শিরোনাম :
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান এক্য পরিষদের সকাল-সন্ধ্যা গণ অনশন: নির্বাচনী ইশতেহার পূরণ করেনি আওয়ামী লীগ সরকার
ডিসিনিউজ ।। ঢাকা
রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান এক্য পরিষদের সকাল-সন্ধ্যা গণ অনশনের ডাক দিয়েছে। সেই লক্ষে শাহবাগ চত্বরে চলছে অনশন।
সংগঠনটির দাবি বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে যে ইশতেহার দিয়েছিল, তার পূরণ করেনি। বরং সংখ্যালঘুদের আরো বেশি কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে। সেই সাথে নির্যাতন, মন্দির বা সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী আক্রমনসহ নানা ধরনের দমন-নিপীড়ন চালানো হয়েছে।
২২ অক্টোবর (শনিবার) ঢাকায় শাহবাগ চত্বরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চিরতরে বন্ধসহ সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের দাবিতে সারাদেশে জেলা/ মহানগর ও থানা/ উপজেলা/ পৌরসভায় সকাল-সন্ধ্যা গণ-অনশন পালন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
অনশন স্থল থেকে ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারি দলের প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়ন করার জোরালো দাবি জানানো হয়- ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারি দলের প্রতিশ্রুতিগুলো ছিল:
১) সংখ্যালঘু সুরহ্মা আইন প্রণয়ন;
২) বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন;
৩) দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন;
৪) জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন;
৫) অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন;
৬) পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভ‚মি কমিশন গঠন;
৭) সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভ‚মি কমিশন গঠন;
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের গণ-অনশনে উপস্থিত হয়ে সংহতি জানিয়ে রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা একাত্মতা প্রকাশ করেন।
ঐক্য পরিষদের এই গণ-অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ইতিমধ্যে বৈষম্যবিলোপ আইন সংসদে উঠেছে। আশা করছি এটি অবিলম্বে পাস হবে। সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন বিষয়ে সরকার কি করবে, কতখানি করবে, আমার জানা নেই। আমাদের তরফ থেকে নিশ্চিতভাবে আগামী অধিবেশনে যখন সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে, তখন এসব প্রস্তাব নিয়ে আসব।
পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রতি মুহূর্তে কথা বলার চেষ্টা করছি। এখন প্রয়োজন সবাইকে আরও বেশি করে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। ঐক্য পরিষদ নির্বাচনের আগেই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। এই প্রচেষ্টার সঙ্গে আছেন বলেও জানান রাশেদ খান মেনন।
গণ-অনশনে সংহিত জানিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ও সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার, একটিরও বিচারকাজ শেষ হয়নি। যদি একটি ঘটনারও বিচার হতো, তাহলে এই সহিংসতা করার যে প্রচেষ্টা, তা বন্ধ হতে পারত।
ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একটি সুন্দর নির্বাচনী ম্যানুফেস্টু বা ইশতেহার নিয়ে এসেছিল। আমরা সেই ইশতেহারে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তা পূরণ করেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্পদায়িক বাংলাদেশের বদলে এখন বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক তৎপরতা দেখা যায়, যা স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার, তারপরও সাম্প্রদায়িক তৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না। আমরা অনতিবিলম্বে ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বলেন, ‘আমরা আমাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে গিয়েছি। এখনো বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবীগুলো পূরণ করবেন। আমরা সংখ্যালঘুরা একটি অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধ চেতনার বাংলাদেশ দেখতে চাই।’
ঐক্য পরিষদের এই গণ-অনশনে রাশেদ খান মেনন, মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, নির্মল রোজারিওসহ বিভিন্ন সংগঠন ও অঙ্গসংগঠন যোগদান করেন।
গণ-অনশনের সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দরা এদিন যোগ দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির গিলবার্ট গমেজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা জোনাস গমেজ, জন অরুনেস বাড়ৈ, মনোজ ক্লেমেন্ট গমেজ, জনি গমেজ, রুবেল রড্রিগস্, পাপিয়া হালদার, রোজমেরী জয়ধর, মার্ক সুমন বৈরাগী, সাইমন হালদারসহ আরো অনেকে।
ঐক্য পরিষদ নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়ন দাবিতে চলতি বছরের ২৪ মার্চ প্রায় আড়াই লাখ মানুষের গণস্বাক্ষর করা একটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়। তারপর ৯০ দিন পার হয়ে গেলেও সেসব প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ না দেখা যাওয়ায় ১৬ জুলাই সারা দেশে তারা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে। এসব দাবি বাস্তবায়িত না হওয়ায় আজকে দেশব্যাপী গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করছে।