ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ পানজোরায় সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসবে ৭০ হাজার খ্রিষ্টভক্তের ঢল

পানজোরায় সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসবে ৭০ হাজার খ্রিষ্টভক্তের ঢল

0
1409

ডিসিনিউজ || গাজীপুর:
ঐতিহ্যবাহী নাগরীর পানজোরায় আজ অনুষ্ঠিত হলো মহান সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব। এতে দেশ-বিদেশ থেকে ৭০ হাজার ভক্ত সাধু আন্তনীর মধ্যস্থতায় ঈশ্বরের কৃপা যাচনা করেছেন। অনেকে ধন্যবাদ দিয়েছেন মানত পূরণ হওয়ার জন্য।
পর্বীয় মহাখ্রিষ্টযাগে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি, সহকারী বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ, অবসরপ্রাপ্ত বিশপ থিয়োটনিয়াস গমেজ সিএসসি, কানাডা হতে আগত বিশপ খ্রিষ্টান, প্রায় ১০০ জন ফাদার, উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ব্রাদার-সিস্টারসহ প্রায় ৭০ হাজার খ্রিষ্টভক্ত।
নাগরী ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ও সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসবের আহ্বায়ক ফাদার জয়ন্ত এস গমেজ ডিসিনিউজকে বলেন, সাধু আন্তনীর পর্ব উপলক্ষে বিদেশ থেকেও প্রবাসী বাঙালিরা পানজোরায় এসেছেন। অন্যান্য ধর্মের আন্তনী ভক্তরাও এসেছেন আন্তনীর মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ নিতে।
তিনি আরো বলেন, বিগত নয়দিনে নভেনায় গড়ে পাঁচ হাজার আন্তনী ভক্ত উপস্থিত ছিলেন। প্রতিদিন দেড়শ খ্রিষ্টভক্ত পাপাস্বীকার করেছেন নভেনা চলাকালীন সময়। নভেনা ও পর্ব উপলক্ষে এক লক্ষ ২০ হাজার খ্রিষ্টপ্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে। পাদুয়ার সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসবের সময় মানুষ বিভিন্ন মানত করা ছাড়াও দেশে ও জাতির কল্যাণে প্রার্থনা করে থাকেন।

[wp1s id=”11666″]
উপদেশ বাণীতে ঢাকার আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি বলেন, সাধু আন্তনী ছিলেন জ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান মানুষ। তিনি সাধারণ ভাষায় কথা বলতেন। তার কথায় জ্ঞান, গর্ব প্রকাশ পেতো না। তিনি কার কী প্রয়োজন, শ্রোতাদের সেই অনুসারে কথা বলতেন, শিক্ষা দিতেন।
তিনি আরো বলেন, ‘মন্ডলীতে যাঁরা দীক্ষিত, তাঁরা প্রেরিত। আমরা যাঁরা খ্রিষ্ট বিশ^াসী, যীশুকে গুরু রূপে গ্রহণ করেছি- আমাদের নিকট মন্ডলীর আহ্বান আমরা যেন প্রেরণ কর্মী হই। যীশু যা শিখিয়েছেন, তা যেন অন্যদের শিখাই।
ফাদার জয়ন্ত জানান, চট্টগ্রাম থেকে একজন মুসলিম আন্তনী ভক্ত বিগত আট বছর ধরে বিনা মূল্যে একটি বাস ভাড়া করে চট্টগ্রাম থেকে খ্রিষ্টভক্তদের সাধু আন্তনীর তীর্থে নিয়ে আসেন। তিনি মহান সাধু আন্তনীর মধ্যস্ততায় মানত করেন এবং তার মানত পূরণ হয়। এরপর থেকে তিনি হয়ে যান সাধু আন্তনীর একনিষ্ঠ ভক্ত।
হারানো জিনিস ফিরে পেতে, চাকরির প্রার্থনা, নিঃসন্তান দম্পতির সন্তান চেয়ে প্রার্থনা, অসুস্থতায় নিরাময়, পরিবারে শান্তি, পরীক্ষায় ভাল ফলাফল, বিদেশ গমনসহ আরো অনেক প্রার্থনা ভক্তরা তীর্থোৎসবের সময় সাধু আন্তনীর মধ্যস্ততায় নিবেদন করেন।
আন্তনী ভক্তরা মানত হিসেবে নগদ টাকা, মোমবাতি, কবুতর, বিস্কিট, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি এনেছিলেন। অনেকে বাড়ি থেকে পানি নিয়ে আসেন। পানি আশীর্বাদ করে বাড়িতে নিয়ে যান। এই পানি পান করে অনেক অসুস্থ ব্যক্তি নিরাময়ও লাভ করে থাকেন।
‘আমি প্রতি বছর সাধু আন্তনীর পর্বে আসি। সাধু আন্তনীর মধ্যস্ততায় প্রার্থনা করে আমার পরিবারে শান্তি এসেছে। ছেলেরা ভালো চাকরি পেয়েছে। মেয়েদের ভালো ঘরে বিয়ে দিয়েছি। অসুস্থ হলে সাধু আন্তনীর মাধ্যমে প্রার্থনা করি এবং সুস্থ হই,’ বলছিলেন তীর্থে আসা মমতা গমেজ (৬৫)।
পানজোরা তীর্থে অন্যান্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা, সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা পরিষদের অন্যান্য সদস্যগণ, প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্যগণ, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন, ঢাকা ক্রেডিটের নারী নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় সংসদ মেহের আফরোজ চুমকী প্রমুখ।
পর্ব উপলক্ষে নাগরীবাসীর আতিথেয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। শুধু কাথলিক নয়; প্রটেস্টান, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ সব ধর্মের ও মন্ডলীর আন্তনী ভক্তরা এসেছিলেন সাধু আন্তনীর আশীর্বাদ নিতে।