শিরোনাম :
ভার্চুয়াল আলোচনা সভা রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসী দিবস পালনের আহ্বান
আদিবাসী জনগোষ্ঠী প্রকৃতিকে যেভাবে লালন করে তা মানবজাতির জন্য কল্যাণকর। তাদের সংস্কৃতি ও জীবনাচার দেশের সম্পদ। তাই আদিবাসীদের অধিকার রক্ষা ও সংরক্ষণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাই জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের উচিত আন্তর্জাতিক স্বীকৃত এই দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০২০ উপলক্ষে গতকাল রোববার এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। গতকাল সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে এ ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। কবিতা পাঠ, অন্যান্য অনুষ্ঠানসহ বিকেলে একটি অনলাইন জুম আলোচনার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাংসদ রাশেদ খান মেনন বলেন, বাঙালি হিসেবে নিজ জাতিসত্তার আত্মপ্রতিষ্ঠার মাদকতা দেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার উপস্থিতি সম্পর্কে আমাদের বিস্মৃত করেছে। পাকিস্তান আমলে বাঙালি হিসেবে অস্বীকার যেমন আমাদের মনে ক্ষোভ ও জ্বালা সৃষ্টি করত, আদিবাসী হিসেবে স্বীকার না করা আদিবাসীদের মনে ক্ষোভ ও জ্বালা সৃষ্টি করে রেখেছে। তাই আদিবাসী দিবসের রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় স্বীকৃতি প্রয়োজন।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা সভাপতির বক্তব্যে বলেন, দেশে আদিবাসী জনগণের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো নয়। বিভিন্ন অঞ্চলে আদিবাসীদের ভূমি বেদখল ও তাদের চিরায়ত ভূমি থেকে উচ্ছেদ, আদিবাসী নারীর ওপর নির্যাতন ও সহিংসতা বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো যথাযথভাবে আজও বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ দেশের স্বার্থে এ চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়া অতীব জরুরি। তিনি সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশনের জোর দাবি জানান।
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, আদিবাসীরা নানা সমস্যায় জর্জরিত। তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ মানুষ হিসেবে তাদের সে অধিকারগুলো দরকার।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, আদিবাসীদের ওপর কভিড-১৯-এর অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে। সেজন্য আদিবাসীদের কর্মের নিশ্চয়তা, খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্যের অধিকার রাষ্ট্রকে সুনিশ্চিত করতে হবে।
টিআইবির পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আদিবাসীরা নিজ দেশে পরবাসী। তাদের পাশে দাঁড়াবার কেউ নেই।
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আদিবাসীরা তো সারাটা জীবন রাষ্ট্রকে দিয়ে গেলেন। কিন্তু রাষ্ট্র সেভাবে আদিবাসীদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারেনি।
সঞ্জীব দ্রং শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, দেশের সব মানুষের মতো আদিবাসীরাও এ দেশের নাগরিক। একাত্তরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সবার জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার আমরা করেছিলাম। আশা করছি, এই করোনাকাল শেষে রাষ্ট্র ও সরকার নিজে জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসী দিবস উদযাপন করবে। আদিবাসীদের মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
এতে আরও অংশগ্রহণ করেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, আদিবাসী ফোরামের সদস্য মেইনথিন প্রমীলা, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী অভিলাষ ত্রিপুরা প্রমুখ।
এদিকে টাঙ্গাইল, পাবনার চাটমোহর, বগুড়ার শেরপুর, নওগাঁর ধামইরহাট, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, বরগুনার তালতলী, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, দিনাজপুরের পার্বতীপুরে আলোচনা সভা, পথসভা, র্যালি, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আদিবাসী দিবস পালন করা হয়। (সমকাল)