ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ০৬ জানুয়ারী ২০২৫
বাংলা : ২২ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ বিনম্র শ্রদ্ধায় সুরকার সমর দাসের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

বিনম্র শ্রদ্ধায় সুরকার সমর দাসের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

0
171
মুখ ও মুখোশ, লটারী, মাটির পাহাড়, আসিয়া, গৌরী, ধীরে বহে মেঘনা, রাজা এলো শহরে প্রভৃতি ছবির সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

ডিসিনিউজ ॥ ঢাকা

খ্যাতিমান সুরকার ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত সমর দাসের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে।

২৫ সেপ্টেম্বর, পুরান ঢাকার ওয়ারী কবরাস্থানে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন, ঢাকা ক্রেডিট, সমর দাস স্মৃতি সংসদ, এসোসিয়েশনের সাংস্কৃতিক শাখা এবং লক্ষ্মীবাজার শাখার নেতৃবৃন্দ সমর দাসের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রার্থনায় অংশ নেন। এ দিন শুরুতেই সমর দাসের আত্মার চিরশান্তি কামনায় প্রার্থনা পরিচালনা করেন রেভারেন্ট দিলীপ সরকার।

শ্রদ্ধা নিবেদন ও প্রার্থনানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, সেক্রেটারি জেনারেল ও ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, এসোসিয়েশনের জয়েন্ট-সেক্রেটারি জেনারেল জেমস সুব্রত হাজরা, সমর দাসের ছেলে সুমন্ত দাস ছোটন, ঢাকা ক্রেডিটের বোর্ড অব ডিরেক্টর মনিকা গমেজ, ক্রেডিট কমিটির সদস্য উমা ম্যাগডেলিন গমেজ, লক্ষ্মীবাজার এসোসিয়েশন শাখার সেক্রেটারি ভিক্টর রে, ট্রেজারার প্রকাশ কোড়াইয়া, এসোসিয়েশনের সাংস্কৃতিক শাখার সভাপতি পল্লব রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের আইনবিয়ষক পরামর্শক অ্যাডভোকেট শাহীন ব্যাপারীসহ আরো অনেকে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি জেনারেল মি. কোড়াইয়া।

পুরান ঢাকার ওয়ারী কবরাস্থানে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন, ঢাকা ক্রেডিট, সমর দাস স্মৃতি সংসদ, এসোসিয়েশনের সাংস্কৃতিক শাখা এবং লক্ষ্মীবাজার শাখার নেতৃবৃন্দ সমর দাসের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রার্থনায় অংশ নেন।

এ সময় এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও সমর দাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘তিনি ছিলেন আমাদের গর্ব। তাঁর গান ৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করতো। সমর দাস রেডিও-টেলিভিশনে তৎকালীন সময়ে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি এসব সেক্টরের উন্নয়নের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন। আজ তাঁর আত্মার চিরকল্যাণ কামনা এবং শ্রদ্ধা জানাই।’

সেক্রেটারি জেনারেল ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বলেন, ‘সমর দাসের গান ছিল, মুক্তিযুদ্ধে হাতিয়ার। তিনি গান দিয়েই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর গানে মুক্তিসেনারা প্রেরণা লাভ করতো। আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁর গুণাবলী, দেশ প্রেম যেন আমরা আমাদের জীবনে ধারণ করতে পারি।’

সমর দাসের আত্মার চিরশান্তি কামনায় প্রার্থনা পরিচালনা করেন রেভারেন্ট দিলীপ সরকার।

সমর দাস

(১৯২৫-২০০১) সুরকার, যন্ত্রশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক। জন্ম: ১০ ডিসেম্বর ১৯২৫ সালে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে। পিতা জিতেন্দ্রনাথ দাস, মাতা কমলিনী দাস।

সমর দাস পারিবারিকভাবে সঙ্গীতের আবহে বেড়ে ওঠেন। প্রথমে পিতার কাছে শেখেন বেহালা, পরে নর্থ ফিল্ড নামক এক মিশনারীর কাছে শেখেন পিয়ানো, গিটার এবং বাঁশি। সেসঙ্গে অন্যান্য যন্ত্রসঙ্গীতেও তিনি দক্ষতা অর্জন করেন।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রধান সঙ্গীত সংগঠক ও সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা ছিল সমর দাসের সঙ্গীতে বহুমুখী পারদর্শিতা অর্জনের এক উজ্জ্বল ভূমিকা।

