শিরোনাম :
নাগরীতে করোনা পরবর্তী নতুন স্বাভাবিক জীবন বিষয়ক সেমিনার
সম্প্রতি নাগরী ধর্মপল্লীতে ঢাকা আর্চডাইওসিসের ন্যায় ও শান্তি কমিশনের কোভিড-১৯ পরবর্তী নতুন স্বাভাবিক জীবন বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে ধর্মপল্লীর পালকীয় পর্ষদের সদস্যগণ, ফাদার-ব্রাদার ও সিস্টারগণ, গ্রাম প্রধানগণ, ক্রেডিট ইউনিয়নের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ ৪৮জন নেতৃত্ববৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
সেমিনারের কর্মসূচির মধ্যে ছিল- প্রার্থনা, করোনাভাইরাস পরবর্তী আর্থ-সামাজিক অবস্থা পর্যালোচনা, নিজের প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়ক উপস্থাপনা। ধর্মপল্লীতে করোনাভাইরাস দুর্গতিতে খ্রিষ্টভক্তদের আধ্যাত্মিক, সমাজিক ও নৈতিক বিষয়ে আলোচনা করেন পালক-পুরোহিত ফাদার জয়ন্ত এস গমেজ, কোভিড- ১৯ পরবর্তী আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও করণীয় বিষয়সমূহ উপস্থাপন করেন ওর্য়াড ভিশন এশিয়া প্যাসিফিক কার্যক্রম সমন্বয়কারী চন্দর জেড. গমেজ এবং মাণ্ডলিক ও পোপ ফ্রান্সিসের নির্দেশনাসমূহ আলোকপাত করেন ন্যায় ও শান্তি কমিশনের সেক্রেটারি ফাদার লিটন এইচ গমেজ সিএসসি। সেমিনারের শুরুতে সৃষ্টিকর্তার নিকট সৃষ্টির অসংখ্য দানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ও নিজেদের প্রতি আরও যত্নবান হওয়ার জন্য প্রার্থনা করা হয়। করোনাভাইরাস মহামারি শিখিয়েছে জীবন ও পরিবেশের প্রতি আমাদের আরও বেশি যত্নবান ও রক্ষণাবেক্ষণ মনোভাব প্রয়োজন। এই অবরুদ্ধ সময় আমাদের অন্তরে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে- আবর্জনা এখানে-সেখানে ছুড়ে ফেলে অপরিচ্ছন্ন-অস্বাস্থ্যকর নর্দমা তৈরি করেছি; গাছ কেটেছি কিন্তু রোপণে অবহেলা করে পরিবেশে ভারসাম্য নষ্ট করেছি; স্বার্থপর ও অতিভোগের কারণে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ করে ফেলেছি; প্রতিনিয়ত প্রচুর পানি অপচয় করছি, খাল-নদীর জল বিষাক্ত করে ফেলেছি; এভাবে প্রকৃতি ও প্রতিবেশীদের প্রতি অনেক ক্ষতি ইতোমধ্যে করেছি। এসব স্মরণ করে অনুতপ্ত হই ও মন-পরিবর্তন করে প্রকৃতি ও প্রতিবেশীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলি। অবরুদ্ধ সময়ে ধর্মপল্লীর খ্রিষ্টভক্তগণ যেমন আধ্যাত্মিক একাত্মতার অভিজ্ঞতা করেছেন তা অন্তরে জাগ্রত রাখা খুবই অপরিহার্য।
বক্তাদের উপস্থাপনা ও উন্মুক্ত আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ ছিল- এসময়ে খ্রিষ্টভক্তগণ পরিবারে সকলে একত্রে আছেন। তাই দায়িত্বশীল পরিবার গঠন, সুন্দর জীবনযাপন, স্বামী-স্ত্রীর অঙ্গিকার রক্ষা, বিপদাপন্ন আপনজনদের সেবাযত্ন করে পারিবারিক পরিবেশ সুন্দর করে তুলতে পারি। পরিবারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদক্ষেপ প্রয়োজন মাফিক কেনাকাটা, পরিমিত রান্না ও অপচয়রোধ, পরিমিত ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস, জিনিসপত্র পুনঃব্যবহার করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহযোগিতা করতে পারি। বাড়িতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিভিশন, পানির কল, বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহারের পর বন্ধ রাখাতে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। রান্নাঘরের অবশিষ্টাংশ, পাতা-লতা ও আবর্জনাগুলি মিশ্রিত করে উত্তম সার তৈরি করা যায় এবং এসব গাছের বৃদ্ধিতে আরও ভাল সার হিসেবে সহায়তা করে। পরিবার বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপকরণসমূহ প্রকৃতি সরবরাহ করে থাকে। গবাদিপশুর প্রতি যত্নবান হই, খালি জায়গায় শাক-সবজি-ফুল বাগান তৈরি করি ও রক্ষণাবেক্ষণ করি এবং ছেলেমেয়েদের যেন একইভাবে কাজ করতে উৎসাহ প্রদান করি।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পানীয় জলের চরম সংকট রয়েছে, তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা স্নানে কম পানি ব্যবহার করতে পারি, হাতমুখ ধোয়ার সময় কলের পানি নষ্ট না করি, যতটুকু পান করতে চাই ততটুকু পানি গ্লাসে ঢেলে পান করতে পারি। আমাদের এমন ক্ষুদ্র ক্ষ্রদ্র অভ্যাস অপচয় অনেক হ্রাস করবে ও আর্থিক সহায়তা দিবে। ক্রেডিট ইউনিয়নের নেতানেত্রীগণ যেন আরো সক্রিয় ও বিচক্ষণতার সাথে করোনাভাইরাস দুর্গতির সময়ে সদস্যদের সহযোগিতা করতে পারে এ বিষয়েও আলোচনা করা হয়। একটি মানবিক পরিবেশ রক্ষার জন্য পরস্পরের প্রতি আচার-আচরণে শিষ্টাচার অনুসরণ, দলীয়করণ মনোভাব ও অযাচিত তোষামোদপ্রিয় স্বভাব, অতিভোগ ও নিয়ন্ত্রণহীন উৎসব সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। করোনাভাইরাস মহামারী শিখিয়েছে জীবন ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি আরও বেশি যত্নবান ও রক্ষণাবেক্ষণ মনোভাব প্রয়োজন।
ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিকভাবে, ধর্মপল্লীভিত্তিক এবং কর্মস্থলভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ মহান কিছু অর্জন সম্ভব হবে। পরিশেষে স্থানীয় পাল-পুরোহিত জয়ন্ত এস গমেজ অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে সেমিনার সমাপ্ত ঘোষণা করেন।