শিরোনাম :
মট্স-ঢাকা ক্রেডিটের মধ্যে সমঝোতার চুক্তি স্বাক্ষরিত
ডিসিনিউজ ॥ ঢাকা
দেশের শীর্ষস্থানীয় পলিটেকটিক ইনস্টিটিউট মিরপুর এগ্রিকালচারাল ওয়ার্কশপ এন্ড ট্রেনিং স্কুল (মট্স) এবং ঢাকা ক্রেডিটের মধ্যে সমঝোতার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
৯ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের মট্সের অফিসে ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা ও মট্সের পরিচালক দিলু পিরিছ সমঝোতার চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে পংকজ গিলবার্ট কস্তা ঢাকা ক্রেডিটের একটি প্রতিনিধি দল মট্সের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা বলেন, ‘আজ আমরা মট্সের অটোমোবাইল, ওয়েল্ডিং ল্যাবসহ বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেছি। এখানে প্রায় আট শত শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করছে। এখানে চার বছর ও তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা শিক্ষা এবং বিদেশে যাওয়ার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা ঢাকা ক্রেডিট মট্সের সঙ্গে সমঝোতার চুক্তি করেছি। আমাদের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের যে শিক্ষার্থীরা রয়েছেন, তাঁদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধার আলোচনা করেছি, তারা যেন কিছু ভর্তুকির মাধ্যমে পড়তে পারেন এবং যেসমস্ত বাবা-মা আর্থিকভাবে ততো স্বচ্ছল নয়, তাদের আমরা যেন ঋণ দিয়ে এই কারিগরি স্কুলে পড়াশোনার ব্যবস্থার বিষয়ে আলোচনা করেছি।’
তিনি উল্লেখ করেন, মট্স দীর্ঘদিন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যান্য দেশে অত্যন্ত সমাদৃত। ঢাকা ক্রেডিট মট্সের সাথে সমঝোতার চুক্তি করার মধ্য দিয়ে এক সাথে পথ চলতে চায়। দক্ষ মানব সম্পদ গড়ার জন্য তারা প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা করতে চান।
সমিতির প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিটের পিছিয়ে পড়া সদস্যদের আমরা অনুরোধ রাখি, তাঁরা এই মট্স থেকে যেন শিক্ষা গ্রহণ করেন, সেই ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা থাকবে। কারিগরি প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা যদি ব্যবসা বাণিজ্য করতে চান, সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করবো। এই দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং উন্নয়নের জন্য আমরা মট্স-ঢাকা ক্রেডিট যৌথভাবে কাজ করতে চাই। যার মধ্য দিয়ে তাঁরা দক্ষ হবে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।’
মট্সের পরিচালক দিলু পিরিছ ডিসিনিউিজকে বলেন, ‘মট্সের বিশেষত্ব হচ্ছে আমরা প্রশিক্ষণ প্রদান করি যাতে শিক্ষার্থীরা দক্ষ হতে পারেন, হাতে কলমে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁরা যেন মানুষ হতে পারেন, তার জন্য আলাদা মূল্যবোধের শিক্ষা সিলেবাসে সংযোজিত করা আছে। এর উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীরা যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারেন, সমাজে যেন সেবা করতে পারেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব পরিচালিত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সাথে আমরা সম্পৃক্ত আছি যে প্রশিক্ষণগুলো তিন মাস ও চার মাস মেয়াদি। এগুলো মূলত বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে যাঁরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, প্রশিক্ষণ শেষেই তাঁদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হচ্ছে। বিভিন্ন নিয়োগদাতা সংস্থার সাথে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে, প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা এসে চাকরির ইন্টারভিউ নেয় এবং প্রায় সকলেই চাকরি পেয়ে থাকেন। দক্ষ হয়ে প্রশিক্ষণার্থীরা নিজেদের কর্মসংস্থান করার মাধ্যমে পরিবার ও দেশের সম্পদ হয়ে উঠছেন।’
