শিরোনাম :
পর্দার অন্তরালে করোনা যোদ্ধার নীরব সংগ্রাম
রাফায়েল পালমা || ঢাকা
মার্চ মাসের ৮ তারিখ থেকে করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের পর বাংলাদেশে দিন দিন এর সংক্রমণ ও মৃত্যুর পরিমাণ উর্ধ্বমুখী । প্রতিদিনই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের অনেক পরিবারে প্রতিদিনই স্বজন হারানোর আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হচ্ছে।
৮ মে পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ লক্ষ ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি মানুষ। বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ১৩৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৬ জন। এই অনভিপ্রেত অবস্থা বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসীকে করেছে আতঙ্কিত ও হতাশাগ্রস্ত।
আমাদের বাংলাদেশ সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী দিনরাত এই মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চলেছেন। দেশের সাধারণ মানুষ সরকারের নির্দেশনা মেনে ঘরবন্দি রয়েছেন। সরকারের পাশাপাশি দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিগণ কর্মহীন-অস্বচ্ছল ও মধ্যবিত্ত অসহায় মানুষের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। যারা গবেষক ও বৈজ্ঞানিক তাঁরা এই বিপদজনক ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাঁরা নিঃসন্দেহে এই মহামারি প্রতিরোধের যোদ্ধা। তাঁরা সবাই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে এর বিপরীতে সংগ্রাম করে চলেছেন।
সাধারণের চেয়ে অতি সাধারণ মানুষ হলো এই দুর্যোগের সময়ে বিভিন্ন হাসপাতাল, প্রতিষ্ঠান ও বড় বড় আবাসিক অবকাঠামোতে নিয়োজিত নিরাপত্তা কর্মী।
দেশের এই মহামারির মধ্যেও নির্ভীক সৈনিকের মতো তারা অনবরত করোনা প্রতিরোধে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তারা তাদের চাকরির নিরাপত্তার সাথে জনমানুষের জীবন রক্ষাও অবদান রেখে চলেছেন।
দেশের এই ক্রান্তিকালে সমিতির সকল প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও নিরাপত্তা প্রকল্পের ২৫০ জন নিরাপত্তাকর্মী ঢাকা মহানগরসহ চারটি জেলা যেমন- ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মুঞ্জিগঞ্জে ৩৫টি প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থাপনায় নিরাপত্তা বিধান করে চলেছেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী ৪৩ হাজার সদস্যের সমবায় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্রেডিট সংশ্লিষ্ট উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। সমিতির সদস্য ও জনসেবার লক্ষে এই সমিতি প্রায় ৩০টি প্রকল্প পরিচালনা করছে।
নিরাপত্তা প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর তৎকালীন বিডিআরের অবসরপ্রাপ্ত মেজর বিজয় ম্যানুয়েল ডি’প্যারেস জানান, নিরাপত্তা কর্মীদের ডিউটিকালীন সময়ে ব্যবহারের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষার পোশাক (পিপিই) সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, নিরাপত্তাকর্মীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক ভবনগুলোতে যাতাযাতকারী মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা করতে পারছেন।
‘সতকর্তা অবলম্বনের কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সদস্যসহ কোনো নিরাপত্তাকর্মী করোনাভাইরাসে সংক্রমণ বা মৃত্যু হয়নি,’ বলেন প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ম্যানুয়েল প্যারিস।
ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারের ঢাকা ক্রেডিটের একটি সেবাকেন্দ্রে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী প্রতাপ ডি’কস্তা ডিসিনিউজকে বলেন, ‘ঢাকাসহ সারা দেশে এবং পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই দুর্যোগে কর্মহীন হয়েছেন, কিন্তু আমরা কর্মরত অবস্থায় আছি। এতে আমার পরিবারও নিরাপদ বোধ করছে, আমিও আত্ম-তৃপ্তি পাচ্ছি।’
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে লক্ষ্যাধিক সমবায় সমিতির মধ্যে ঢাকা ক্রেডিট একটি ঐতিহ্যবাহী আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৫ সালে ৫০ জন সদস্য ও ২৫ টাকা মূলধন নিয়ে দেশের পাওনিয়ার সমবায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্ম-প্রকাশ করে বর্তমানে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ৬৫ বছর যাবত নিষ্ঠা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের মূলধন, সদস্য ও কর্মব্যাপকতার বৃদ্ধির কারণে চিরাচরিত সঞ্চয় ও ঋণদানের পাশাপাশি দেশের সাধারণ আমজনতার কল্যাণে নানা সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মক্রম নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সমিতির বর্তমান প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা জানান, মানবিক বিবেচনায় সমিতির নিম্ন মধ্যবিত্ত সদস্যদের জন্য ইতিমধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যাদির প্যাকেজ বিরতণের পদক্ষেপসহ মধ্যবিত্ত সদস্যদের মধ্যে স্বল্প সুদে ৫০ হাজার টাকা পরিমাণ ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।