ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা Uncategorized মতামত প্রকাশের অধিকার সবার আছে, মিথ্যা তথ্য প্রকাশ অপরাধ : মতবিনিময় সভায়...

মতামত প্রকাশের অধিকার সবার আছে, মিথ্যা তথ্য প্রকাশ অপরাধ : মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টারা

0
500

‘যেকোনো বিষয়ে সকলের অধিকার থাকে, কিন্তু মিথ্যা প্রচার এবং কুৎসা রটানোর অধিকার কারো নেই,’ বলে মন্তব্য করেন ঢাকা ক্রেডিটের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যরা। ঢাকা ক্রেডিটের উপদেষ্টাদের সাথে সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির মতবিনিময় সভায় সমিতির উপদেষ্টারা এসব কথা বলেন।

ঢাকা ক্রেডিটের পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্য, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিউবার্ট গমেজ, নির্মল রোজারিও, উপদেষ্টা সাইমন গমেজ, হেলেন রোজারিওসহ শতাধিক উপদেষ্টা মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।

১৬ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টারা বলেন, ‘আমরা খুব কাছ থেকে ঢাকা ক্রেডিটের উন্নয়ন কার্যক্রম দেখছি। এই সময়কার উন্নয়ন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর ও যুগোপযোগী।’ মুক্ত আলোচনায় উপদেষ্টারা বর্তমান সময়ের ঢাকা ক্রেডিটের সার্বিক উন্নয়নকে হিমালয়ের মতো উচ্চস্থানে উপনীত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

‘ঢাকা ক্রেডিট নিয়ে বিপথগামী কিছু ব্যক্তি মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য প্রচার করেছে। আমরা বুঝতে পারি তারা ঈর্ষান্বিত হয়েই তা করেছে। সমিতির বর্তমান উন্নয়নের ধারাকে আমরা বিস্ময়ের দৃষ্টিতে দেখছি। এতসব মিথ্যা অপবাদ-অপমান বর্তমান বোর্ড কীভাবে ধৈর্য ধরে সহ্য করেছে! তাদের ধৈর্যের ফলে শেষে বিপথগামী সেই সব নিন্দুক ও প্ররোচনাকারীরা নিজেরাই নিজেদের ফাঁদে পড়েছে।’

এ সময় তারা বিপথগামীদের শাস্তির দাবি জানালে প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, ‘বিপথগামীদের যারা অন্যায় করেছে, তারাও আমাদেরই অংশ। তারা যদি ভুল বুঝে ক্ষমা চাইতে আসে, তাদের জন্য ঢাকা ক্রেডিটের দরজা খোলা রয়েছে।’

মতবিনিময়ের অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট গমেজ শুরুতে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘প্রথমেই সুখবর দিয়ে শুরু করতে চাই। আমাদের অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতালের কার্যক্রম ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মঠবাড়ীতে ঢাকা ক্রেডিটের নিজস্ব ২২ বিঘা জমিতে আমরা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করেছি। সেখানে প্রশাসনিক সাইড-অফিসের নির্মান কাজ শেষ করে হাসপাতালের সিইও অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জন গমেজের মাধ্যমে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই হাসপাতালের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসিএএলকে দায়িত্ব দেওয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন। এর আগে এই প্রতিষ্ঠানসহ আরো চারটি প্রতিষ্ঠানের সাথে আমরা আলোচনা করেছি, তাদের ডিজাইনসহ সার্বিক বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণও করেছি। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রমকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে একটি হাসপাতাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। মূলত তারাই এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। আপনারা সামাজিকমাধ্যম ফেইসবুকে দেখেছেন হাসপাতালের থ্রিডি ভিডিও সকলের উদ্দেশে প্রচার করা হয়েছে। চলমান বছরের ডিসেম্বর মাসে হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজ উদ্বোধন এবং ২০২১ সালে হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।’

এ সময় প্রেসিডেন্ট ঢাকা ক্রেডিট রিসোর্ট এন্ড ট্রেনিং সেন্টার, বান্দুরা বহুমুখী প্রকল্প, নদ্দা বহুমুখী প্রকল্প, মদনপুরবাসীদের আবাসন প্রকল্প, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, ঢাকা ক্রেডিট মোবাইল অ্যাপস্, ঢাকা ক্রেডিট কল সেন্টার ও কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন প্রকল্প ও কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয় সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থান করেন।

সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রেসিডেন্ট গমেজ বান্দুরা মাল্টিপারপাস ভবনের ফ্লোরগুলো আঠারোগ্রাম এলাকা থেকে যেসকল নিবেদিত প্রাণ ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অবদান রেখেছেন, তাদের নামে নামকরণ করার ঘোষণা দেন।

