ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ মহামারী করোনার পর সমবায় খাতকেও প্রণোদনার আওতায় আনা জরুরী

মহামারী করোনার পর সমবায় খাতকেও প্রণোদনার আওতায় আনা জরুরী

0
1064

|| ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া ||

বর্তমানে সারাবিশ্ব নভেল করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) জন্য একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। করোনা ভাইরাস মানব মৃত্যুর পর সবচেয়ে বড় আঘাত হানতে যাচ্ছে অর্থনীতির উপর। সারাবিশ্বের বোদ্ধারা বিশ্ব অর্থনীতির উপর করোনার আঘাতকে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে করোনার আঘাত যে আরো কত ভয়ঙ্কর তা নিয়ে সরকারসহ সকলেই শঙ্কিত। করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে তা সহজেই অনুমেয়। সাধারণ মানুষ আর্থিক দৈনত্যতায় দিশা হারিয়ে ফেলবে বলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হলো প্রণোদনা প্রদান।
তিনি সম্প্রতি প্রেস ব্রিফিংয়ে ঘোষণা দিয়েছেন যে, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপের কারণে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তায় জড়িত মানুষকে ৯২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী আক্রান্তদের দিনরাত সেবাদান করছেন যে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী তাদের প্রতি বাড়িওয়ালাসহ যেকোনো মানুষকে সদয় আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং তাদের জন্য প্রনোদনাও ঘোষণা করেছেন। সরকার প্রধান তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হতদরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের সহায়তায় মমতার হাত প্রসারিত করেছেন। তিনি এও বলেছেন, প্রয়োজনে উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট থেকে হলেও বর্তমান জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে। তিনি আরো বলেছেন, সরকারের প্রদত্ত সাহায্য কোনো ব্যক্তি বা মহল অবৈধভাবে তসরুফ করলে তার দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তি, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অর্থ সাহায্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে করেছেন শক্তিশালী। সরকারের প্রণোদনা প্রদান বিভিন্ন সেক্টরে আশার সঞ্চার করেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা পুনর্গঠনের জন্য শক্তিশালী খাত হিসেবে সমবায়কে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই তিনি সমবায়কে সংবিধানে মালিকানার দ্বিতীয় খাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সাথে সাথে সমবায় এগিয়েও গেছে। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনাও এই খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে সমবায় আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। যে কারণে বর্তমানে সারাদেশে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধিত সমবায় সমিতি রয়েছে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৯ শত ৩০টি। বিভিন্ন ক্যাটাগরির সমবায়ে সদস্য সংখ্যা রয়েছে ১ কোটি ১২ লক্ষ ৪৩ হাজার ১শত জন। (তথ্য: সমবায় অধিদপ্তর) কিন্তু সমবায় সমিতির বিভিন্ন প্রডাক্ট ও প্রকল্পের মাধ্যমে সৃষ্ট উপকরণ ও সুবিধার সুফল লাভ করছে সারা দেশের মানুষ। দেশের আর্থিক উন্নতি ও অর্থনীতির বুনিয়াদ মজবুত করতে সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বেশি ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
দেশের বেশির ভাগ জনগোষ্ঠির মধ্যে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক শ্রেণির মানুষই সমবায় সমিতির সদস্য। সুতরাং সমবায় এমন একটি প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে সরকারের করোনাকালীন সংকটের কারণে প্রদেয় প্রণোদনা প্রান্তিক মানুষের কাছে স্বচ্ছ ও সহজে পৌঁছে যাবে। তাই সমবায় সেক্টরই হতে পারে সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
করোনার কারণে বিভিন্ন শিল্প, কারখানা ক্ষতির মুখে পরার পাশাপাশি সমবায়ও বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সরকার গামের্ন্টস ও রপ্তানী খাতের প্রণোদনা হিসেবে ৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণের রূপরেখা নির্ধারণ করেছেন। গার্মেন্টস সেক্টরে প্রায় ৫০ লাখ কর্মী রয়েছে। অপর দিকে সমবায়ের সাথে জড়িত রয়েছে কোটিরও বেশি মানুষ। সমবায়ী প্রতিষ্ঠান ও সদস্যরাও করোনার প্রভাবে দিশেহারা হয়ে পড়বে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে সমবায় প্লাটফর্মের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজের ব্যবস্থা করেছে, সমবায় সেক্টরকেও সেই প্যাকেজের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।
করোনা পরবর্তী সময়ে সরকার সমবায়ের কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ নজর দিলে প্রান্তিক ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি সত্যিকার উপকারভোগী হবে। ব্যাংক বা সরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩ থেকে ৫ শতাংশ সুদের মাধ্যমে অর্থ যোগান দেওয়া, সমবায় সমিতির আয়ের উপর সরকারের নির্ধারিত ১৫ শতাংশ ট্যাক্স রহিত করা এবং হত দরিদ্র সমবায়ীদের সরকারী খাদ্য কর্মসূচীর অন্তর্ভূক্ত করা। তবেই সত্যি হয়ে উঠবে ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ে উন্নয়ন’ শ্লোগান।

করোনার মহামারিতে প্রান্তিক সদস্যদের পাশে ঢাকা ক্রেডিট