শিরোনাম :
নানা আয়োজনে ফাদার মারিনো রিগনের ৯৫তম জন্মদিন পালন
শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় পালিত হলো ফাদার মারিনো রিগনের জন্মবার্ষিকী।
তাঁর ৯৫তম জন্মবার্ষিকী বিভিন্ন আয়োজনে পালিত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার শেলাবুনিয়ার কাথলিক গির্জা প্রাঙ্গণে ফাদার সেরাপিন মন্ডল। এরপর ফাদার রিগনের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও প্রার্থনা করা হয়।
এদিকে মোংলা সরকারি কলেজ, সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয় ও উপজেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে ফাদার রিগনের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে একটি শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শেলাবুনিয়া-বটতলা এলাকা প্রদক্ষিণ করে মোংলা সরকারি কলেজে গিয়ে শেষ হয়। এরপর মোংলা সরকারি কলেজ চত্বরে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
মোংলাতে থাকা অবস্থায় ফাদার রিগন যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তাঁর পরিবারের লোকজন তাঁকে ইতালিতে নিয়ে যেতে আসেন। তখন ফাদার রিগন মারা গেলে তাঁর মরদেহ মোংলাতে সমাহিত করার শর্তে ইতালিতে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৭ সালে ২০ অক্টোবর মারা যান ফাদার রিগন।
উল্লেখ্য ফাদার মারিনো রিগন ১৯২৫ সালের ৫ ফ্রেব্রুয়ারি ইতালির ভেনিসের অদূরে ভিন্নাভেরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ধর্মযাজক হিসেবে তিনি ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে শেষে তিনি মোংলার শেলাবুনিয়া গ্রামে একটি চার্চ ও একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ওই গ্রামেই তাঁর স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ছিল তাঁর অকুণ্ঠ অবদান। যুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দিতে চার্চে গোপনে একটি চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন তিনি। তাঁর এই ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবা নিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সুস্থ হয়ে পুনরায় রণাঙ্গনে ফিরে গেছেন। তাদের মধ্যে বিখ্যাত হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রমও ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে ফাদার মারিনো রিগনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০০৯ সালে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়। এরপর ২০১২ সালে দেয় ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’।
বাংলাদেশে বসবাসের পর থেকে তিনি বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করেন এবং বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁর কৌতূহল ও নিবিড় ভালবাসার জন্ম হয়।
তিনি রবীন্দ্রনাথের রচনাবলী, লালনের সংগীত ও দর্শনের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন। তাঁর মাধ্যমে ইতালিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলী’সহ প্রায় ৪০টি কাব্য, জসীমউদ্দীনের ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ ও অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ, লালনের গানসহ অসংখ্য সাহিত্যকর্ম।
মৃত্যুর একবছর পর বাংলাদেশ সরকার ফাদার রিগনের শেষ ইচ্ছের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর তাঁর দেহাবশেষ বাংলাদেশের মাটিতে তাঁরই স্থাপিত শেলাবুনিয়া চার্চের পাশে সমাহিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।
মোংলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম সরোয়ারের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাসহ উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা নূর আলম শেখ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুনীল কুমার বিশ্বাস, সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিন্দ্রনাথ হালদার প্রমূখ।
ডিসিনিউজ/আরবি.ইউএইচইএম. ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