ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ নাগরীর সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব

নাগরীর সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব

0
2531

সুমন কোড়াইয়া || গাজীপুর
গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নাগরীর সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২-৪ জানুয়ারি বর্ণিল সাজ ও নানা আয়োজনের মাধ্যমে এই পূর্তি উৎসব পালন করা হয়।
ঢাকার আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকী, ভাটিকানের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা এর প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান হাউজিং সোসাইটি লি: ঢাকার চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন, কারিতাস এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ড. বেনেডিক্ট আলো ডি’রোজারিও, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লি: এর চেয়ারম্যান আক্কাচ উদ্দিন মোল্লা প্রমুখ।
কার্ডিনাল প্যাট্রিক বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ সেন্ট নিকোলাস ছাত্রাবাসে থেকে সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন। যুগে যুগে, কালে কালে সেন্ট নিকোলাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি একটি অসাম্প্রদায়িক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু খ্রিষ্টান ছেলেরাই পড়াশোনা করে না। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকলে একত্রে মিলে-মিশে শিক্ষা অর্জন করছে। এই বিদ্যাপিঠে সবাই মিলে একত্রে ‘মিলনসমাজ’ গড়ে তুলছে।’

[wp1s id=”11149″]
‘এ দেশে খ্রিষ্টানদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনেক অবদান রয়েছে। বর্তমানে সমবায় আন্দোলনেও খ্রিষ্টানদের অবদান অপরিসীম,’ বলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা। তিনি শ্রদ্ধার সাথে বাংলাদেশে সমবায় আন্দোলনের পথিকৃৎ ফাদার চার্লস জে ইয়াং এবং আর্চবিশপ লরেন্স এল. গ্রেণার সিএসসিকে স্মরণ করেন।
ড.বেনেডিক্ট আলো ডি’রোজারিও বলেন, সততা, পরিশ্রম ও ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখে প্রার্থনা- এই তিনটা করলে কেউ আটকাতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, প্রথমে নিজেকে আগে ভালোবাসতে হবে। যে নিজেকে ভালোবাসে, সে পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দেশকে ভালোবাসে।
সেন্ট নিকোলাস স্কুল তথা কাথলিক মন্ডলীর প্রশংসা করেন আক্কাচ উদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়ে সব ধর্মের প্রতি সম্মান দেওয়া হয়- এটা আমি কোথায়ও দেখি নাই। কাথলিকদের শিক্ষাসেবা দেশকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। খ্রিষ্টান মিশনারীদের দ্বারা পরিচালিত স্কুলের আরো বিস্তার ঘটুক এই কামনা করি।’
আগষ্টিন পিউরীফিকেশন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘মিশনারী স্কুলগুলোতে শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়, নৈতিকতাও ভালোভাবে শেখানো হয়। এই প্রচেষ্টাকে আমি সাধুবাদ জানাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ফাদার-সিস্টার-ব্রাদারকে ত্যাগস্বীকার ও অবদানের জন্য তাদের কৃতজ্ঞা জানাই।’
জুবিলি অনুষ্ঠানের সমাপনি দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই স্কুলের শিক্ষা পেয়েছেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। তাঁর মতো আরো অনেক হাজারো শিক্ষার্থীকে আলো দিয়েছে এই বিদ্যালয়। যারা এখানে শিক্ষা দিয়েছেন তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই।
সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ব্রাদার প্রদীপ লুইস রোজারিও সিএসসি বলেন, একশত বছর ধরে শিক্ষার গুণগত মান ধরে রেখে বিদ্যালয়টি ক্রমবর্ধমান অগ্রগতিতে আজও সগৌরবে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর প্রায় শতাধিক ছাত্র কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চতর শিক্ষালাভের উদ্দেশে বের হয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব ছিলো স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক, প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রদের মিলন মেলা।

তিনদিনের অনুষ্ঠানমালায় ছিলো গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বক্তৃতাসহ প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লটারী ড্র ও কনসার্ট।

স্কুলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
পুরাতন নথিপত্রের সুত্রে জানা যায়, ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে নাগরীতে স্থানীয় পর্তূগীজ পুরোহিতের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং তৎকালীন জিলা বোর্ডের সামান্য অনুদানে একটি নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় চলমান ছিলো অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি ছিলো। তখনকার প্রধান ছিলেন বাবু অনুরূপ চন্দ্র রায়। তিনি ছিলেন এফএ পাশ এবং ইংলিশ টিচারশীপ উত্তীর্ণ। তার বেতন ছিলো ২০ টাকা। এ ছাড়াও তিনজন সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তাদের নাম জানা গেলেও তাদের যোগ্যতা এবং বেতন সম্বন্ধে যা পাওয়া তা হলো: সেকেন্ড মাস্টার এমভি পাশ বেতন ১০ টাকা, থার্ড পন্ডিত ইউপি পাশ বেতন আট টাকা।
যেহেতু, একমাত্র কালীগঞ্জ ছাড়া এর আশপাশে ১০/১৫ মাইলের মধ্যে কোনো বিদ্যালয়ই ছিলো না, সেহেতু স্থানীয় চার্চ কর্তৃপক্ষ এ এলাকার চাহিদা বিবেচনা করে ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখে নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে নিম্ন মাধ্যমিক ইংরেজী বিদ্যালয়ে উন্নীত করেন।