ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ফিচার প্রতিবন্ধী প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি ইরানিকে

প্রতিবন্ধী প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি ইরানিকে

0
605
ছবি : হার না মানা ইরানি।

‘রোগিরা যখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তখন ভালো লাগে’ এমন কথাই যখন বলছিলেন ৫১ বছরের সেবিকা ইরানি বাড়ৈ তখন তিনি নিজেই একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী।

একজন প্রতিবন্ধী নারী হয়ে প্রতিবন্ধকতার কাছে হার মানেনি ইরানি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের সাথে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সেবা দিয়ে যাচ্ছেন নারায়নগঞ্জের জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে আসা রোগিদের।

01কোমর থেকে নিচের অংশ প্যারালাইজড হলেও হাত দিয়ে সব কাজই করতে পারেন তিনি। চলাফেরার সুবিধার্থে ব্যবহার করেন ইলেকট্রিক অটোমেটিক হুইলচেয়ার। নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন হাসপাতালে রোস্টারে দেওয়া ডিউটি অনুসারে।

ইনজেকশন দেয়া, স্যালাইন দেয়া, স্লিপ লেখা, রোগি ভর্তির ফরম পূরন করাসহ সকল সেবাই দিয়ে যাচ্ছেন ডায়রিয়া ইউনিটে আসা রোগিদের। চলাফেরার সুবিধার্থে তাকে এই ওয়াডেই বেশি ডিউটি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত নার্স ইনচার্য লুৎফা বেগম।

ইনচার্য লুৎফা বলেন ”আমরা সবাই তাকে সহযোগীতা করি। তিনি আমাদের সাথে সকালে বা বিকালে ডিউটি করেন, তাকে সাধারনত নাইট শিফ্টে ডিউটি দেওয়া হয় না।”

১৯৮৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নার্সিং ট্রেনিং সম্পন্ন করে ইরানি কর্ম জীবন শুরু করেন। ১৯৮৭ সালে যোগ দেন মাদারিপুর জেলার কালকিনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এর আগে তিনি ঢাকার শমরিতা হসপাতালে সেবা দান করেন।

১৯৮৯ সালে যোগদান করেন জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল নারায়নগঞ্জে। এরপর থেকে এখনও তিনি এখানেই কর্মরত রয়েছেন।

02কর্ম জীবন শুরুর দশ বছর পরে ১৯৯৬ সালে তিনি অসুস্থ হন। নিজ কর্মস্থলে তিনি প্রথম চিকিৎসা নেন, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং শেষবারের মতো পক্ষাঘাত পূনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)’তে চিকিৎসা নেন। কিন্তু সেখান থেকেও আশানুরুপ কোন ফলাফল না পেয়ে প্যরালাইজড অবস্থায় ১৯৯৮ সালে যোগ দেন নিজ কর্মস্থলে।

অদম্য এ নারী ২০০১ সালে সিআরপি থেকে ডিপ্লোমা ইন রিহ্যাবিলিটেশন এর উপর এক বছরের কোর্স সম্পন্ন করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতাল কতৃপক্ষও তার কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। হাসপাতালে কর্তব্যরত রেসিডেনসিয়াল মেডিকেল অফিসার ডা. আসাদুজ্জামান বলেন ”আমরা হাসপাতাল কতৃপক্ষ তার কাজে সন্তুষ্ট। চলাফেরার সুবিধার্থে তাকে নিচ তলাতেই ডিউটি দেওয়া হয়, তবে তিনি দোতালা তিন তলায়ও ডিউটি করতে পারেন।”

দুই মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে ইরানির সংসার। স্বামী সাইমন সিকদার জানান, ১৯৮৯ সালে তাদের বিয়ে হয়, তারপর একে একে ঘর জুড়ে আসে দুটি কন্যা সন্তান, তবে তারা ছোট থাকা অবস্থাতেই তাদের মায়ের এ অসুস্থতা দেখা দেয়। স্ত্রীর চলাফেরায় সহায়তা, সন্তানদের সযত্নে বড় করে তোলা এবং সংসার দেখাশোনার জন্য সায়মন তার চাকুরি ছেড়ে দেন।

তিনি বলেন” এসব কিছু করেছি আমার মনোবল থেকে এবং আমার পরিবারের কথা চিন্তা করে।” ‘জীবনের শেষদিন পর্যন্ত স্ত্রীর পাশে থাকতে চান’ জানান সাইমন।

ডা. আসাদুজ্জামান মনে করেন; প্রতিবন্ধীরা পরিবারের বোঝা নয়, উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারাও সমাজে বিভিন্ন কাজকর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।

সেবিকা ইরানি বলেন, ”আমি রোগির সেবা করবো এই শপথ করেছিলাম, যতদিন বাঁচবো মানুষের সেবা করার চেষ্টা করবো।”

আরবি/আরপি/১৭ মে, ২০১৭