শিরোনাম :
|| সুমন কোড়াইয়া || ডিসি নিউজ ||
বর্তমান সময়ে রাস্তাঘাটে বের হলেই ভুল বানান চোখে পড়ে। ব্যানার, পোস্টার, সাইনবোর্ড, রেস্টুরেন্টের খাবারের তালিকায় ভুল বানান খুঁজতে বেগ পেতে হয় না। এদিক-সেদিক তাকালেই বাংলা বানানের দুর্দশা চোখে পড়বে। ভুল বানান আরো বেশি চোখে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
যানবাহনগুলোর পেছনে নানান ধরনের উপদেশমূলক বাণী লেখা থাকে। প্রায় সময় সে বানানগুলোতেও ভুল চোখে পড়ে। শিক্ষার্থীরা বানান মূলত শিখে স্কুলের বই থেকে। সাধারণ মানুষ বানান অনুসরণ করেন গণমাধ্যমে ব্যবহার করা বানান থেকে। যেমন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা পড়ে সেগুলো থেকেই বানান সম্পর্কে একটা ধারণা পান সাধারণ মানুষ। তাই গণমাধ্যমও শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে। তাই গণমাধ্যমের নিকট হতে সাধারণ মানুষ শুদ্ধ বানানই প্রত্যাশা করে।
নিচে কিছু শুদ্ধ ও অশুদ্ধ বানান দেওয়া হলো যা আমরা প্রায়ই ভুল করে থাকি:
স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভুল বানান লেখার জন্য নম্বর কম পেয়ে থাকে। ভুল বানান লেখার প্রভাব পড়ে শিক্ষার্থীদের জীবনে। পরীক্ষার ফল ভালো না থাকায় ভবিষ্যতে তিনি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ নাও পেতে পারেন। যা প্রভাব পড়ে তাঁর জীবনে ক্যারিয়ার গঠনে।
মিশনারি স্কুলের একজন প্রধান শিক্ষক ডিসিনিউজকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক বাংলা একাডেমির বানান অনুসারে প্রণীত এবং আমরা বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধান থেকে শিক্ষার্থীদের বাংলা বানান শেখাই। কোনো শিক্ষার্থী একাধিক বানান ভুল করলে সেসব বানানের জন্য অন্য শিক্ষার্থীর চেয়ে নম্বর কম পায়। তাই শিক্ষার্থীদের বাংলা একাডেমির বানান স্কুলের খাতায় লিখতে হবে।’
বানান বা ভুল বাক্য লেখা সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, না জেনে বানান ভুল লেখা সামান্য হলেও সেখানে আপত্তি থাকবে। কারণ, এটা নিজের ভাষা যত্ন করে না শেখার ফল। তিনি বলেন, ‘ইংরেজি ভাষার বানান ভুল হলে আমরা লজ্জিত হই বা আরেকজন হাসবে বা ভর্ৎসনা করবে, এই ভয়ে আমরা তটস্থ থাকি। খুবই যত্ন করে ইংরেজিটা শিখি। কিন্তু নিজের মাতৃভাষা বলে বাংলাকে অবহেলা করে শিখি, যত্ন নিয়ে শিখি না। যার ফলে বানানে, ভাষায় বা বাক্যবিন্যাস সম্পর্কে আমাদের অযত্নের ছাপ থাকে।’
যত্ন নিয়ে নিজের ভাষা শেখার দরকার আছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। তিনি বলেন, বানান ও ভাষার বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে হবে। ভাষার মাসে বা সারা বছর এই বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাইফিন রুবাইয়াত বলেন, ‘বানান অবশ্যই শুদ্ধ করে বলতে এবং লিখতে পারা উচিত। বানান ভুল হয় অজ্ঞতা থেকে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখার ক্ষেত্রে ফোনেটিক ব্যবহার হয়। এতেও বানান ভুল হয়। এ জন্য প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা কাটাতে হবে।’
ভাষাকে ভালোবাসতে হবে বলে জানান সাইফিন রুবাইয়াত । এ জন্য তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাষা ও বানানের প্রতি জোর দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বানান চর্চার জন্য শিক্ষার গোড়ায় আমাদের হাত দেওয়া দরকার। ভাষা শিক্ষার ভিত তৈরি হয় বিদ্যালয়ে। স্কুলগুলো হয়তো বানানগুলোর ব্যাপারে যত্নশীল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যা দেখি, ভাষাসম্পর্কিত যেসব বিষয় আছে সেসব বিষয় ছাড়া বা অন্য বিষয়ে বানানের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। সব জায়গায় যেহেতু বাংলাকে এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাই শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হবে।’
নিচে কিছু শুদ্ধ ও অশুদ্ধ বানান দেওয়া হলো যা আমরা প্রায়ই ভুল করে থাকি:
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পাঠ্যপুস্তকে বা ফরমাল ভাষা শিক্ষাটা যেন সঠিকভাবে হয়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।
অন্যদিকে, কোনো ব্যক্তি, স্থান, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার নাম যে বানানে লেখা হয়, সে বানানই অনুসরণ করতে হবে। যেমন ‘খোকন কোড়াইয়া’ না লিখে লিখতে হবে ‘খোকন কোড়ায়া’; ‘বাংলা একাডেমী’ না লিখে লিখতে হবে ‘বাংলা একাডেমি’ কিংবা ‘বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোশিয়েশন’ না লিখে লিখতে হবে ‘বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন’, ‘দি খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা’ না লিখে লিখতে হবে ‘দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা’ ।