষি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ সহায়তা ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করে আসছে। তাই প্রকল্পটি আদিবাসী ভাইবোনদের দেশের মূলস্রোতের সাথে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

এ বিষয়গুলিতে দেশের অন্যান্য এলাকায় সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প বা সুযোগ সুবিধা পৌঁছালেও দুর্গম ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অবকাঠামোগত দূর্বলতার কারণে তিন পার্বত্য জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে উন্নয়নের আলো তেমন একটা পৌঁছেনি। তাই প্রকল্পটি আদিবাসী ভাইবোনদের দেশের মূলস্রোতের সাথে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে আদিবাসী জনগণ অনেকটাই পিছিয়ে পড়ায় মূল স্রোতের সাথে মিশতে না পেরে দেশের উন্নয়নের ভাগীদার হতে পারছে না।

এ লক্ষে আইসিডিপি-সিএইচটি ২০০২ সালে ৬টি উপজেলার দূর্গম এলাকায় শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়া এবং শিশুর স্কুল গমনোপযোগি করার জন্য মোট ৩০টি গ্রামভিত্তিক শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করে। প্রতিটি শিক্ষা কেন্দ্রে ১ম শ্রেণি থেকে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়।

কিন্তু আদিবাসীদের মাতৃভাষা শিক্ষার জন্য কোন প্রাইমারি ছিল না। নিজস্ব বর্ণমালা ও ভাষা থাকা সত্বেও শিশুরা নিজস্ব ভাষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। কারিতাস ২০০৮ খ্রিঃ চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষার বর্ণমালা ও প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় এমন প্রাইমার প্রকাশ করে। এর চর্চা শুরু করতে শিক্ষকদের আগে প্রশিক্ষিত করতে হবে। তাই ধাপে ধাপে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় যখন প্রশিক্ষিত শিক্ষকগণ চাকুরী ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যায়। তখন কোমলমতি শিশুরা মাতৃভাষা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। এভাবে অনেক শিক্ষক অব্যাহতি নেয়ার ফলে নতুন শিক্ষকদের পুনরায় প্রশিক্ষণ দিতে হয়। এরই ধারাবাহিকতা আজকের এ প্রশিক্ষণ।

ছবি : ম্যাগডালিন ডি’সিলভা
ছবি : ম্যাগডালিন ডি’সিলভা

৫দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণের অংশ নিয়েছে পূর্ণ কুমার ত্রিপুরা, প্রধান শিক্ষক, তবলা পাড়া গ্রামভিত্তিক শিক্ষা কেন্দ্র, মানিকছড়ি উপজেলা, খাগড়াছড়ি। তিনি বলেন, ‘ আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি, কিন্তু আমরা যখন লেখাপড়া করেছি তখন মাতৃভাষা শেখার কোন উপায় ছিল না, তাই ছাত্রছাত্রীদেরও শেখাতে পারিনি’। এ প্রশিক্ষণে আমরা বর্ণমালা, শব্দ গঠন, নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ ও ফুল ফল ইত্যাদি বাংলা থেকে ত্রিপুরা ভাষায় রুপান্তর করতে শিখেছি। ছোট ছোট বাক্য গঠনও করতে শিখেছি, লিখতেও শিখেছি। এখন ছাত্রছাত্রীদের এ জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে পারবো। আমি বিশেষভাবে লাভবান হয়েছি’।

একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক পয়ান রায় ত্রিপুরা বলেন,‘ শিশুরা ছোটবেলা থেকে মাতৃভাষায় লিখতে ও পড়তে পারলে মাতৃভাষা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। আমরা সংখ্যায় মাত্র ১৭জন হলেও আমরা যা শিখেছি তা আমাদের ত্রিপুরা ছাত্রদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারবো বলে আশা করি’।

এখানে প্রশিক্ষক হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন মিঃ জগদীশ রোয়াজা। তিনি ককবরক রিসার্চ ইনস্টিটিউট, খাগড়াছড়ির একজন সদস্য (কড়শনড়ৎড়শ জবংবধৎপয ওহংঃরঃঁঃব)। এই প্রতিষ্ঠানটি তিন পার্বত্য এলাকায় ত্রিপুরা ভাষার উপর গবেষণা করে বর্ণমালা ও প্রাইমার প্রণয়ন করেছে।

মিঃ জগদীশ রোয়াজা বলেন, ‘আদিবাসীরা নিজস্ব ভাষা বলতে পারলেও এখনও সিংহভাগ মানুষ মাতৃভাষায় লিখতে ও পড়তে জানেনা। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় মাতৃভাষার লিখিত কোন দলিল থাকবে না, পরবর্তী প্রজন্ম আস্তে আস্তে নিজস্ব বর্ণমালা ও মাতৃভাষার লিখিত এবং শুদ্ধ রুপ হারিয়ে ফেলবে’। যাতে আদিবাসীরা তাদের নিজস্ব ভাষা টিকিয়ে রাখতে পারে, সেজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। শুদ্ধ ও সঠিক বর্ণমালা লিখতে, পড়তে এবং সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে এখন থেকেই শিখতে হবে, যাতে একসময় আদিবাসীরা তাদের নিজস্ব ভাষায় সবকিছুর চর্চা করতে পারে’।

উল্লেখ্য যে, এর আগে ১১-১৫ সেপ্টেম্বর ৫দিন ব্যাপী মারমা শিক্ষকদের জন্য মাতৃভাষার প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।

আরবি/আরপি/২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