শিরোনাম :
জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢাকা ক্রেডিট ও বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ
যথাযোগ্য মর্যাদা ও বর্ণাঢ্য আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। (ছবি: সুমন সাংমা)
লাখো মানুষের ভালবাসা আর শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বীর সৈনিকেরা।
২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে লাখো মানুষ সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে জড়ো হয়ে তাঁদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
সকালে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুষ্পার্ঘ্য অপর্ণের পর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দল একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও শ্রেণি-পেশার মানুষ হাতে লাল-সবুজের পতাকা ও ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে স্মৃতিসৌধে জড়ো হয়। মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে স্মৃতিসৌধটি নতুন রূপে সাজানো হয়। নেপথ্যে দেশের গান বাজতে থাকে। একসময় জাতীয় স্মৃতিসৌধ জনসমূদ্রে পরিণত হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করছেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ
সকাল ৯টায় বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও ও মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়ার নেতৃত্বে যুগ্ম মহাসচিব জেমস সুব্রত হাজরা, দপ্তর সম্পাদক স্বপন রোজারিও, নির্বাহী সদস্য ভিক্টর রে, এন্ড্রু শিকদার প্রমুখ একাত্তরের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের পর পরই দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:-এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেস্টার গমেজ ও সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তার নেতৃত্বে বোর্ড ডিরেক্টর জন নীলু চাম্বুগং, পাপিয়া রিবেরু, ক্রেডিট কমিটির সদস্য প্রত্যেশ রাংসা এবং সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য ষ্টেলা হাজরা ও অবিনাস নকরেক প্রমুখ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
নেতৃবৃন্দ অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সোনার বাংলা ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একযোগে কাজ করে যাওয়ার পাশাপাশি ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানান।
একই দিন সারা দেশব্যাপী নানা আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হবার একটু আগে ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর (অর্থাৎ, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন যা চট্টগ্রামে অবস্থিত তৎকালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়। ঘোষণাটি এমন ছিল: ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানী সৈন্যদের উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।’সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢাকা ক্রেডিট নেতৃবৃন্দের শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন
২৬ মার্চ বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম সহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ.হান্নান প্রথম শেখ মুজিব-এর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেন। এর আগে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালায়। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণ করা হয়। অনেক স্থানে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং অনেক স্থানে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড চালানো হয়। এমতাবস্থায় বাঙালিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং অনেক স্থানেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা না করেই অনেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাবার পর আপামর বাঙালি জনতা পশ্চিম পাকিস্তানীর হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন করে বিশ্বে বাংলাদেশ নামে নবীন একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর দিনটি নানা আয়োজনে পালিত হয়ে আসছে।
এসএস/আরপি/২৭ মার্চ, ২০১৭