ঢাকা ,
বার : রবিবার
তারিখ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ফিচার বাড়ছে ডেঙ্গুর ভয়বহতা, সচেতনতাই এর প্রতিরোধের উপায়

বাড়ছে ডেঙ্গুর ভয়বহতা, সচেতনতাই এর প্রতিরোধের উপায়

0
340

মৌসুমী মারিয়া রোজারিও।। স্ট্যাফ রিপোর্টার।। ডিসিনিউজ

ডেঙ্গু জ্বরের ধরন:
ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ধরন বা ক্যাটাগরি আছে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির।
ডেঙ্গু জ্বর (সমার্থক ভিন্ন বানান ডেঙ্গি) একটি এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। উপসর্গগুলির মাঝে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি। দুই থেকে সাত দিনের মাঝে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ নিতে পারে যাকে ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বর (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার) বলা হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়, রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কখনো’বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়।

ডেঙ্গু’র ইতিহাস:
সম্ভাব্য ডেঙ্গু জ্বরের ঘটনার প্রথম বিবরণ পাওয়া জিন বংশের (২৬৫-৪২০ খ্রীষ্টাব্দ) এক চীনা মেডিক্যাল এনসাইক্লোপিডিয়ায় (বিশ্বকোশ) যেখানে উড়ন্ত পতঙ্গের সাথে সম্পর্কযুক্ত “জলীয় বিষ”-এর কথা বলা হয়েছে। ১৭শ শতাব্দীর এক মহামারীর বিবরণও পাওয়া যায়, কিন্তু ডেঙ্গু মহামারীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রথম বিবরণ পাওয়া যায় ১৭৭৯ ও ১৭৮০ তে, যখন এক মহামারীর কবলে পড়েছিল এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকা, তখন থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত মহামারী অনিয়মিত ছিল।
১৯০৬ সালে “এডিস ইজিপ্তাই” মশার পরিবাহিতা সম্পর্কে সবাই নিশ্চিত হয় এবং ১৯০৭ সালে ভাইরাস ঘটিত রোগের মধ্যে ডেঙ্গু হয়ে ওঠে দ্বিতীয় (ইয়েলো ফিভার-এর পরেই)। জন বার্টন ক্লেল্যান্ড এবং জোসেফ ফ্র্যাঙ্কলিন সিলার আরো গবেষণা চালিয়ে ডেঙ্গু পরিবাহিতার মূল প্রতিপাদ্য সম্পূর্ণ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ও তারপর ডেঙ্গুর লক্ষণীয় বিস্তারের কারণ হিসাবে পরিবেশগত ধ্বংসের কথা বলা হয়। রোগের এই চরম রূপের বিবরণ ১৯৫৩ সালে প্রথম ফিলিপাইন্সে পাওয়া যায়। ১৯৭০-এ একটি শিশু মৃত্যুর এক প্রধান কারণ হয়ে ওঠে এবং আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এর প্রার্দুভাব দেখা দেয়। ১৯৮১ সালে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম প্রথম পরিলক্ষিত হয়।

ডেঙ্গু শব্দের উদ্ভবান:
“ডেঙ্গু” শব্দের উদ্ভব পরিষ্কার নয়, তবে একটা মত হল এটি এসেছে সোয়াহিলি (ঝধিযরষর) শব্দ কা-ডিঙ্গা পেপো, যার অর্থ দুষ্ট আত্নার কারণে ঘটিত রোগ। সোয়াহিলি (ঝধিযরষর) শব্দ “ডিঙ্গা” খুব সম্ভব স্পেনীয় শব্দ “ডেঙ্গু”র মূলে আছে যার অর্থ খুঁতখুঁতে বা সাবধানী, যা ডেঙ্গু জ্বরের হাড়ের ব্যথায় আক্রান্ত ব্যক্তির চলনকে বর্ণনা করে। তবে, এটাও সম্ভব যে এই স্পেনীয় শব্দের ব্যবহার একই উচ্চারণের সোয়াহিলি (ঝধিযরষর) থেকে এসেছে। বলা হয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রীতদাসদের মধ্যে যাদের ডেঙ্গু হত তাদের ভঙ্গিমা ও চলন ডান্ডি (নৌকা)র মত হয়ে যেত আর তাই রোগটি “ডান্ডি জ্বর” নামে পরিচিত ছিল।
“ব্রেক বোন ফিভার” শব্দটি প্রথম প্রয়োগ করেন পদার্থবিদ ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বেঞ্জামিন রাশ। ১৭৮০ সালের ফিলাডেলফিয়ার মহামারীর উপর ১৭৮৯ সালে লিখিত এক রিপোর্টে। রিপোর্টে তিনি মূলতঃ “বিলিয়াস রেমিটিং ফিভার”শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৮২৮-এর পর ডেঙ্গু জ¦র শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। অন্যান্য ঐতিহাসিক শব্দের মধ্যে আছে “ব্রেকহার্ট ফিভার” এবং “লা ডেঙ্গু”। প্রবল রোগের শব্দাবলীর মধ্যে আছে “ইনফেকচুয়াস থ্রম্বোসাইটোপেনিক পার্পারা” এবং “ফিলিপাইন”, “থাই”, বা “সিঙ্গাপুর হেমোরেজিক ফিভার”।

বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী:
রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগী আবার বাড়ছে। দেশে গত বছরের তুলনায় এ বছর পাঁচ গুণ বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সবাইকে বাসাবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনাচার পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। রাজধানীতে আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগই ভর্তি হন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখানে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রায় অর্ধেক রোগীই যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
আগে বলা হতো বর্ষাকালে মানে আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর হচ্ছে এডিস মশার ব্রিডিং সময়। এ সময় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ে। তবে সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, ডেঙ্গু এখন মৌসুমি রোগ নয়। প্রায় সারা বছরই এই জ্বরে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এখন এপ্রিল – মে থেকেই দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এর মানে হলো ভাইরাস যেমন তার স্বভাব পাল্টাচ্ছে, তেমনি পাল্টাচ্ছে এডিস মশাও। এর একটি কারণ হলো, প্রায় সারা বছর খোঁড়াখুঁড়ি আর নির্মাণকাজের জন্য শহরে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকে তাই বর্ষাকাল ছাড়াও এডিস মশা প্রজননের জন্য উপযোগী পরিবেশ পাচ্ছে সারা বছর।
গত বছরের তুলনায় ৫ গুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে গত বছরের তুলনায় ৫ গুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। এ জন্য সবার উচিত বাসাবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন রাখা ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবন-যাপন করা।
জানুয়ারি’২০২৩ থেকে ২৮ মে’২০২৩ পর্যন্ত ১ হাজার ৭০৪ জন ডেঙ্গু রোগী পেয়েছি। এ সময়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা যদি গত বছরের তুলনা করি, এ বছর রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ গুণ বেশি অর্থাৎ অনেক রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ:
ডেঙ্গু ভাইরাসের কোন স্বীকৃত টিকা বা ভ্যাকসিন নেই। সুতরাং মশার বংশ বিস্তারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যে সব প্রতিষেধক পাওয়া যায় তা ব্যবহার করা এবং বাসার আশপাশের আঙিনা পরিষ্কার রাখা, নিজের ঘরে ও আশপাশে যদি জঙ্গল থাকে তাহলে মশা নিধণ স্প্রে ব্যবহার করুন এবং পানি বা যদি অন্য কিছু যদি জমে থাকে সেগুলো সরিয়ে ফেলুন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পাঁচটি মৌলিক ও সংবদ্ধ একমুখী নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর সুপারিশ করেছে: (১) প্রচার, সামাজিক সক্রিয়তা, এবং জনস্বাস্থ্য সংগঠন ও সমুদায়সমূহকে শক্তিশালী করতে আইন প্রণয়ন, (২) স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিভাগসমূহের মধ্যে সহযোগিতা (সরকারী ও বেসরকারী), (৩) সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহার করে রোগ নিয়ন্ত্রণে সুসম্বদ্ধ প্রয়াস, (৪) যে কোন হস্তক্ষেপ যাতে সঠিক লক্ষ্যবস্তুতে হয় তা সুনিশ্চিত করতে প্রমাণ-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং (৫) স্থানীয় অবস্থায় পর্যাপ্ত সাড়া পেতে সক্ষমতা বৃদ্ধি।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অতীতে যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত দুই সপ্তাহে অন্তত আটজন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে চিকিৎসকও আছেন। স্বাভাবিকভাবেই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে মানুষের মাঝে প্রবল উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ। এটি বিশ্বের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে সাধারণ। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগে তখনই আক্রান্ত হয় যখন মশা একটি সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয় এবং তারপর ভাইরাস বহন করার সময় একটি অ-সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয়। দেশে প্রতিদিনই ডেঙ্গু জ্বরের রোগী শনাক্ত হচ্ছে। দিনদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সংক্রমণটিকে মোটেই অবহেলা করা মত নয়, যার কারণ হচ্ছে, এটি গুরুতর পর্যায়ে চলে গেলে মৃত্যুর আশঙ্কা আছে। শরীরে কোন কোন লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কী হতে পারে?
এখানে ডেঙ্গু সংক্রমণের লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা উল্লেখ করা হলো।
১. ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো কী?
সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেবার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। এর সাথে শরীরে ব্যথা মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।
২. জ্বর হলেই কি চিন্তিত হবেন?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলছেন, এখন যেহেতু ডেঙ্গু সময়, সেজন্য জ্বর হল অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বরে আক্রান্ত হলেই সাথে-সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ। তিনি বলছেন, ”ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তারা জ্বরকে অবহেলা করেছেন। জ্বরের সাথে যদি সর্দি- কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোন বিষয় জড়িত থাকে তাহলে সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্যকিছু হতে পারে। তবে জ্বর হলেই সচেতন থাকতে হবে।”
৩. বিশ্রামে থাকতে হবে
সরকারের কমিউনিক্যাবল ডিজিজ কন্ট্রোল বা সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের অন্যতম পরিচালক ড. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ”জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, জ্বর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, সেগুলো না করাই ভালো। পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন।”
৪. কী খাবেন?
প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন – ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
৫. যেসব ঔষধ খাওয়া উচিত নয়
অধ্যাপক তাহমিনা বলেন, ”ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে।”
চিকিৎসকরা বলছেন, প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
৬. প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা নিয়ে চিন্তিত?
ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা এখন আর মূল ফ্যাক্টর নয় বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক তাহমিনা। তিনি বলেন, ”প্ল্যাটিলেট কাউন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কোন প্রয়োজন নেই। বিষয়টি চিকিৎসকের উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো।”
সাধারণত একজন মানুষের রক্তে প্ল্যাটিলেট কাউন্ট থাকে দেড়-লাখ থেকে সাড়ে চার-লাখ পর্যন্ত।
৭. ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়?
ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। এ ভাগগুলো হচ্ছে – ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা নরমাল থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোন প্রয়োজন নেই। ‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না। অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হওয়াই ভালো।
‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ’র প্রয়োজন হতে পারে।
৮. ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল
সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে।
কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল আরো এগিয়ে এসেছে। এখন জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের সময় শুরু হয়ে যাচ্ছে।
৯. এডিস মশা কখন কামড়ায়
ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে এডিস মশা। ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে উঠে। এডিস মশা কখনো অন্ধকারে কামড়ায় না।
১০. পানি জমিয়ে না রাখা
অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলছেন, ”এডিস মশা ‘ভদ্র মশা’ হিসেবে পরিচিত। এসব মশা সুন্দর-সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এডিস মশা সাধারণত ডিম পাড়ে স্বচ্ছ পানিতে। কোথাও যাতে তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি জমা পানি না থাকে।
এ পানি যে কোন জায়গায় জমতে পারে। বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার কিংবা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে।

ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা:

  • ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বিশ্রাম নিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। শরীরে জলীয় অংশ বেশি থাকলে মাথাব্যথা ও পেশি ব্যথা কম হবে।
  • ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট কমে যায়। তাই প্লাটিলেট বাড়ে এমন খাবার খেতে হবে। যেমন- সাইট্রাস ফল, কাঠবাদাম, দই, সূর্যমুখী বীজ, গ্রিন টি, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, পালংশাক, আদা, রসুন ও হলুদ।
  • পেয়ারার শরবত পান করা যেতে পারে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই পানীয়টি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সকৃয় করে ডেঙ্গু সংক্রমণ উপশম করবে।
  • রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে নিম পাতার রস ভালো কাজ করে। এটি শ্বেত রক্তকনিকার সংখ্যাও বৃদ্ধি করে। নিম পাতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর গুণও আছে।ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্কতা
    ডেঙ্গু প্রতিরোধের মূলমন্ত্র এডিস মশার বিস্তার রোধ করা। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এ মশা তুলনামূলক পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানিতে বিস্তার করে। বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে সবচেয়ে বেশি। এ সময় বাড়ির আশপাশে পানি জমে এমন যায়গা, বদ্ধ জলাশয় পরিষ্কার রাখতে হবে। ফ্রিজ ও এসির পানি যেন না জমে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ফুলের টবে পানি জমতে দেবেন না। অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। দিনে ঘুমালে মশারি ব্যবহার করুন বা অ্যারোসল স্প্রে করুন। ডেঙ্গু মৌসুমে বাইরে গেলে হাত-পা ঢেকে থাকে এমন পোশাক পরুন। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সব সময় মশারির ভেতরে রাখুন। ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরপরই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।