দেশভাগের (১৯৪৭) পরে ঢাকা কেন্দ্রিক নাগরিক সঙ্গীত ঐতিহ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দু’জন সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকারের অবদানকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়। সমর দাস তার মধ্যে একজন। তিনি ১৯৪৫ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিও ঢাকা কেন্দ্রে বাঁশিশিল্পী হিসেবে যোগদান করেন এবং কোলকাতা বেতারসহ কোলকাতা এইচ.এম.ভি গ্রামোফোন কোম্পানিতেও যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে কাজ করেন। এ গ্রামোফোন কোম্পানিতে তিনি কমল দাসগুপ্ত, অনুপম ঘটক, কালিপদ বসু প্রমুখ সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পীর সান্নিধ্য লাভ করেন। এ প্রখ্যাত শিল্পীদের সান্নিধ্য সমর দাসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

সমর দাস ১৯৫৩ সালে ঢাকা বেতারে এবং ১৯৬১ সালে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রে রেডিওর নিজস্ব শিল্পী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি কিছুকাল করাচীতে পিআইএ সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গীত বিভাগের প্রধান ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে উঠলে তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে এর সঙ্গে যুক্ত হন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রধান সঙ্গীত সংগঠক ও সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা ছিল সমর দাসের সঙ্গীতে বহুমুখী পারদর্শিতা অর্জনের এক উজ্জ্বল ভূমিকা।

বঙ্গবন্ধুর পছন্দের মানুষ ছিলেন সমর দাস।

তিনি মুখ ও মুখোশ, লটারী, মাটির পাহাড়, আসিয়া, গৌরী, ধীরে বহে মেঘনা, রাজা এলো শহরে প্রভৃতি ছবির সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। নদীর সন্তান, নবারুণ, বীরাঙ্গনা সখিনা, সোনার সবুজ গাঁয়ে ছবির নৃত্যনাট্যের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তিনি। লাহোরে অনুষ্ঠিত আফ্রো এশিয় সঙ্গীত সম্মেলনে (১৯৬৪) উপস্থাপিত সোনার সবুজ গাঁয়ে নৃত্যনাট্যের প্রযোজনা ও সঙ্গীত পরিচালনা এবং লন্ডনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ উৎসবে (১৯৬৬) সানস অব রিভার নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয় সমর দাসের পরিচালনায়। সমর দাসের মধ্যে মানবিক গুণেরও পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯৭০ সালে বঙ্গোপসাগরের ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস হলে দুর্গত মানুষকে সহায়তা করার জন্য পল্টন ময়দানে কাঁদো বাঙালি কাঁদো নামে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সমর দাস ছিলেন এর প্রধান উদ্যোক্তা।

নবগঠিত বাংলাদেশ বেতারের সিগনেচার টিউন বা সূচনা সঙ্গীত সমর দাসের কম্পোজ করা।

কলকাতার এইচ.এম.ভি কোম্পানি বাংলাদেশের ‘হৃদয় হতে’ (১৯৭২) নামে একটি লংপ্লে রেকর্ড প্রকাশ করে যাতে রয়েছে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ২৬টি গান। সমর দাস ছিলেন এ রেকর্ডের সঙ্গীত পরিচালক। তিনি ১৯৭২ সালে বিবিসিতে গিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের অক্রেস্ট্রেশন রেকর্ড করে আনেন। নবগঠিত বাংলাদেশ বেতারের সিগনেচার টিউন বা সূচনা সঙ্গীত সমর দাসের কম্পোজ করা। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ নামে দুটি এল.পি ডিস্ক প্রকাশ করার উদ্যোগ নিলে একজন সংগঠক ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে সমর দাস সেটাকে সফল করে তোলেন। ১৯৯৩ সালে ঢাকায় সাফ গেমসের সূচনা ও সমাপনী সঙ্গীত তিনি রচনা করেন। শিল্পকলা একাডেমীসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমর দাস যুক্ত ছিলেন।

সঙ্গীতে অবদানের জন্য সমর দাস ১৯৯৭ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০০১ সালে প্রখ্যাত এই সুরকারের মৃত্যু হয়।