শিরোনাম :
ভারতীয় ফাদার স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু দুঃখজনক : খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন
ডিসিনিউজ ॥ ঢাকা
ভারতের মানবাধিকারকর্মী ফাদার স্ট্যানিসলাস লোর্দুস্বামীর (৮৪) (যিনি ফাদার স্ট্যান স্বামী নামে বেশি পরিচিত) বিগত নয় মাস ধরে সন্ত্রাস দমন আইনে গ্রেফতার থাকাবস্থায় ৫ জুন মুম্বাইয়ের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যু খুবই দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।
এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও ও মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া ডিসিনিউজকে বলেন, ‘ফাদার স্ট্যান একজন ধর্ম যাজক এবং মানবাধিকার কর্মী। তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করছিলেন। তাঁর মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। তাঁর মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর আত্মার চির শান্তি কামনা করি।’
তাঁরা আরও বলেন, ‘আমরা খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের পক্ষে ফাদার স্ট্যানের মুক্তির জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ করে একটি চিঠি লিখেছিলাম। আশা করেছিলাম তিনি মুক্তি পাবেন কিন্তু তাঁকে জামিন না দেওয়াতে আশাহত হয়েছিলাম।’
তাঁরা মনে করেন, চুরাশি বছর বয়সী ফাদার স্ট্যানের সাথে সুবিচার করা হয়নি। ফাদার স্ট্যান অসুস্থ থাকাবস্থায়ও কেন জামিন পাননি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নেতৃবৃন্দ জুডিশিয়াল তদন্ত করার আহ্বান জানান।
এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও মহাসচিব উল্লেখ করেন যে আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকারগুলোকে সচেতন থাকা দরকার ভবিষ্যতে ফাদার স্ট্যানের মতো আর যেন কোনো মানবাধিকার কর্মীকে এভাবে প্রাণ হারাতে না হয়।
প্রসঙ্গত, দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় ছাড়াও অন্যান্য দেশে কোনো খ্রিষ্টান নির্যাতনের শিকার হলে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। তেমনি অন্যায়ভাবে পাকিস্তানের ব্লাসফেমি আইনে আটক থাকা আসিয়া বিবির মুক্তির জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর নিকট চিঠি লিখেছিল খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।
এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও ও মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া বিশ্বাস করেন ফাদার স্ট্যানের আদর্শ ধারণ করে দক্ষীণ এশিয়ায় আরও মানবাধিকার কর্মী গড়ে উঠবেন এবং মানবাধিকতারের জন্য কাজ করবেন।
গত বছর ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইনে’ ফাদার স্ট্যান স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ভীমা কোড়েগাঁওয়ে জাতপাতের ভিত্তিতে অশান্তি ছাড়ানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা-এনআইএ।
তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে পেশোয়াদের চূড়ান্ত পরাজয়ের স্মরণে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি পুনের কাছে ভীমা-কোড়েগাঁওয়ের বিজয় স্তম্ভে দলিতরা জড়ো হয়। ১৮১৮ সালে এই দিনেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পেশোয়া শক্তিকে পরাজিত করেছিল।
সেসময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সাহায্য করেছিল দলিত ‘মাহার’ জনগোষ্ঠী। এরপর থেকে ওই দিনটিকে তারা ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভীমা কোড়েগাঁওয়ে দলিতদের ‘এলগার পরিষদ’ এর ওই বিজয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ফাদার স্ট্যান স্বামী। পরদিন মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় দলিত-মারাঠা সংঘর্ষ দেখা যায়।
তদন্তে নেমে সমাজকর্মী গৌতম নওলখা, কমি ভারাভারা রাও, অরুণ ফেরেরা, রোনা উইলসন, ভারনন গঞ্জালভেস ও সুধা ভরদ্বাজসহ ১৫ জন অধিকারকর্মী, লেখক, অধ্যাপক, আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চক্রান্তে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাদেরকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
ওই মামলায় ২০২০ সালের অক্টোবরে রাঁচির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পাঠিয়ে দেওয়া হয় স্ট্যান স্বামীকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, এলগার পরিষদের সমাবেশে তার ‘উসকানিমূলক বক্তব্যের জেরেই’ সহিংসতায় একজনের মৃত্যু হয়।
ভারতে এখন পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, স্ট্যান স্বামী ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি।
ভারতে ফাদার স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুতে শোক ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।