শিরোনাম :
বেড়ে চলেছে রোহিঙ্গা এতিম শিশুদের সংখ্যা
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তান্ডব ও নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করা বাবা মা হারিয়ে এতিম হওয়া শিশুর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সঙ্গে বাড়ছে এই অসহায় শিশুদের সীমাহীন দূর্ভোগ।
সেনাবাহিনীর তান্ডবে মা বাবা হারানো শিশুরা কোন পরিবারের সাথে যুক্ত হতে পারেনি বলে ক্যাম্পের তালিকায় তাদের নাম নেই। সে কারণে ত্রাণও পাচ্ছে না বলে আরো দূর্বিসহ উঠেছে এদের জীবন। একে তো মা বাবা হারানোর শোক, তার উপর থাকা, খাওয়া, চিকিৎসার অভাবে দিশেহারা হয়ে উঠছে এসব শিশুর জীবন। এ শিশুরা কোন না কোন প্রতিবেশীর সাথে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়, কক্সবাজার এর উপ-পরিচালক প্রীতম কুমার চৌধূরী জানান, ঠিকানাবিহীন এসব শিশুর তালিকা তৈরীর কাজ শুরু করেছেন তারা। এ পর্যন্ত প্রায় ৬,৭৬৬ জন এতিম শিশুর তালিকা করেছেন তাঁরা। এ সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়।
আট বছরের শিশু আসমা খাতুন প্রতিবেশী এক নানির সাথে পালিয়ে আসে। আসমার নানি বলেন, আসমা সারাক্ষণ মা বাবার জন্য কান্নাকাটি করে। এসব অসহায় শিশুদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রতিবেশী অনেকেই। কিন্তু তারা বলছেন, তাদের নিজেদেরই দূর্ভোগের শেষ নেই, কিন্তু মানবতার খাতিরে এতিম শিশুদের কিছুটা হলেও দেখভাল করছেন তারা। নিজেদের খাবার ভাগাভাগি করে শিশুদের দিচ্ছেন।
৭ বছরের আমেনা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘বাবা মার জন্য মন কাঁদে’। বাবা মা ছাড়া কিভাবে বাঁচবে, তা আমেনার বয়সী অনেক শিশুই জানেনা। শূণ্যে দৃষ্টি মেলে নির্বাক তাকিয়ে থাকে তারা। ত্রাণের গাড়ী এলে বা কাউকে ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখলে ধাক্কাধাক্কি করে এগিয়ে যায় একমুঠো খাবারের আসায়। কিন্তু দু’ বেলা পেটভরে খাবারের নিশ্চয়তা তাদের নেই, কারণ তারা যে কোন পরিবারের সদস্য নয়, ক্যাম্পের তালিকায় যে তাদের নাম ওঠেনি। তাই অনিশ্চয়তার অন্ধকার তাদের পিছু ছাড়ে না।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের সুরক্ষার জন্য একটি শিশু পল্লী তৈরী করা হবে।
ইতোমধ্যে কয়েকটি এনজিও এতিম শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন। একটি বেসরকারী সংস্থার কর্মী জানালেন, দিনে দিনে ্সব শিশুরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
এদিকে প্রতিদিনই গড়ে ১০-১২জন শিশু জন্ম নিচ্ছে অস্থায়ী ক্যাম্পে। প্রসূতি মায়েরা সঠিকভাবে চিকিৎসা, খাবার, বিশ্রাম না পাওয়া ও দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার ঝক্কি সামলাতে না পেরে মৃত্যুবরণ করছেন। ফলে এতিম শিশুর তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে।
আরবি/আরপি/ ৯ অক্টোবর, ২০১৭