শিরোনাম :
দক্ষতা বৃদ্ধিতে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখে চলেছে বয়রা টেকনিক্যাল স্কুল
‘বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার আলাদা মূল্য রয়েছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ শেষে কোনো না কোনো কাজ করা যায়। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে বেকার থাকার প্রয়োজন পড়ে না’ বলছিলো বিটিএস (বয়রা টেকনিক্যাল স্কুল) এর প্রশিক্ষণার্থীরা।
প্রশিক্ষণার্থীরা জানায়, প্রশিক্ষকগণ আমাদের আন্তরিকতার সাথে সহজ সরল ভাষায় কাজ শেখায়। আমরা হাতে কলমে কাজ শিখতে পারছি। প্রশিক্ষণ শেষে আমরা দক্ষতার সাথে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবো। কারণ পূর্বে এখান থেকে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে, তারা দক্ষতা এবং সুনামের সাথে বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে।
বিটিএসের প্রিন্সিপাল হরোলাল চন্দ্র হাওলাদার জানান “আমারা সুন্দর পরিবেশ ও দক্ষতার সাথে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তারা সফলভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। প্রশিক্ষণার্থীরা প্রশিক্ষণ শেষে বিটিএস’র মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি যেমন; পারটেক্র, অটোবি, আরএফএল, কাশেম গ্রুপ, আকিজসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, BACI প্রকল্পে গত ৬ মাসে পাস করছে ৫৭ জন এবং তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছে। জুন ২০১৬ পর্যন্ত ৪১ টি ব্যাচে ১৪৮৮ জন প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি হয়, তার মধ্যে ১০৭৮ জন পাশ করে এবং ৮৫৯ জন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছে। ভবিষতে বিটিএসে আবাসিক ব্যাবস্থা, ডিপ্লোমা কোর্স চালু, এবং স্কুলকে স্বনির্ভর করার কথা জানা যায়।
খুলনা জেলার হাফেজউদ্দিন রোডে বয়রা টেকনিক্যাল স্কুল (বিটিএস)। বর্তমানে এটি কারিতাস দ¦ারা পরিচালিত হচ্ছে। পূর্বে স্কুলটি পরিচালনা করতো জেভেরিয়ান ফাদার সম্প্রদায়। কারিতাস বাংলাদেশের ‘কারিতাস টেকনিক্যাল স্কুল প্রজেক্টে’র (সিটিএসপি) তত্ত্বাবধানে বিটিএস পরিচালিত হয়। কারিতাস টেকনিক্যাল স্কুল প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার ডমিনিক দিলু পিরিছের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান ‘যে উদ্দেশে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেটি যেন বহাল থাকে। গরিব ছেলে মেয়েরা যেন সুযোগ সুবিধা পায়।’
তিনি গরিব ছেলেমেয়েদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে বলেন, এখানে হোস্টেল নেই, হোস্টেল তৈরীর চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। এই বছরই হোস্টেল তৈরীর কাজ শুরু করা হবে। এখন শুধু শহরের ছেলেমেয়েরা পড়ে, হোস্টেল থাকলে গ্রাম থেকে ছেলেমেয়েরা শিখতে আসতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, একাডেমিক জায়গা থেকে যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলো উন্নয়ন করা হবে। ছাত্র ভর্তির বিষটা আরো বাড়ানোর চিন্তা করছি।
ভবিষৎতে ডোনার ফান্ড বাদ দিয়ে নিজেদের আয় দিয়ে প্রতিষ্ঠান টি পরিচালনা করতে চান বলে প্রজেক্ট ম্যানেজার পিরিছ জানান।
টেকনিক্যাল অফিসার তপন অধিকারী জানান, সমগ্র খুলনা থেকে যেকোনো স্থানের প্রান্তিক পর্যায়ের ছেলেমেয়েরা এখানে এসে প্রশিক্ষণ নিতে পারে। জানুয়ারির শুরু থেকে লং কোর্সের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এছাড়া শর্টকোর্সগুলো বিভিন্ন সময়ে মেয়াদ অনুযায়ী শুরু হয়। তিনি আরো জানান, মূলত ঝড়ে পড়া, হতদরিদ্র এবং বিপদগামী ছেলেমেয়েরাই এখানে প্রশিক্ষণ নেয়। শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে তপন জানান, সাধারণত এখানে ৫ম থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের এখানে ভর্তি করানো হয়। তবে এর বাইরেও বিশেষ বিবেচনায় হয়তো কেউ কেউ ভর্তি হয়।
