ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ফিচার পাগাড়ের তরুণ উদ্যোক্তা জনির গল্প

পাগাড়ের তরুণ উদ্যোক্তা জনির গল্প

0
840

|| হিমেল রোজারিও ||
ঢাকার অদূরে টঙ্গীর শিল্প এলাকা পাগাড়। বর্তমানে এখানে অনেক বড় বড় পোশাক কারখানা গড়ে উঠেছে। এই মিল কারখানায় কাজ করছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান হতে আগত শ্রমিকরা। পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা বেশি হওয়ার এখানে অনেকে টিন শেড, আধা পাকা এবং বহুতল ভবন তৈরি করে ভাড়া প্রদান করছেন। পাগারের ঝিনু মার্কেটের প্রধান সড়ক থেকে প্রায় ৩০০ ‍গজ ভিতরে তরুণ উদ্যোক্তা জনি পিউরীফিকেশন ছোট ছোট কক্ষ তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন।
জনির শৈশব কাটে পাগারের ঝিনু মার্কেটের পূর্ব পাশে। তিনি বেড়ে উঠেন বড় পরিবারে বাবা-মায়ের সাথে। এখনো বাবা-মায়ের সাথেই রয়েছেন জনি। তাঁদের পরিবারে রয়েছেন নয় ভাই এবং পাঁচ বোন।
পাগাড়ে প্রাথমিক পাড়াশোনা শেষ করে কালীগঞ্জের নাগরীর সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক পাশ করেন। এর পর টঙ্গী কলেজ হতে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এর পরে আর পড়াশোনা করা হয়ে উঠেনি। ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময়ই ব্যবসার দিকে মন ঝুঁকে পড়ে। তাই বাড়ির পাশের মিল থেকে স্টক লটে পাইকারী দরে কাপড় ক্রয় করেন। পরবর্তীতে ছোট ছোট লটে বিক্রয় করেন। মাঝে মধ্যে কিছু দিন কাপড়গুলো গুদামে রাখতে হয়। তাই টঙ্গীতে একটি ছোট গুদামঘর ভাড়া নিয়েছেন।
জনি ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ১০ লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে ১০টি ছোট ছোট কক্ষের মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া প্রদানের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বর্তমানে ২৭টি কক্ষ তৈরি করে গড়ে ৫০০০/= টাকায় ভাড়া দিয়েছেন। তার মধ্যে নিজের ব্যবহৃত ঘরটি তিনতলা বিশিষ্টি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। কিন্তু বর্তমানে একতলা সম্পন্ন করেছেন। ভবিষ্যতে তিনতলা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জনি বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রথম ৩৫ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এই টাকার কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করেছেন। তিনি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ৫০ লক্ষ টাকা বাড়ি নির্মাণ ঋণ গ্রহণ করেছেন। পূর্ববর্তী লেনদেন ভালো থাকার কারণে পরবর্তী ঋণ গ্রহণে কোন সমস্যার সস্মুখীন হতে হয়নি।
জনি বলেন, ‘পাহাড় এলাকাটি গার্মেন্টস এবং শিল্প এলাকা তাই বাসা ভাড়াটিয়া পাওয়া তেমন কোন সমস্যা হয় না। এই এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করলে ভাড়াটিয়া পাওয়া যাবে। কারণ, নতুন নতুন ফ্যাক্টরী তৈরি হচ্ছে। তাই বাড়ি ভাড়ার প্রদানের ব্যবসাটির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এবং অসীম সম্ভাবনাময়। এই এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং মানুষের সাথে সুসম্পর্ক থাকার কারণে কোন নেতাকে কখনো চাঁদা প্রদান করতে হয়নি। কোন ধরনের বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি।’
প্রত্যেকটি ব্যবসায়ে ঝুঁকি বিদ্যমান। ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে জনি বলেন, ‘তুলনামূলকভাবে বাড়ি ভাড়া ব্যবসায়ে ঝুঁকি একটু কম। তবে কখনো কখনো বাড়ি ভাড়া পেতে একটু বিলম্ব হয়ে থাকে। অনেক সময় বাড়ি ভাড়া প্রদানের সময় কিছু অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে থাকেন। এই জন্য ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে গেছে। তাছাড়া প্রত্যেক ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপিসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে হয় এবং স্থানীয় থানায় প্রদান করতে হয়। তবে ভাড়াটিয়াদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে কেউ ভাড়া না দিয়ে চলে যায় না। তবে কখনো কখনো মাসে দু’একটি রুম ফাঁকা থাকে।’
একজন ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ না করে কেন ক্রেডিট ইউনিয়ন থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন, জানতে চাইলে জনি বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়াটা ক্রেডিটের তুলনায় দীর্ঘ। ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করলে আমাকে প্রথমে ঋণ ফেরত এবং সুদ প্রদান করতে হয়, সর্বশেষ ঋণ ফেরত এবং সুদ সমপরিমাণ প্রদান করতে হয়। কিন্তু ঢাকা ক্রেডিটে থেকে ঋণ গ্রহণ করলে প্রতি মাসে ঋণ ফেরত প্রদানের সাথে সাথে সুদের পরিমাণ কমে যায়। আমি ঢাকা ক্রেডিটের টাকা যতদিন ব্যবহার করবো ততোদিনের সুদ প্রদান করতে হবে। কিন্তু ব্যাংক থেকে যে নিদিষ্ট মেয়াদে ঋণ গ্রহণ করবেন ঠিক ততো দিনের সুদ অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া ব্যাংক হতে ঋণগ্রহণ করতে গেলে সম্পূর্ণ টাকা পাওয়া যায় না, ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে বকশিস প্রদান করতে হয়। কিন্তু ঢাকা ক্রেডিটে ঋণ খেলাপী না হলে এবং জামিন দিতে পারলে ঋণ পেতে কোন সমস্যা হয় না।
বর্তমান প্রজন্মের তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে জনি বলেন, যাদের নিজস্ব জমি শিল্প এলাকার পাশে আছে তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ভাড়া প্রদানের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। মূলধনের জন্য বিভিন্ন সমবায় সমিতির স্মরণাপ্ন হতে পারেন। তবে ঋণ গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই হিসাব করতে হবে আপনি যে পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেত যাচ্ছেন, সেই পরিমাণ প্রতি মাসে আপনি কিস্তি প্রদান করতে পারবেন কিনা। আমি একজন সমবায়ী। পাঁচটি সমবায় সমিতির সদস্য হয়েছি। তবে বর্তমানে অনেক সমবায় সমতিতে প্রধান সমস্যা হচ্ছে ঋণ খেলাপির হার বৃদ্ধি পাওয়া। অপরিকল্পিত ঋণ গ্রহণ এবং ঋণের টাকার সঠিকভাবে ব্যবহার না করার কারণেই অনেকই আজ প্রায় দেউলিয়া হতে বসেছে। যাঁরা ঋণ খেলাপি হচ্ছেন, তাঁরা নিজেরা সমস্যার মধ্যে পড়ছেন এবং জামিনদারদেরও সমস্যার সম্মুখীন করছেন।
উদীয়মান তরুণ ব্যবসায়ী জনির প্রত্যাশা ঢাকা ক্রেডিট যদি তাঁর পাশে সর্বদা থাকে তাহলে বর্তমান ঋণ পরিশোধ করে ভবিষ্যতে বহুতল ভবন তৈরি করে ভাড়া দিয়ে আবাসন সমস্যার সমাধান করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।