শিরোনাম :
বান্দরবানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘প্রবারণা পূর্ণিমা’ ও মহামঙ্গল রথ শোভা যাত্রা পালন
৫-৬ অক্টোবর, বান্দরবানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘প্রবারণা পূর্ণিমা’ (ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে) ও মহামঙ্গল রথ শোভা যাত্রা, ফানুস উড়ানো ও কল্পজাহাজ ভাসানো উৎসব উদ্যাপন করা হয়েছে। উপলক্ষ্যে বান্দরবানে উৎসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করেছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কেয়াংগুলোতে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার আচরণ, ধর্মীয় দেশনা ( ধর্মীয় উপদেশকে ‘দেশনা’ বলা হয়)। বর্ণীল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে কেয়াংগুলো।
৫ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা শহরের রাজবাড়ি রাজার মাঠে সন্ধ্যায় প্রথম ফানুসটি উড়িয়ে ও মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে দুইদিন ব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি, ঊশৈসিং।
৬তারিখ শুক্রবার সন্ধ্যায় সুদৃশ্য এবং সুসজ্জিত মহামঙ্গল রথ শোভা যাত্রা শহরের রাজবাড়ি মাঠ থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শঙ্খ নদে বিসর্জন দেয়া হয়। বিভিন্ন সড়কে অপেক্ষমান পূণ্যার্থীগণ এ সময় মঙ্গল রথে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে প্রার্থনা ও বিশেষ আর্শিবাদ কামনা করেন।
বৌদ্ধ ভিক্ষু, ভান্তেগণ এবং কিছুসংখ্যক সাধারণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীগণ তিনমাস ব্যাপী ‘ওয়াহ’ পালন করেন। ‘ওয়াহ’ অর্থ তিনমাস যাবত তাঁরা কয়েকটি বিষয়ে ত্যাগস্বীকার করার অঙ্গীকার করেন। যেমন – মিথ্যা কথা না বলা, প্রাণী হত্যা না করা, মাংস না খাওয়া, নেশাদ্রব্য সেবণ না করা ইত্যাদি। যেটা ভিক্ষু ও ভান্তেগণই বেশী পালন করেন। যেমন, তারা তিনমাস প্রার্থনা ও উপাসনা ব্যতীত পারতপক্ষে জনসমক্ষে আসেন না। এ তিন মাস গভীর ধ্যানে মগ্ন এবং কঠোরভাবে ‘বর্ষাবাস’ পালন শেষে ভিক্ষু ও ভান্তেগণ আশ্বিন মাসের পূর্ণিমার দিন জনসমক্ষে আসেন এবং ভগবান বুদ্ধের অনুসারীদের দেশনা দিয়ে থাকেন।
‘ওয়াহ’ বা প্রবারণা পূর্ণিমার বিশেষ উল্লেখযোগ্য এবং উপভোগ্য দিক হলো ফানুস উড়ানো। এ দিন বান্দরবানের আকাশ আলোকিত হয় বর্ণিল ফানুস দিয়ে। সাথে থাকে আতসবাজির উৎসব।
খুব ভোর থেকেই কেয়াংগুলোতে বৌদ্ধধর্মীয় গান ও মন্ত্র পাঠ শুরু হয়। সারা দিন মন্ত্রপাঠ ও গানবাজনার পরে সন্ধ্যাবেলায় শুরু হয় ফানুস ও আতসবাজি উৎসব। সব বয়সের মানুষ এতে অংশ নেয়। বিশেষ করে যুবকযুবতী ও শিশুরা ফানুস ও আতসবাজি উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হয়।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউটের সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা মিঃ চথুই মারমা বলেন, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিনমাস বর্ষাবাস শেষে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে অনুষ্ঠানটি উদ্যাপন করা হয় এবং ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক’ এ শুভকামনা করা হয়।
পাবর্ত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকায় প্রতিবছর বিশেষ করে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে এ উৎসব আনন্দমূখর পরিবেশে পালন করা হয়।
আরবি/আরপি/ ৮ অক্টোবর, ২০১৭