শিরোনাম :
“নারী – এক ভবিষ্যৎ কারিগর”
রত্না বাড়ৈ
৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ দিনকে নিয়ে কিছু লেখ, আমার জন্য ধৃষ্টতা। ধৃষ্টতা বললাম কারণ আমি একজন সাধারণ সিকিউরিটি গার্ড। আমার পক্ষে এদিনের তাৎপর্য, ব্যপকতা নিয়ে কথা বলা বা কিছু লেখা কষ্টসাধ্য।
অত বড় দুঃসাহসও আমার নেই। নিজের বলয় বা পরিধির বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করা উচিৎ নয়। শেষে অল্পবিদ্যা ভয়ংকর প্রবাদটা আবারও প্রমাণিত হবে। তাই ও পথে আর হাঁটলাম না।
তাই বলে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে ভাবিনা তা সঠিক নয়। তবে আমার ভাবনা সম্পূর্ণ আমার নিজের মত করে। যেমন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকে নিয়ে ভাবি আম্ িতার এ্কক প্রতিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত নার্সিং পেশা আজ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। মায়ের গর্ভে ভ্রুণ থেকে শুরু করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত প্রতিটা মুহুর্তে তার সেবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। যদিও তিনি আজ আর আমাদের মাঝে নেই সত্যি কিন্তু তার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার লক্ষ কোটি অনুসারীরা। পৃথিব যতদিন থাকেবে নার্সিং পেশা ততো দিন থাকবে আর তিনি থাকবে আমাদের পূজনীয় হয়ে।
আমাদের নারী শিক্ষার পথিকৃত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন থেকে শুরু করে নেত্রী শেখ হাসিনা- তারা সবাই আজ আমাদের অনুকরণীয় এ কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু খুঁজে দেখেন তারা সবাই শুরুতেই যার যার নিজের লক্ষ ঠিক করে সেই অনুযায়ী নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন। শুধুমাত্র এ জন্যই তারা আজ আমাদের সবার শ্রদ্ধার জন। আমাদের সবাইকে যে বেগম রোকেয়া নয়ত শেখ হাসিনা হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
তিনি নারী, উনিও নারী
উনারা যদি পারেন
তাহলে আমরাও পারি
কারণ, আমরা সবাই নারী
হই না আমি দিন মজুরী।
সমগ্র বাঙালি নারীর শিক্ষার দরজা খুলে দিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। আসুন এতবড় পরিসরের কথা বাদ দিয়ে আমাদের নিজেদের মেয়েদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলি। একটা শিক্ষিত জাতির জন্য একজন শিক্ষিত ভবিষ্যৎ মা নিশ্চিত করি বংশ পরম্পরায় শিক্ষিত উন্নত জাতির বীজ বপন করি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাঙালি জাতিরও গত তের বছরের কর্ণধার নেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর মতো করে আঠারো কোটি মানুষের নেতৃত্ব নয়, দায়িত্ব নয় আমার নিজের ছেলেকে একজন নিষ্ঠাবান, চরিত্রবান, দায়িত্বশীল মানুষ হিসাবে তৈরি করার কর্তব্যটুকু পালন করি। প্রত্যেক মা আর কিছু না হলেও আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে শুধুমাত্র এই শপথটুকু নেই এবং পালন করি। প্রিয় বন্ধু, বিশ্বাস করেন আমরাই পারি বিশ্ব দরবারে উন্নত জাতি হিসেবে পরিচিতি পেতে। যদি আমাদের প্রতিটি সন্তান হয় মানুষের মতো মানুষ।
উন্নত রাষ্ট্র, উন্নত জাতি গঠনে প্রতিজন নারী আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। বুকে হাত রেখে বলি, আমি-ই সেই নারী যার প্রতিটি সন্তান শিক্ষায়, আদর্শে আর সামাজিকতায় সর্বগুণে গুনান্বিত, বিশ্ব দরবারে জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্বে আমারও।
দায়িত্ব পালন করতে বলাটা সহজ হলেও করাটা কিন্তু অত সহজ নয়। তাহলে শুধু দায়িত্ব না বলে গুরুদায়িত্ব বলাই শ্রেয়। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমরা নারীরা প্রতি নিয়ত পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। সাধারণ নারীদের কথা না হয় না-ই বললাম, শিক্ষিত আধুনিক অনেক নারীই আছেন যারা নিজ নিজ পেশায় অধিষ্ঠিত কিন্তু দুঃখের বিষয় দিন শেষে এসব নারীরাও হয়তো বাবা, নয়তো স্বামীর পরামর্শ নিতে বাধ্য হচ্ছেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে। অথচ সে কাজটা তিনি একাই করতে পারতেন। দায়িত্ব নিয়ে নিজের কাজ নিজে করার মতো যথেষ্ট মেধা, শক্তি, সাহস থাকার পরেও নারীরা আজো কখনো কথনো পিছিয়ে থাকেন। সামাজিকতার ভয়ে, অশান্তির কারণে সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র তিনিই ক্ষতিগ্রস্ত হন না বরং সমগ্র জাতি সৃজনশীল সৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়।
আসুন আজ নারীরা আমরা এক হই, মেধা সহকারে ধৈর্যশীল হই। খানিকটা সময় নিয়ে, সুযোগ নিয়ে নিজেদের মেধা একটু একটু করে প্রকাশ করি। যেন আগামী প্রজন্ম আমাদের প্রতিটা কাজের গ্রহণযোগ্যতা খুঁজে পায়। দেখবেন সময় ঠিকই কথা বলবে। এত করে মাকে শ্রদ্ধা করা, ছোট্ট ছেলেটাও একদিন পরিণত বয়সে বোনকে, স্ত্রীকে সম্মান করবে, পাল্টে যাবে সমাজ ব্যবস্থা। আর একজন আমাদের সবাইকে বিশেষ করে প্রত্যেক নারীকে আরও বেশি যতœশীল আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। অতীতকে আঁকড়ে থাকা আর নয় আজ এই মুহুর্ত থেকে শুরু হোক আমাদের নতুন পথ চলা। উন্নত জাতি, সমৃদ্ধ জাতি গঠনে এই আমরাই, আমরা নারীরাই হব ফাউন্ডেশন বা দেশ গড়ার কারিগর।