শিরোনাম :
পপি ত্রিপুরার মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে দায় স্বীকার করল কিশোর গাড়িচালক
অবশেষে গুলশানে বহুল আলোচিত পপি ত্রিপুরার মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে ও পুলিশের কাছে নিজের দায় স্বীকার করেছে গাড়িচালক কানাডিয়ান স্কুলের ও লেবেলের শিক্ষার্থী শাফিন। আদালত শাফিনকে কিশোর সংশোধনাগারে (কিশোর কারাগার) পাঠিয়েছে। কিশোর শাফিনের কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। ঘটনার সময় শাফিন বেসামাল অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে প্রায় কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল হেরিয়ার গাড়িটি চালাচ্ছিল। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে গাড়িটিতে চাপা পড়ে পপি ত্রিপুরা নামের ওই তরুণীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। গাড়িটি জব্দ করেছে পুলিশ।
এমন ঘটনার পর ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার পরও ধনাঢ্য পরিবারের কিশোর সন্তানদের গাড়ি চালানোর বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে পরিবার বা পিতামাতার ভূমিকাও নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একজন কিশোরের হাতে কিভাবে তার পরিবার কোটি টাকার বিলাসবহুল ভারি গাড়ি চালানোর জন্য ছেড়ে দেয় তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন।
গত ১৮ অক্টোবর ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের নর্থ এভিনিউয়ের ৭৯ নম্বর রোডে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় নিহত পপির (২৩) ছোট ভাই জয়ন্ত ত্রিপুরা থানায় এজাহার করেন। পরবর্তীতে এজাহারটি মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। জয়ন্ত ত্রিপুরা জনকণ্ঠকে জানান, তাদের পিতার নাম এন্ড্রি জন ত্রিপুরা। বাড়ি বান্দরবন জেলার থানচি উপজেলার ৩৬০ নম্বর যোসেফ পাড়ার ১ নং ইউনিয়নে। তারা ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন গোলাপবাগের ২০/২ নম্বর বাড়িতে বসবাস করেন। তারা তিন ভাই বোন। নিহত পপি ছিল মেজো।
আবেগতাড়িত কণ্ঠে জয়ন্ত ত্রিপুরা বলেন, পপি গুলশানের ৬৩ নম্বর সড়কের ৩৫/বি নম্বর বাড়িতে ‘সি সেলুন’ নামের একটি বিউটি পার্লারে চাকরি করত। প্রতিদিনের মতো ওইদিন সকাল সাড়ে দশটার দিকে বাসা থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়। রিক্সায় করে যাচ্ছিল পপি। ৭৯ নম্বর সড়কে একটি বেপরোয়া গতির প্রাইভেটকার পপিকে বহনকারী রিক্সাটিকে আচমকা প্রচন্ড গতিতে ধাক্কা দেয়। এতে রিক্সাটি উল্টে যায়। এ সময় গাড়িটি রিক্সাসহ পপিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই পপির মৃত্যু হয়। ঘটনার পর পরই গাড়িটি পালিয়ে যায়।
পবিরারের দাবি, ঘটনাটিকে প্রথম প্রথম নিছক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এরপর এ নিয়ে শোরগোল হলে রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়ি চাপায় পপির মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে গুলশান মডেল থানার ওসি এস এম কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, প্রথম দিকে নানাভাবেই ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বিভিন্ন জনের তরফ থেকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গাড়িটিকে সিসি ক্যামেরা, প্রযুক্তি ও গুপ্তচরের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়। তাতে দেখা যায়, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-০৯০২ নম্বরের গাড়িটি টালমাটাল অবস্থায় রাস্তায় চালাচ্ছিল ওই কিশোর শাফিন। গাড়িটি ছিল বিলাসবহুল টয়োটা হেরিয়ার। গাড়িটির দাম কমপক্ষে প্রায় কোটি টাকা।
পরবর্তীতে গাড়িটি জব্দ করা হয়। গাড়ি জব্দ করতে বাড়িতে হাজির হয় পুলিশ। এরপর পুলিশের চক্ষু চরক গাছ। বিলাসবহুল বাড়ি। গাড়িটি একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর। বাড়ি থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে তদন্তে জানা যায়, গাড়ি চালকের দোষেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে।
এরপর অকাট্য প্রমাণাদি সাপেক্ষে গত ২০ অক্টোবর ওই কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। কিশোর গুলশানের কানাডিয়ান স্কুলের ও লেবেলের ছাত্র। কিশোর শাফিন পুলিশের কাছে বেপরোয়া গতিতে বেসামাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর কারণে পপিকে বহনকারী রিক্সাটি চাপা পড়ে বলে স্বীকার করে। পরদিন ২১ অক্টোবর শাফিনকে কিশোর আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে কিশোর একই কথা বলে। আদালতের কাছেও কিশোর এমন বক্তব্য দেয়। আদালত শাফিনকে কিশোর সংশোধনাগারে (কিশোর কারাগারে) পাঠিয়েছে। এ মামলায় অন্য কোন আসামি না থাকায় দ্রুত মামলাটির চার্জশীট দাখিল করা হচ্ছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, এমন একটি বিলাসবহুল দামী ও ভারি গাড়ি কিভাবে তার পরিবার কিশোর ছেলেকে চালাতে দিল সেটি বোধগম্য নয়। শাফিনের কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। ড্রাইভিং না থাকার পরও প্রকাশ্য দিবালোকে গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় ব্যস্ত সময়ে ওই কিশোর কিভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল, তা বোধগম্য নয়। এতে পরিবারের গাফিলতি থাকার বিষয়টি স্পষ্ট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বড় লোকের সন্তানরা ড্রাইভিং লাইসেন্সের তোয়াক্কা না করেই দামী দামী গাড়ি হাঁকায়। স্বাভাবিক কারণে দামী গাড়ি নিতান্তই অস্বাভাবিক কোন কিছু চোখে না পড়লে কেউ তার চালক কে বা কারা তা নিয়ে ঘাটতে যায় না। (জনকন্ঠ)