স্কুলের স্বনির্ভরতা সম্পর্কে তিনি বলেন, স্কুলের পক্ষ থেকে নিজেরাই স্বাবলম্বী হয়ে স্কুল পরিচালনা করার চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে স্কুল আয়ের দিকেও বিশেষ নজর দিচ্ছে। স্কুলের বিভিন্ন প্রডাক্টশন বাড়ানো এবং ট্রেণিং এর মাধ্যমে আয় করার প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে স্কুলটির ব্যায়ের ২৫ শতাংশ স্কুলের প্রডাক্টশন থেকে আয় করা সম্ভব হচ্ছে। পরবর্তীতে আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে।
বিটিএসের পরিচালনায় একটি কমিটি রয়েছে বলে টেকনিক্যাল অফিসার তপন জানান। তিনি বলেন, স্কুলের একটি উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে। কারিতাস খুলনা অঞ্চলের পরিচালককে সভাপতি করে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি বিভিন্ন সময়ে সভা করে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রস্তবনা রাখেন স্কুলের উন্নয়নের জন্য।
২ মে, ২০১৫ খুলনার বয়রা ট্যেকনিক্যাল স্কুল (বিটিএস) আনুষ্ঠানিকভাবে কারিতাস বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে জেভেরিয়ান ফাদারগণ। বয়রা টেকনিক্যাল স্কুলের পক্ষে ফাদার যাকোব গব্বি এসএক্স জেভেরিয়ান সুপিরিয়র ও কারিতাস বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী পরিচালাক ড. বেনেডিক্ট আলো ডি’রোজারিও চুক্তি পত্রে সাক্ষর করার মাধ্যমে বিটিএস কারিতাসের নিকট হস্তান্তরিত হয়।
১৯৬০ সালে খুলনার তৎকালীন বিশপ দান্তে বাত্তাগ্লিয়েরিন শহরে একটি কারিগরী ও বৃত্তিমূলক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য চিন্তা ভাবনা করেন। যখন ফাদার মারিও কিওফি একটি ইতালিয়ান বেসরকারি সংস্থা “মানিতেসি ” এবং একটি জার্মানি বেসরকারী সংস্থা “মিজিরিওর” এর অনুদান প্রাপ্ত হয়। তখন ক্রয় করা হয় বয়রার একখন্ড জমি এবং বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
১৯৭৫ সালে বয়রা টেকনিক্যাল স্কুলে তিন বছর মেয়াদী জেনারেল মেকানিকস ও মটর মেকানিকস দুইটি প্রধান কোর্স চালু হয়। উভয় কোর্সের সঙ্গে ওয়েল্ডিং এবং ইলেকট্রিসিটি নামে দুইটি সম্পূরক কোর্স যুক্ত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে দুইটি কোর্স আছে, লং কোর্স ও শর্ট কোর্স। লং কোর্সটি দুই বছর মেয়াদী এবং শর্ট কোর্স তিন মাস মেয়াদী। লং কোর্সের ট্রেডগুলো হল- অটোমোবাইল, ইলেকট্রিক্যাল এবং মেশিনিষ্ট। শর্ট কোর্সটি সম্পূর্ন ফ্রি কারিগরী প্রশিক্ষণ কোর্স। কোর্সটি Bangladesh Association Of Construction Industry (BACI) এবং মট্স যৌথ ভাবে পরিচালনা দান করছে। SEIP এর আওতায় ১ এপ্রিল, ২০১৫ হতে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭ পর্যন্ত চলমান থাকবে। শর্ট কোর্সের ট্রেডসমূহ হল মেশিনারী, প্লাম্বিং, রড বাইন্ডিং এবং ফেব্রিকেশন। এ কার্যক্রমের আওয়তায় প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণকালিন সময়ে মাসিক ৩,১২০ টাকা করে প্রশিক্ষণ ভাতা পাবে। বর্তমানে দুই বছর মেয়াদী কোর্সে সর্ব মোট ৩৯ জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। অটোমোবাইলে প্রথম বর্ষে ৭ জন, ২য় বর্ষে ৬ জন। ইলেকট্রিক্যালে ১ম বর্ষে ৮ জন, ২য় বর্ষে ৬ জন। মেশিনারিতে ১ম বর্ষে ৫ জন ২য় বর্ষে ৭ জন। তাছাড়া ১ বছর মেয়াদী ওয়েল্ডিং কোর্সে আছে ৪ জন। উক্ত প্রতিষ্ঠানে শর্ট কোর্সে আছে সর্বমোর্ট ১১৯ জন। রড বাইন্ডিং এন্ড ফেব্রিকেশনে আছে ৪০ জন। মেশিনারিতে ৩৯ জন প্লাম্বিং এ ৪০ জন।
আরবি/আরপি/৮ মে, ২০১৭