শিরোনাম :
বিশ্বাসের তীর্থভূমি, পানজোড়ার সাধু আন্তনী
বাংলাদেশী খ্রিষ্টানদের জন্য গাজীপুরের পানজোড়া সাধু আন্তনীর তীর্থস্থান বিশ্বাসের তীর্থভূমিতে পরিণত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ এবং খ্রিষ্টবিশ্বাসী নয়, দেশের বাহির থেকে এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও বিশ্বাসের শ্রদ্ধা নিয়ে প্রতি বছর পানজোড়ার সাধু আন্তনীর কাছে হাজির হয় বিভিন্ন মানত নিয়ে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১ম শুক্রবার পানজোড়ায় সাধু আন্তনির তীর্থ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
প্রতি বছরের মতো এবারও ফেব্রুয়ারির প্রথম শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) পাদুয়ার সাধু আন্তনীর তীর্থের প্রস্তুতি চলছে। বিশ্বাসের এই তীর্থভূমিতে ডিসিনিউজের প্রতিবেদক সরজমিনে গিয়ে দেখে, তীর্থ উৎসবের জন্য চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। তার মথ্যে সবচেয়ে বড় প্রস্তুতি হলো নিজের মনকে তীর্থের জন্য প্রস্তুত করা।
সোমবার (২৮ জানুয়ারি) নাগরীর পানজোড়ার র্তীর্থ স্থানে গিয়ে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৬টায় নভেনার খ্রিষ্টযাগ এবং বিকালে পৌনে চারটায় নভেনার দ্বিতীয় খ্রিষ্টযাগ অনুষ্ঠিত হয়। নভেনা প্রার্থনা শুরু হয় ২৩ জানুয়ারি থেকে এবং চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
মহাপর্ব উপলক্ষে চলছে আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি। শুধু নভেনা নয়, এর পাশাপাশি চলছে পাপস্বীকার সংস্কার প্রদান। সারাদিন সাধু আন্তনীর চত্বরে একটি দল গাইছে সাধু আন্তনীর পালা গান। সকাল এবং বিকালে নভেনার খ্রিষ্টযাগে যোগদান করছে হাজার হাজার মানুষ। রাঙ্গামাটিয়া, তুমিলিয়া, ভাদুন, দড়িপাড়া, পাগাড় এবং ঢাকা থেকে যাতায়াত করে এই নভেনার খ্রিষ্টযাগে যোগদান করছে এসব আন্তনী ভক্ত।
রবিবার দিন অনেকে উপাসনায় যোগদান না করলেও মহান সাধুর এই পর্বের নভেনা প্রর্থানায় যোগ দিচ্ছে যুবক-যুবতি, নারী-পুরুষ সকলে। তবে নারীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো।
স্থানীয় নাগরী ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার জয়ন্ত এস. গমেজ ডিসিনিউজকে সাধু আন্তনীর তীর্থস্থান সম্পর্কে জানান, ‘সতেরো শতকের শেষ ভাগে নাগরীতে আগষ্টিয়ান যাজকগণ নাগরীতে ধর্মপ্রচার করতে আসেন। তখন ঘন জঙ্গলের মাঝে সন্ধ্যায় শিংঙার আওয়াজ পেতেন যাজকগণ। জঙ্গলের ভিতরে গিয়ে যাজকগণ দেখতে পান এক সাধু সন্ন্যাসী ধ্যান করছে। সেই সন্নাসী একটি বটবৃক্ষের খোড়লে মূর্তি দেখিয়ে বলেন, এর জন্য একটি গির্জা তৈরি করতে। তখন যাজকগণ সাধু আন্তনীর এই মূর্তি নাগরী গির্জায় নিয়ে রাখেন। কিন্তু রাতের বেলা আবার সেই বটবৃক্ষের খোড়লে এসে গেছে। এভাবে কয়েক বার গির্জা ঘরে রাখার পরেও এই সাধু আন্তনীর মূর্তি থাকেনি গির্জা ঘরে। এরপর যাজকগণ একটি গির্জা ঘর তৈরি করেন পানজোড়াতে। এর পর থেকে মানুষের বিশ^াস ও ভক্তির কারণে আশির দশকে এর প্রচার শুরু হতে থাকে।’
‘হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ খ্রিষ্টান যে কেউ এখানে মানত করেছে তাদের মানতের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে। অনেকের হারিয়ে যাওয়া জিনিস ফিরে পাওয়ার জন্য মানত করেছে, তা ফিরে পেয়েছে। এই সাধু আন্তনীর প্রতি ভক্তি ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের’ বলেন ফাদার জয়ন্ত।
মহান সাধু আন্তনীর পর্বকে কেন্দ্র করে বাহ্যিক প্রন্তুতিও কম নয়। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো চত্বর জুড়ে চলছে প্যান্ডেল সাজানোর কাজ। প্রধান প্রধান ফটক সাজিয়েছে বর্ণিল সাজে। শুধু বাংলাদেশ নয় বেশ কয়েকটি দেশ থেকে সাধু আন্তনীর কাছে মানত এবং প্রার্থনা করতে আসে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে।
আগামি ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টায় সাধু আন্তনীর তীর্থের প্রথম খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করবেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের সহকারী বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ এবং সকাল ১০টায় পর্বীয় মহা খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করবেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও সিএসসি ও ভাতিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী।
ডিসিনিউজ/আরবি.এইচআর. ২৯ জানুয়ারি ২০১৯