এ সময় তিনি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা জানেন ২০১৭ সালের নির্বাচনের পর একটি মহলের বিভিন্ন মামলার দ্বারা বর্তমান বোর্ড একটি প্রতিকূল আইনি জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো। এ পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা যা কিছু করতে পেরেছি, তা আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থনেই করতে পেরেছি। বিপথগামী সদস্যদের করা ছয়টি মামলার মধ্যে কয়েকজন প্রত্যাহারের আবেদন করেছে এবং ফেসবুকে কু-কর্মের জন্য কেউ কেউ এসে অনুতপ্ত হয়ে লিখিতভাবে ক্ষমাও চেয়েছে। আশা করি সকলেই এক সময় অনুতপ্ত মন নিয়ে ফিরে আসবে। ফেসবুকে দেশে-বিদেশ থেকে আমাদের সমিতি সমন্ধে মিথ্যা ও নেতিবাচক লেখালেখির চর্চা বন্ধ হয়েছে। এটি ভাল লক্ষণ। সমাজে যে সু-বাতাস বইতে শুরু করেছে, আশা করি তার প্রবাহ অব্যাহত থাকবে।’

এ সময় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যরা বলেন, বিপথগামীরা ফিরে এলেও এদের হালকাভাবে দেখার কিছু নেই। তারা বলেন, সাধারণভাবে ক্ষমা করে নয়, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তাদের মুচলেকা দিয়ে ফিরে আসতে হবে। কারণ, তারা যে জঘন্য অপরাধ করেছে, তা ক্ষমার যোগ্য নয়। এ সময় কোনো কোনো উপদেষ্টা বিপথগামীদের সতর্কতা ও বিচার-বিশ্লেষনের মাধ্যমে এবং শর্তসাপেক্ষে সমিতিতে গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করেন।

সবার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই সহনশীল ছিলাম, এখনও রয়েছি। তারা যদি আসে, অবশ্যই আমরা আপনাদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করবো।’

মতবিনিময় সভায় সমিতির চলমান দ্বন্দ্ব-অসন্তোষ ও ভুলবোঝাবুঝি নিরসনে শান্তি কমিটি গঠন নিয়ে যে ধোঁয়াশা ছিল, সেই বিষয় নিয়েও উপদেষ্টারা কথা বলেন।

উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল যোসেফ অনিল রোজারিও এ বিষয়ে বলেন, ‘আমেরিকা প্রবাসী সুবাস সেলেস্টিন রোজারিও সম্প্রতি বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন (সম্ভবত আগস্ট ২০১৮)। তিনি নিজেই উদ্যোগ নিয়ে একটি শান্তি কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তিনি নিজে আহবায়ক হয়ে কয়েকজনকে সদস্য করে এই প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হন। এর মধ্যে তার ছুটি শেষ হওয়াতে আমেরিকায় ফেরৎ যাবার পূর্বে কারিতাস বাংলাদেশ-এর প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক ড. বেনেডিক্ট আলো ডি’রোজারিওকে আহবায়কের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। ড. আলো তা গ্রহণও করেন।’

উল্লিখিত বিষয় সম্বন্ধে ঢাকা ক্রেডিট কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘ড. আলো নিজে ফোন দিয়ে বলেছিলেন, তিনি এসব শান্তি কমিটিতে নেই। কিন্তু এখন শুনতে হচ্ছে অন্য কথা, ড. আলো তো দেখা যাচ্ছে শান্তি কমিটি নামক দলের আহবায়ক।’

এ সময় উপস্থিত উপদেষ্টাগণ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বোর্ডের চলমান কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে ঢাকা ক্রেডিট কর্তৃপক্ষকে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন।

মতবিনিময়ে ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট সবসময় নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যায়। সমাজে বিপথগামী কিছু ব্যক্তি এই গতিবে ব্যাহত করবে, এটা হতেই পারে। তাদের বোঝানোর দায়িত্ব আমাদের। তারা ফিরে আসলে এবং অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলে অবশ্যই তা বিজ্ঞতার সাথেই বিবেচনা করা হবে। আমরা সমাজে মিলন ও শান্তি চাই।’

মামলা-মকোদ্দমা, সামাজিক বিষয় নিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে আক্রমন, সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি, সমাজে ও আত্মীয়তায় বিচ্ছেদ সৃষ্টির নানা পায়তারা প্রতিহত করার জন্য সকল উপদেষ্টা একমত প্রকাশ করে বলেন, এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন যেন ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি আর সৃষ্টি হতে না পারে।

সমিতির সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য পাস্টর অবিনাশ নকরেক-এর প্রারম্ভিক প্রার্থনা এবং উপদেষ্টা শান্তি কোড়াইয়া শেষ প্রার্থনা করেন।

পুরো মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা।

শেষে ধন্যবাদ ও সমাপনী বক্তব্য রাখেন ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ।