শিরোনাম :
ফাদার চার্লস জে ইয়াংয়ের স্মরণে
।। রাফায়েল পালমা।।
তোমার রোপিত বৃক্ষ আজি,
ভরে আছে ফুলে-ফলে,
আজ হৃদয়ে তুমি মম মোদের,
যাব নাকো তোমায় ভুলে
হতাশাগ্রস্ত মানুষের হৃদয় তুমি দিয়েছ ভরি,
আজি তোমার স্মরণদিবসে কৃতজ্ঞচিত্তে,
ধারণ করি মোদের হৃদয়েতে।
বাংলাদেশে ক্রেডিট ইউনিয়নের রূপকার ও দেশের সর্ববৃহৎ সমবায় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস জে ইয়াং। বাবা ডানিয়েল ইয়াং ও মা মেরী জেনিংস-এর পরিবারে ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মে আমেরিকার নিউইয়র্ক রাজ্যের রচেস্টারে হৃদয়বান এই মানুষটির জন্ম। তিন ভাইবোনের মধ্যে ফাদার ইয়াং ছিলেন দ্বিতীয়।
আজ ২০২০-এর ১৪ নভেম্বর ফাদার ইয়াংয়ের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী। তেজগাঁও চার্চে আজ সকাল সাড়ে ৭টায় খ্রিষ্টযাগের পর ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা, কর্মীসহ অন্যান্য সমিতির প্রতিনিধি তাঁর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
ফাদার ইয়াং বাল্যকালে বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তিনি সেখানকার মাইনর সেমিনারীতে থাকতেন। এরপর তিনি নভিসিয়েটে যোগ দেন।
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ২ জুলাই তিনি পবিত্র ক্রুশ সংঘ থেকে প্রথম ব্রত গ্রহণ করেন। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাতিনে বিএ পাশ করেন। একই বছরে তিনি ওয়াশিংটনের ফরেন সেমিনারীতে যোগ দেন।
১৯৩৩-এর ২৪ জুন তাঁর সহপাঠীদের সাথে পৌরহিত্য পদ লাভ করেন। ওই বছরই প্রৈরিতিক কাজে তিনি ঢাকায় আসেন। তিনি ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে কানাডায় যান এবং ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বয়স্ক এবং ক্রেডিট ইউনিয়ন শিক্ষার ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
তৎকালীন অস্বচ্ছল খ্রিষ্টভক্তদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সমবায়কে বেছে নিয়েছিলেন ফাদার ইয়াং। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ৩ জুলাই পুরান ঢাকার লক্ষীবাজার চার্চে তিনি পঞ্চাশ জন খ্রিষ্টভক্তকে নিয়ে মাত্র ২৫ টাকা মূলধন একত্রিত করে একটি ক্রেডিট ইউনিয়ন গঠন করেন। সেই ক্রেডিট ইউনিয়নই বর্তমানে দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড, ঢাকা। এই সমিতির জনপ্রিয় নাম ‘ঢাকা ক্রেডিট’। ঢাকা ক্রেডিট নামেই বহুল পরিচিত।
১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে নভেম্বর মাসের ১৪ তারিখে ঢাকার প্রেসক্লাবের সামনে একটি গাড়ি তাঁর মটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে তিনি পড়ে গিয়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পান। তখনই তিনি জ্ঞান হারান। শেষ পর্যন্ত তাঁর জ্ঞান ফিরে আসেনি। অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজে থাকা অবস্থায় রাত ১১:০৫ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৬ নভেম্বর তাঁর মরদেহ তেজগাঁও চার্চের কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
উল্লেখ্য যে, সমবায় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্রেডিট বাংলাদেশের চারটি জেলাকে যেমন- ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জকে কর্ম এলাকা হিসেবে নিয়ে খ্রিষ্টান সদস্যদের সেবা দিলেও বর্তমানে নানা সেবা ও প্রকল্পের মাধ্যমে জাতি-ধর্ম-বর্ণ সকল সম্প্রদায়ে মানুষের সেবার দার উন্মুক্ত করেছে।
পঁয়ষট্টি বছর টিকে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রায় ৪৩ হাজার নারী-পুরুষ সদস্য রয়েছে। এর সম্পদ-পরিসম্পদের পরিমান প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়, ঋণ ও অন্যান্য সেবাসহ মোট পঁচাত্তরটি প্রডাক্ট রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়াও রয়েছে নানা সামাজিক সেবা ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিকমানের চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টার, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার গ্রহণের জন্য গার্লস হোস্টেল, কালচারাল একাডেমি, সিকিউরিটি সার্ভিস প্রকল্প, সমবায় বাজার, শরীরচর্চার জন্য জিম, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পরিচালনার স্কুল, অনলাইনভিতিত্তক নিউজ পোর্টাল ডিসিনিউজ, মাসিক প্রকাশনা সমবার্তা, অনলাইভিত্তিক ডিসিটিভি, স্বাস্থ্য প্রকল্প, এম্বুলেন্স সার্ভিস প্রকল্প, লাইব্রেরি ইত্যাদি।
দেশের সমবায়ের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ প্রকল্প হিসেবে ঢাকা ক্রেডিট শুরু করেছে ৩০০ শয্যার ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জের মঠবাড়ীতে বিরাট এলাকা জুড়ে নির্মীয়মান এই হাসপাতালের সকল বিভাগ খোলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দেশের সকল সমবায়ীসহ জাতি-ধর্ম-বর্ণ সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সেবার জন্য দার উন্মুক্ত করা হবে। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের দ্বিতীয়ার্ধে এই বিরাট অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হবে। দেশ-বিদেশের জেনারেল ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার-নার্সদের আন্তরিক সহযোগিতায় বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভাব হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট জনেরা।
জন্মের একদিন বয়স থেকেই একটি শিশু এই সমিতিভুক্ত হতে পারে। তাই মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল বৈষয়িক সেবা নিশ্চিতের জন্য ঢাকা ক্রেডিট বদ্ধপরিকর। বর্তমানে দেশের অনেক সমিতি ঢাকা ক্রেডিটের অধিকাংশ মডেল অনুসরণ করছে।