ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা সম্পাদকীয় উপ-সম্পাদকীয় বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রেক্ষাপটে আগামী দশকের সমবায় ভাবনা

বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রেক্ষাপটে আগামী দশকের সমবায় ভাবনা

0
997
বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রেক্ষাপটে আগামী দশকের সমবায় ভাবনা, নির্মল রোজারিও,

 

নির্মল রোজারিও: 

১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে সমবায় আন্দোলন শুরু হয়েছিল দি বেঙ্গল কো-অপারেটিভ এ্যাক্টস্ প্রণয়নের এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তৎকালীন সময়ে দরিদ্র কৃষককূলকে সমবায়ের মাধ্যমে সংগঠিত করে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধনই ছিল এর মূখ্য উদ্দেশ্য। মূলতঃ যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলন শুরু করা হয়েছিল তা খুব একটা ভাল ফল দেয়নি। সরকার থেকে ঋণ গ্রহণ এবং তা সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করাই ছিল সমবায়ের ধারণা এবং কাজ। কাজেই সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ততা বা নিজস্ব তাগিদ ছিল সামান্যই।

অপরদিকে স্ব-উদ্যোগে সমবায় গড়ে তোলার অর্থনেতিক অবস্থাও খুব একটা অনুকূলে ছিল না। এভাবেই দীর্ঘ সময় চলেছে আমাদের সমবায় আন্দোলন। আজও এ আন্দোলন যে খুব একটা সফলতা বা কার্যকারিতা লাভ করেছে তা বলা যাবে না। যে মাত্রায় সমবায় বিকশিত হওয়ার কথা ছিল; সমবায় এদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে যে ভূমিকা রাখতে পারত বাস্তবে তা হয়নি। ফলশ্রুতিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ঋণ কার্যক্রম ও মহাজনী ঋণব্যবস্থা শূণ্যস্থানটি দখল করে নেয়।

আরো পড়ুন: স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার!

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ’৭২-এর সংবিধানে মালিকানার দ্বিতীয় খাত হিসেবে সমবায়কে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল সমবায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের মাধ্যমে একটি দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। তাঁর  স্বপ্নের পথ ধরে এখনো আমরা চলছি। কিন্তু যে মাত্রায় সফল হওয়ার কথা ছিল তা এখনো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে দেশে প্রাথমিক সমবায় সমিতি ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৫৩৫টি এবং এগুলোর ব্যক্তি সদস্য সংখ্যা ১ কোটি ৯ লক্ষ ৪ হাজার ১৩৬ জন বলে জানা যায়।

’৫০ দশকের মাঝামাঝি দেশে শুরু হয়েছে বিশেষ ধারা ও বৈশিষ্ট্যের সমবায় সমিতি যা ক্রেডিট ইউনিয়ন নামে সমধিক পরিচিত। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুলাই ঢাকার লক্ষীবাজারে ফাদার চার্লস্ যোসেফ ইয়াং ৫০ জন ব্যক্তিকে নিয়ে দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সূচনা করেন এ সমবায় আন্দোলনের। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৬৪ বৎসরে ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলন দেশব্যাপী একটি পরিচিতি লাভ করেছে।

আরো পড়ুন: টিনের ঘর থেকে অট্টালিকা 

১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের পর ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশের ১১টি খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন নিয়ে গড়ে উঠা জাতীয় পর্যায়ের কেন্দ্রীয় সংগঠন দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ লিঃ (কাল্ব) এই আন্দোলনকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছে। সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক ক্রেডিট ইউনিয়ন একটি স্বীকৃত আন্দোলন এবং সতন্ত্র শ্রেণিভুক্ত সমবায় সমিতি। বর্তমানে কাল্ব-এর অধীনে পূর্ণ, সহযোগী ও সেবাধীনসহ মোট ১,০৩৩টি সদস্য সমিতি, ৬ লক্ষ ৫০ হাজার ব্যক্তি সদস্য এবং তাদের সম্পদ পরিসম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩,৬০০ কোটি টাকায়।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিশেষভাবে ক্যান্সারস্বরূপ খেলাপি ঋণ প্রতিরোধে খ্রিষ্টান ক্রেডিট ইউনিয়ন, হাউজিং সোসাইটি, বহুমূখী ও মহিলা সমিতিসমূহের সমন্বয়ে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শুরু হয়েছে সমবায় সমিতিসমূহের সমন্বয় পরিষদ; যা ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাস থেকে দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস্ (কাক্কো) লিঃ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ৩০ জুন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এর সদস্য সংখ্যা  দাঁড়িয়েছে ৪০টি। সম্পদ পরিসম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১,৭৭৫ কোটি টাকায়।

