শিরোনাম :
বানিয়ারচর বোমা হামলার ২১ বছর পরও বিচারের দাবি: বিসিএ’র আলোর মিছিল
ডিসিনিউজ ।। ঢাকা
২১ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে বানিয়ারচর কাথলিক গির্জায় বোমা হামলায় নিহতের স্বজনরা। ২১ বছর কেটে গেলেও এখনো কোনো চার্জশীট দাখিল করা হয়নি সেই নরকীয় হত্যাযজ্ঞের। বিচারের দাবি আদায়ে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন (বিসিএ) প্রতিনিয়তই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
বিচারের দাবিতে ৫ জুন, সন্ধ্যায় বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও আলোর মিছিলের আয়োজন করে। তাঁদের দাবি একটিই, দ্রæত বোমা হামলার চার্জশীট দাখিল এবং জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। এ ছাড়াও এদিন সন্ধ্যা ৬টায় নিহতদের আত্মার চিরশান্তি কামনায় প্রার্থনানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রার্থনানুষ্ঠানের খ্রিষ্টযাগে নিহতদের আত্মার চিরশান্তি কামনাসহ আহতদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সুন্দর হওয়ার জন্য প্রাথর্না করা হয়।
এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া ডিসিনিউজকে জানান, ‘যতদিন বানিয়ারচর বোমা হামলার সঠিক বিচার না হবে, ততোদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। সরকার টালবাহানা করে বিভিন্ন সময়ে এই মামলা বিলম্বিত করছে। দীর্ঘ ২১ বছর পরও নিরীহ খ্রিষ্টানরা সেই দিনের বিচারের আশায় মুখিয়ে রয়েছে। সরকার ও প্রশাসনকে ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বিচার করতেই হবে। তা না হলে আমরা রাজপথে আন্দোলন চালিয়েই যাব।’
২০০১ সালের ৩ জুন গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুর থানাধীন বানিয়ারচর কাথলিক চার্চে সকালের রবিবাসরীয় প্রার্থনা চলাকালে জঙ্গীগোষ্ঠির বোমা হামলায় ১০ জন নিরীহ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছিল। আহত হয়েছিল আরো ২৬ জন, যারা এখনো সেই দিনের মর্মান্তিক বেদনা বহন করে যাচ্ছে। ২১ বছর পরও কোনো প্রকার বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, এমনকি চার্জশীট দাখিলও করা হয়নি। ২১ বৎসরে কমপক্ষে ১৭ বার ইনভেস্টিগেশন অফিসার (আইও) পরিবর্তন করা হয়েছে, কিন্তু কোনো রকম চার্জশীট দাখিল করা হয়নি।
অপর দিকে গত ২০১৬ সালের ৫ জুন নাটোর জেলার বরাইগ্রাম থানাধীন বনপাড়ায় জঙ্গিরা নিরীহ মুদি দোকানদার সুনীল গমেজকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। এই হত্যাকান্ডেরও এখনো সুষ্ঠু বিচার হয়নি।
২১ বছরে বানিয়ারচর বোমা হামলার ঘটনা ও নিরীহ সুনীল গমেজ হত্যার বিচার না হওয়াতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও। বিক্ষোভ আন্দোলনের আলোচনায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের জন্য সত্যিই এটি একটি হতাশা ও দুর্নাম। দীর্ঘ ২১ বছর কেটে গেল, এখনো বানিয়ারচর বোমা হামলায় নিহতের পরিবার কোনো বিচার পেল না। তারচেয়েও আশ্চার্যজনক ও বেদনার বিষয় হলো ১৭ বার তদন্ত অফিসার পরিবর্তন হলো, কিন্তু চার্জশীট পর্যন্ত দাখিল করতে পারলো না। এরচেয়ে বড় লজ্জা ও হতাশার কিছু আর হতে পারে না। আমরা বিচার না পাওয়া পর্যন্ত দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়েই যাব। প্রশাসনকে সেই দিনের বিচারের সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পক্ষের এবং অসাম্প্রদায়িক সরকার। যদি তাই হয়, তবে ২১ বছর কেন বানিয়ারচরের মামলার সুরহা হবে না! কোন অদৃশ্য শক্তির জন্য সঠিক বিচার হচ্ছে না? অন্যদিকে সুনীল গমেজের মতো একজন নিরীহ মুদি দোকানীকেও ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়ার জন্য প্রাণ দিতে হয়। সরকারের উচিত, এসব ঘটনার দ্রæত সঠিক তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করা। তা না হলে সকল মহলে জবাবদিহীতা ও সরকারের অগ্রহণযোগ্য সৃষ্টি হবে।’
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন এসোসিয়েশনের যুগ্ম-মহাসচিব জেমস্ সুব্রত হাজরা, তেজগাঁও চার্চের পা-পুরোহিত ফাদার সুব্রত বি. গমেজ, প্যারিস কাউন্সিলের সহ-সভাপতি ও ঢাকা ক্রেডিটের হাসপাতাল কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার জর্জ ঘোষ, এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা জোনাস গমেজ বক্তব্য রাখেন।
আলোর মিছিল ও আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক থিওফিল রোজারিও, মট্স’র পরিচালক ডমিনিক দিলু পিরিছ, কাককোর ভাইস-চেয়ারম্যান অনিল লিও কস্তা, সেক্রেটারি ডমিনিক রঞ্জন পিউরীফিকেশন, ঢাকা ক্রেডিটের পরিচালনা পর্ষদসহ হাজারো খ্রিষ্টভক্ত।