তিনি জানান, যাঁরা বেকার, দরিদ্র ও বিভিন্ন কারণে পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বা পড়াশোনা চালাতে পারেননি এবং অনেকে আছেন যাঁরা সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করে বছরের পর বছর বেকার হয়ে ঘুরছেন কিন্তু চাকরি পাচ্ছেন না, মট্স তাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছে। তারা মট্সে গেলে বা যোগাযোগ করলে যেসব প্রশিক্ষণ বিনা মূল্যে বা টাকার মাধ্যমে করানো হয়, প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের হাতকে দক্ষ করে গড়ে তুলা হয় এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়।
দিলু পিরিছ বলেন, ‘আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আর একজনও বেকার থাকবে না, নিজের ও পরিবারের জন্য সম্পদ হয়ে উঠবে।’
ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া মট্সের প্রশংসা করে বলেন, মট্স স্বাধীনতার পর থেকে দেশে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে যাচ্ছে। আজ মট্স-ঢাকা ক্রেডিট সমঝোতার চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। ঢাকা ক্রেডিটের ৪৩ হাজার সদস্যের মধ্যে একটি বড়ো অংশ কিশোর যুবক। সদস্যদের মধ্যে অনেকে নিম্ন ও মধ্য আয়ের। অনেকে ছেলে-মেয়ের আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় বা কম মেধা থাকায় সাধারণ উচ্চ শিক্ষা নিতে পারে না। তাঁদেরকে অনুরোধ করতে চাই, তাঁরা মটসে কারিগরি শিক্ষা নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
বিক্রমপুরের আঁখি আক্তার বেকার ছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল কোনো একটা কাজ শেখার। সেই সুযোগ তিনি পেলেন মট্সে। সেখানে তিনি বিনা মূল্যে তিন মাস মেয়াদী প্লাম্বিং-এর ওপর শর্ট কোর্স করছেন। সরকারের অর্থায়নে এই কোর্সটি সম্পন্ন করে তিনি আশা করছেন কোর্স শেষে তিনি দ্রুত স্বাবলম্বী হবেন। তাঁর মালয়েশিয়া বা উন্নত কোনো দেশে গিয়ে প্লাম্বিং-এর ওপর চাকরি করার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে। আঁখি আত্মবিশ^াসের সাথে ডিসিনিউজকে বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে প্লাম্বিং-এর অনেক কিছু শিখেছি। আশা করছি, প্রশিক্ষণ শেষে আমার আর বেকার থাকতে হবে না। নিজে স্বাবলম্বি হবো ও পরিবারকে সহযোগিতা করবো।’
সমঝোতার চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলবার্ট আশিস বিশ^াস, ডিরেক্টর পল্লব লিনুস ডি’রোজারিও, মনিকা গমেজ ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন টমাস রোজারিও, মট্সের ট্রেইনিং এন্ড এডুকেশন বিভাগের সিনিয়ার ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার এএইচএবি সিদ্দিক, ফাইন্যান্স এন্ড এডমিন বিভাগের ম্যানেজার উজ্জ্বল থিওটোনিয়াস কোড়াইয়া, প্রডাকশন এন্ড মার্কেটিং ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন রোনাল্ড প্রমানিক ও চিফ ইন্সট্রাক্টর মাহমুদুর রশিদ।
প্রসঙ্গত, ক্যাথলিক বিশপদের সামাজিক সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশের একটি ট্রাস্ট হচ্ছে মট্স যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে। শুরুতে তিন বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালিত হয়ে আসছিল এই পর্যন্ত। পরবর্তীতে প্রায় ৮০ ধরনের শর্ট কোর্স বা মডিউলের কোর্সের মাধ্যমে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ চলছে। সর্বশেষে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দ হতে পাঁচটি টেকনোলজির ওপরে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু হয়েছে যা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধিনে পরিচালিত হচ্ছে।