১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হওয়া আন্দোলনের সাথে আমরা বিশেষভাবে সম্পৃক্ত রয়েছি। এ আন্দোলন বিগত ৬৪ বৎসরে যে একই ধারায় এবং পরিক্রমায় চলেছে তা ঠিক নয়, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমবায় সমিতিকে নানা চড়াই-উৎরাই পাড় হতে হয়েছে। তারপরও সার্বিকভাবে একটি সাফল্য এ আন্দোলনের রয়েছে। মানুষের সার্বিক উন্নয়ন এবং কল্যাণে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও অবদান এবং ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আন্দোলন আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। বিশষতঃ কাল্ব-এর মাধ্যমে এসোসিয়েশন অব এশিয়ান কনফেডারেশন অব ক্রেডিট ইউনিয়নস্ (আকু)-এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে কারিগরি সহযোগিতা সহজলভ্য হয়েছে। বিভিন্ন কলাকৌশল ব্যবহার করার মাধ্যমে আন্দোলনকে শক্তিশালী করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

আরো পড়ুন: ঢাকা ক্রেডিট থেকে দ্রুত ও সহজে ঋণ পেতে করণীয়

গত ৬৪ বৎসরে ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনের যেমন অগ্রগতি ও উন্নতি হয়েছে, তেমনি দেশ ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিও তরান্বিত হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে নতুন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচন হয়েছে। আগামীতে আরও হবে এবং এটাই বাস্তবতা।

১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে এ দেশের মানুষের বার্ষিক গড় আয় ছিল ৮৯ মার্কিন ডলার, ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ১৩৮ মার্কিন ডলার, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ১৭৫১ মার্কিন ডলার যা চলতি অর্থবৎসরে এসে দাঁড়িয়েছে ১৯০৯ মার্কিন ডলারে। গত ১০ বৎসরে দেশের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং সরকার যে রূপকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে দেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে। দেশ যখন উন্নত হবে, তখন আনুসাঙ্গিক পারিপার্শ্বিকতারও উন্নতি এবং পরিবর্তন ঘটবে। নতুন পরিবেশ এবং পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে । যা আমরা কোনোভাবেই এড়িয়ে চলতে পারব না। সে পরিবেশকে বিবেচনায় রেখেই আমাদের আজ কাজ করতে হবে এবং নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে।

সমবায় আন্দোলনের বর্তমান চ্যালেঞ্জ বা সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে (১) সমিতি পরিচালনায় পর্যাপ্ত আর্থিক বিশ্লেষণ ও পেশাদারিত্বের ঘাটতি; (২) সেচ্ছাশ্রমভিত্তিক সমিতি পরিচালনার মনোভাব এবং কোথাও কোথাও প্রাতিষ্ঠানিকী করণের অভাব; (৩) অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণ ব্যবহারের প্রবণতা; (৪) সীমিত বিনিয়োগ ক্ষেত্র, ঋণ ব্যতীত অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগে অনীহা; (৫) সীমিত বাজার এবং মার্কেটিংয়ের দুর্বলতা; (৬) সদস্যদের চাহিদাভিত্তিক প্রডাক্ট প্রণয়নে এবং প্রয়োজনীয় চাহিদা সৃষ্টির ক্ষেত্রে দুর্বলতা; (৭) বাজারভিত্তিক সুদ হার নির্ধারণের অভাব; (৮) শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রতি অনীহা; পেশাদার সৃষ্টির উদ্যোগের ঘাটতি; (৯) নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও সংঘাত; (১০) খেলাপি ঋণ অসহনীয় পর্যায়ে বৃদ্ধি; (১১) সদস্যদের কাউন্সিলিংয়ের অভাব।

জাতিসংঘ কর্তৃক ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে ১৫ বৎসরের জন্য অর্থাৎ ২০০০-২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের জন্য গরষষবহহরঁস উবাবষড়ঢ়সবহঃ এড়ধষং (গউএ) নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে এ লক্ষ্য অর্জনের পর পরবর্তী ১৫ বৎসরের জন্য অর্থাৎ ২০১৬-২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের জন Millennium Development Goals (MDG)  নির্ধারণ করা হয়েছে। এসডিজি-তে ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং লক্ষ্য অর্জনে ১৬৯টি টার্গেটও স্থির করা হয়েছে। যেহেতু আমাদের সকলেরই লক্ষ্য সমাজ, দেশ এবং মানব জাতির কল্যাণ, তাই জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত, বাস্তবায়িত এবং নতুনভাবে নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়।

MDG-তে যে সকল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং যা বাস্তবায়িত হয়েছে তা নিম্নরূপ:

১।  অতি দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীভূত করা (To eradicate extreme poverty end hunger).

২।  সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা (To achieve universal primary education).

৩।  লিঙ্গ সমতায়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন (To promote gender equality and empower women).

