শিরোনাম :
বরিশালে খ্রিষ্টমন্ডলীর উদ্যোগে পালা গান পুনরুদ্ধার
ফাদার অনল টেরেন্স ডি’কস্তা, সিএসসি || বরিশাল
দক্ষিণ বাংলার বরিশাল অঞ্চলের মানুষের জীবন আর গান যেন এক সুত্রে গাঁথা। পালা-কীর্তণ-যাত্রা, সেবক সঙ্গীত, বড় সভা এই অঞ্চলের মানুষের চিত্ত-বিনোদন, আনন্দোৎসব, তথা মিলন-মেলার গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক মাধ্যম। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ তা অনেকটা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বরিশাল কাথলিক ডাইওসিসের সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের উদ্যোগে এই বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যকে ফিরে পাওয়ার জন্য ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ খ্রীষ্টবর্ষে, বরিশাল সদর রোডে অবস্থিত ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীর হলরুমে ‘পালা গান’ বিষয়ক এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
বরিশাল অঞ্চলের ঐহিত্যবাহী ‘পালা গান’ বিভিন্ন ধর্মীয় ও পর্বীয় অনুষ্ঠানে মঞ্চস্থ ক’রে খ্রিষ্টের বাণী প্রচারের লক্ষ্যে এই কর্মশালার আয়োজন। পবিত্র বাইবেলে বর্ণিত বিভিন্ন ঘটনা ও শিক্ষা, কুমারী মারীয়ার জীবন, সাধু-সাধ্বীদের জীবন চরিত এবং বিভিন্ন সাক্রামেন্ত সম্বন্ধে পালা গান রচনা ও মঞ্চস্থ করাই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য। উক্ত কর্মশালায় বরিশাল ডাইওসিসের ৬টি ধর্মপল্লী ও ২টি কোয়াজী ধর্মপল্লী থেকে শিল্পীমনা ৫০ জন খ্রিষ্টভক্ত, বিভিন্ন ধর্মসংঘের ১০ জন সিস্টার, ১ জন ব্রাদার এবং ৫ জন ফাদার, মোট ৬৫ জন অংশগ্রহণ ক’রে এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং নিজ নিজ স্থান ও অভিজ্ঞতা থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। উপস্থিত অনেকের পালা গানের সাথে নিজের পূর্ব সম্পৃক্ততার জীবন সাক্ষ্য ও অনুপ্রেরণামূলক সহভাগিতায় অংশগ্রহণকারী সকলে শক্তি, সাহস, মনোবল, উৎসাহ পান এবং নতুন উদ্যোমে বিলুপ্তপ্রায় পালা গান পুনরুদ্ধারের পৃষ্ঠপোষকতা খুঁজে পান।
প্রত্যেক ধর্মপল্লী থেকে একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কেন্দ্রিয় পালা গান কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মনোনীত হন ফাদার অনল টেরেন্স ডি’কস্তা, সিএসসি। এই কমিটির দায়িত্ব হবে স্ক্রিপ্ট বা পা-লিপি সংগ্রহ বা রচনার ব্যবস্থা করা, প্রতিটি ধর্মপল্লী থেকে সুরকার, গীতিকার, বাদ্যকার, শিল্পী ও অভিনেতা সংগ্রহ করা, অনুশীলনের ব্যবস্থা করা এবং পালা গান মঞ্চস্থ করার সার্বিক ব্যবস্থা করা।
‘সিগনিস’ হলো পোপের দপ্তরের একটি আন্তর্জাতিক সামাজিক যোগাযোগ সংস্থা। সিগনিস নামে এই যোগাযোগ সংস্থাটি, বর্তমান গণমাধ্যম এবং লোক সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে খ্রিষ্টের বাণী প্রচারে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সিগনিসের আর্থিক সহায়তায় ধর্মপ্রদেশ ভিত্তিক ‘সান্তা ক্রুজ পদাবলী কীর্তণ দল: বরিশাল কাথলিক ডাইওসিস’ নামে একটি পালা গান দল গঠন করা হয়। বরিশাল ডাইওসিসের বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে ৬৫ জন কাথলিক শিল্পীকে একত্রিত করে বিশেষ পোষাক দেওয়া হয়েছে এবং চার মাস কঠোর অনুশীলন বা মহরা দেওয়া হয়েছে। আনন্দের বিষয় এই যে নব গঠিত দলটি মাত্র চার মাস অনুশীলন করে পরবর্তী চার মাসে ৪টি ভিন্ন স্থানে ৮টি পালা গান মঞ্চস্থ করেছে।
বরিশাল ডাইওসিসের ৪র্থ বর্ষপূর্তিতে, সদর রোড, বরিশাল, ক্যাথেড্রাল ধর্মপল্লীতে, গত ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯ খ্রীষ্টবর্ষে, নতুন দলের প্রথম উপস্থাপনা ‘যীশুর জন্ম কাহিনী’ ও ‘লাজারের মৃত্যু কাহিনী’, মি: যাকোব বাড়ৈ এবং মি: সেতন গোমেজ (নয়ন) দুই জন সরকারের নেতৃত্বে দু’টো পালা গান মঞ্চায়িত হয়েছে। ৩১ জানুয়ারী, ২০২০ খ্রীষ্টবর্ষে, গোপালগঞ্জ জেলার বানিয়ারচর ধর্মপল্লীতে দলের দ্বিতীয় উপস্থাপনা ‘সৃষ্টির বিবরণ’ ও ‘আব্রাহামের জীবনী (ইসহাকের বলি)’ মি: সুবাস বাড়ৈ-এর নেতৃত্বে দু’টো পালা গান মঞ্চায়িত হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ খ্রীষ্টবর্ষে, গোপালগঞ্জ জেলার নারিকেলবাড়ী ধর্মপল্লীতে দলের তৃতীয় উপস্থাপনা ‘প্রভু যীশুর যেরুশালেম যাত্রা’ এবং ‘লাজারের জীবন লাভ’ মি: সেতন গোমেজ (নয়ন)-এর নেতৃত্বে দু’টো পালা গান মঞ্চায়িত হয়েছে। ১২ মাচর্, ২০২০ খ্রীষ্টবর্ষে, ঝালকাঠি জেলার, নলসিটি থানার রাজাবাড়িয়া সাধু আন্তনীর তীর্থস্থানে (পাদ্রীশিবপুর ধর্মপল্লী) দলের চতুর্থ উপস্থাপনা মি: সেতন গোমেজ (নয়ন)-এর নেতৃত্বে অবনী সরদারের গান ‘প্রভু যীশুর যেরুশালেম যাত্রা’ এবং মি: জহর গোমেজ-এর নেতৃত্বে রামুর পালার ‘যীশুর যাতনাভোগ’ মঞ্চায়িত হয়েছে।
বরিশাল কাথলিক ডাইওসিসের এই পালা গান-এর পুনরুদ্ধারের উদ্যোগকে প্রশংসা করে ভাটিকান ও ব্যাংকক-এর দু’টি পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। সকলের সমর্থন ও সহযোগিতায় বরিশাল কাথলিক ডাইওসিসের এই কর্ম-প্রচেষ্টা আরও এগিয়ে যাবে সেই প্রত্যাশা করি।
আরো ছবি:
[wp1s id=”12594″]