৪।  শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনা (To reduce child mortality).

৫।  মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন (To improve maternal health).

৬।  এইচআইভি/এইডস্, ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য রোগ মোকাবেলা করা (To combat HIV/AIDS, malaria and other diseases).

৭।  টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করা (To ensure environmental sustainability).

৮।  উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা (To develop a global partnership for development).

২০১৬ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য SDG-তে যে সকল বিষয়ে লক্ষ্য ও টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে, তা নিম্নরূপ:

১।  দারিদ্র্য থাকবে না (No poverty).

২।   অনাহারি শূণ্যের কোঠায় (তবৎড় যঁহমবৎ).

৩।   সুস্বাস্থ্য ও সুখকর অবস্থা (Zero hunger).

৪।   মানসম্মত শিক্ষা (Good health and well being).

৫।   লিঙ্গ সমতা (Quality education).

৬। পরিচ্ছন্ন পানি এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থা (Gender equality).

৭। সাশ্রয়ী মূল্যে পরিচ্ছন্ন জ্বালানী (Clean water and Sanitation).

৮। পরিচ্ছন্ন কাজ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (Decent work and economic growth).

৯। শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো (Industry, Innovation and Infrastructure).

১০। বৈষম্য কমিয়ে আনা (Reduce inequality).

১১। টেকসই শহর ও সমাজ ব্যবস্থা (Sustainable Cities and Community).

১২। দায়িত্বশীল উৎপাদন এবং ভোগ (Responsible Consumption and Production).

১৩।  জলবায়ু সংক্রান্ত কার্যক্রম (Climate Action).

১৪।  পানির নীচের জীবন সম্পর্কিত কার্যক্রম (Life Below Water).

১৫।  ভূমির উপর জীবন সম্পর্কিত কার্যক্রম (Life on Land).

১৬। শান্তি, বিচার ও সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠানসমূহ (Peace, Justice and Strong Institutions).

১৭।  লক্ষ্যসমূহ অর্জনে অংশীদারিত্ব (Partnership for the Goals).

আগামী দশকে অর্থাৎ ২০২০ থেকে ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে আমাদের দেশে এবং অর্থনীতিতে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে সে দিকে যদি আমরা একটু দৃষ্টি দেই, তাহলে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো আমরা লক্ষ্য করতে পারব।

১। মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে। মাথা পিছু গড় আয় বৃদ্ধি পাবে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে মাথা পিছু গড় আয় ১৭৫১ মার্কিন ডলার যা টাকার অংকে মাসিক ১২,২৬০ টাকা। চলতি অর্থ বছরে এ পর্যন্ত মাথাপিছু গড় আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলার যা টাকার অংকে মাসিক ১৩,৩৬৩ টাকা। আর এই গড় আয় যদি কমপক্ষে ৫শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়, তবে ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দে তা হবে ৩১৫০ মার্কিন ডলার যা টাকার অংকে বর্তমান বাজার মূল্যে হবে মাসিক ২২,০৫০ টাকা। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা এবং ভোগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।

২।  সহস্রাব্দ লক্ষ্য মাত্রা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে, যদি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা অর্জনেও অনুরূপ সাফল্য অর্জন করতে পারে, তবে দেশ উন্নত দেশের কাছাকাছি পৌঁছাবে। বৈদেশিক ঋণ এবং সহায়তার পরিমাণ সয়ংক্রিয়ভাবে কমবে। অর্থনীতির আকার বৃদ্ধি পাবে এবং পাশাপাশি প্রতিযোগিতাও বৃদ্ধি পাবে।

৩। বৈদেশিক অনুদানের পরিমান কমবে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়বে। কিছু কিছু সংস্থা এবং প্রকল্প অনুদানের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু কার্যক্রমগুলোর প্রয়োজন থাকবে। যার জন্য নিজস্ব অর্থায়ন প্রয়োজন হবে। সমবায় সমিতিগুলোকে হয়তো সেক্ষেত্রে দায়িত্ব নিতে হবে।

আরো পড়ুন: আফ্রিকার উগান্ডায় ব্রাদার নিহত

৪। বেকার যুবক-যুবতীদের সংখ্যা বাড়বে। শ্রমবাজারে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। কিন্তু যে পরিমাণ চাকরি প্রত্যাশী থাকবে সে তুলনায় কর্মসংস্থান হবে না। তখনও কর্মসংস্থান একটি চ্যালেঞ্জ থেকে যাবে।

৫। তথ্য প্রযুক্তির আরও উন্নতি ঘটবে, সকল খাতই প্রযুক্তি নিভর্র হবে। তথ্য এবং প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করবে দেশ, সমাজ এবং বিশ্বকে।

৬। মানুষের জীবন ধারার পরিবর্তন ঘটবে। কৃষি সংকোচিত হবে; তথ্য প্রযুক্তি প্রথাগত অনেক খাতকে নিয়ন্ত্রণ করবে; তবে নতুন সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচিত হবে।

৭। অভিবাসনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে দক্ষ জনশক্তি দেশের বাইরে চলে যাবে।

৮। পরিবেশ হুমকির সন্মুখী হবে এবং নতুন নতুন সামাজিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।

পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আমাদের করণীয়ঃ- অর্থনীতি এবং রাজনীতির স্বাভাবিক গতিধারায় দেশ ও সমাজ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশিত এবং কাঙ্খিত। পরিবর্তনশীল সেই পরিবেশের সাথে আমাদের খাপ খাইয়ে চলতে হবে নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থেই।

  •  সমবায় সমিতির নেতৃত্বকে এই পরিবর্তনের বিষয়গুলোকে আগে থেকেই উপলব্ধি এবং চিন্তার মধ্যে নিতে হবে। পরিবর্তনকে স্বাগত জানাতে হবে এবং তার সাথে তালমিলিয়ে চলার প্রস্তুতি নিতে হবে।
  •   সমিতিগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে। অর্থ বাজারের অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
  •   নিজেদের মধ্যে ঐক্য, সমঝোতা এবং সম্পদ ভাগাভাগি করে ব্যবহার করার মন মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে।
  •  সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। দক্ষ নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। ধারাবাহিক নেতৃত্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সনাতনী ধারার নেতৃত্বের বিপরীতে ভিশনারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।
  •  ক্রেডিট ইউনিয়নের আধুনিক ও নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা এবং কলাকৌশলগুলোকে ব্যবহার করে টেকসই ক্রেডিট ইউনিয়ন বা সমাবায় সমিতি গড়ে তুলতে হবে।
  •   আগামী দিনের মন্ডলী এবং স্থানীয় সমাজকে স্বাবলম্বী হতে হবে। নিজস্ব সম্পদকে আরো কার্যকরীভাবে কাজে লাগাতে হবে। সম্পদের সর্বাত্মক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদকেও কাজে লাগাতে হবে।
  •  সমবায় সমিতিগুলোকে আরো উপযোগী ও সামজের চাহিদার প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। নতুন প্রডাক্ট, নতুন বাজার এবং বিনিয়োগ ক্ষেত্র খুজে বের করতে হবে।
  •  প্রতিটি ক্রেডিট ইউনিয়ন বা সমবায় সমিতিকেই কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তার আলোকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
  •  সর্বোপরি ওপরে উল্লিখিত সমবায় আন্দোলনের বর্তমান চ্যালেঞ্জ বা সমস্যাগুলোকে সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নিয়ে সমবায় সমিতিগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

ঢাকা ক্রেডিট বাংলাদেশের প্রথম ক্রেডিট ইউনিয়ন। এর ৬৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী মানে বাংলাদেশে ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। স্বাভাবিক কারণেই এ আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব অনেকটাই ঢাকা ক্রেডিটের ওপর বর্তায়। ঢাকা ক্রেডিট অবশ্য সে দায়িত্ব পালনে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।  ঢাকা ক্রেডিটের সদস্য হিসেবে আমাদের সবারই গর্ববোধ করা উচিত। কারণ, এ আন্দোলনের সূচনা থেকে এ যাবৎ আমরা এর সাথে রয়েছি। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এ দিনে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বর্গীয় আর্চবিশপ লরেন্স এল. গ্রেনার এবং ফাদার চার্লস যোসেফ ইয়ংকে, যাঁরা এ দেশে ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ ভরে স্মরণ করছি প্রয়াত ও জীবিত সকল নেতৃবৃন্দকে যাঁদের নিরলস পরিশ্রমে ক্রেডিট ইউনিয়নটি আজকের এ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি স্মরণ করছি প্রয়াত সকল সদস্যকে যাঁদের অবদান রয়েছে আমাদের এই অবস্থায় আসার পিছনে। ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা কমিটি, কর্মী বাহিনী, সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং এর উত্তরোত্তর সাফল্য কমনা করছি।

লেখক: প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, ঢাকা ক্রেডিট

(লেখাটি ঢাকা ক্রেডিটের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সমবার্তায় পূর্বে প্রকাশিত হয়েছে)

আরো পড়ুন

শেরপুরে খ্রিষ্টান কিশোরীর ধর্ষণের মামলা তুলে নিতে জীবননাশের হুমকি

বিশ্বে যোগাযোগের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভাল ইংরেজি জানা

ঢাকার ক্রেডিটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

খ্রিষ্টান সমাজের ৯ জনকে সম্মাননা দিল ঢাকা ক্রেডিট

আফ্রিকার উগান্ডায় ব্রাদার নিহত